নিজস্ব প্রতিবেদক : সীতাকু-ে বিএম ডিপো দুর্ঘটনার পর থেকে চার মাস ধরে শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো চারকোল পরিবহন এড়িয়ে চলছে। ফলে বিভিন্ন ডিপোতে আটকা পড়েছে অর্ধশতাধিকেরও বেশি চারকোল কনটেইনার। উদ্যোক্তারা বলছেন, আরও শতাধিক কনটেইনার পড়ে রয়েছে বিভিন্ন কারখানায়। এতে নষ্ট হচ্ছে অনেক পণ্য। আর এ খাতে লোকসান গিয়ে ঠেকেছে কোটি টাকায়। সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে চারকোল উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিসিএমইএ)।
চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা ২০১২ সাল থেকে পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় একশো কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। এ খাতে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার ৮০ শতাংশ নারী। সম্প্রতি সীতাকু-ের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর সব শিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ টিইউএস পণ্য বিভিন্ন ডিপোতে স্টাফিং করা ছিল, শিপিং লাইন থেকে সে পণ্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গোডাউনে গুদামজাত করার কথা বলা হয়। তিন মাস ধরে সে পণ্যগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুদামে রয়েছে। এছাড়া আমাদের ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রায় আরও ২০০ টিইউএস পণ্য রপ্তানির জন্য প্রস্তুত, যার অর্থমূল্য প্রায় ১৫ লাখ ডলার। জানতে চাইলে মির্জা জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের প্রধান কাঁচামাল পাটকাঠি। কৃষকরা নতুন সিজনের পাটকাঠি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু রপ্তানি না করতে পারায় ফ্যাক্টরিগুলো কাঁচামাল ক্রয় ও ফ্যাক্টরি চালু করছে না। যে কারণে পাটচাষি কৃষকও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় আমাদের খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বঞ্চিত হচ্ছে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। শিপমেন্ট সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। তাহলে সম্ভাবনাময় খাতটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
চারকোল মূলত অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য। এক দশক আগে চারকোল রপ্তানি শুরু করেন উদ্যোক্তারা। এখন চায়না, কম্বোডিয়াসহ ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। চারকোল মূলত পাটকাঠির গুঁড়ো। পাটকাঠিকে হালকা তাপ দিয়ে কয়লা করা হয়। সেই কাঠ-কয়লা বা চারকোলের কার্বন পাউডার দিয়ে প্রসাধনী সামগ্রী, ব্যাটারি, কার্বন পেপার, পানির ফিল্টারের উপাদান, ফটোকপি মেশিনের কালি প্রভৃতি তৈরি করা হয়। উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতি বছর চারকোল রপ্তানি করে আসছে শতকোটি টাকা।
গত ৪ জুন সীতাকু-ের বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় ৪৯ জনের। আহত হন দুই শতাধিক। এরপরই বাংলাদেশ থেকে বিপজ্জনক পণ্য (ডিজি) আমদানি-রপ্তানিতে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৬ জুন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সব শিপিং এজেন্টকে জরুরি চিঠি দিয়ে ডিজি কার্গো পরিবহনে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বলা হয়েছে। তবে তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ওই দুর্ঘটনার পর আতঙ্কে রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন করতে চাচ্ছে না শিপিং কোম্পানিগুলো। পণ্য পরিবহনে জাহাজে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আতঙ্ক কাজ করছে। যদিও বিপজ্জনক পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, ডিপো কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্টস, তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
চারকোল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যানেসিয়া ভেনঞ্চারসের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের একাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুকিঁতে পড়েবে।
চারকোলে রপ্তানি বন্ধে কোটি টাকা লোকসান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ