ঢাকা ০৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চাকরি না পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন নিজের সব সার্টিফিকেট

  • আপডেট সময় : ০১:৫৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

নীলফামারী প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজের অ্যাকাডেমিক সনদপত্র ছিঁড়ে ফেললেন বাদশা মিয়া নামের এক যুবক। বাদশা নীলফামারীর ডিমলা বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের মো. মহুবার রহমানের ছেলে। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, বাদশা পাঙ্গা চৌপতি আব্দুল মজিদ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ সালে দাখিল (বিজ্ঞান বিভাগ) জিপিএ ৩.৯২, ২০০৯ সালে সোনাখুলি মুন্সিপাড়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে পাস করেন। ২০১৪ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে (পদার্থ বিজ্ঞান) স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে অভাবের কারণে স্নাতকোত্তর করতে পারেননি।
ফেসবুক লাইভে এসে বাদশা বলেন, ‘কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ করে খাচ্ছে। আর আমি তিন তিনটি সনদ পেয়েও সরকারি, বেসরকারি চাকরি জোগাড় করতে পারিনি। সার্টিফিকেট মূলে আমার চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো দিয়ে কী করবো? তাই বাধ্য হয়ে ছিঁড়ে ফেললাম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় আমি। আট সদস্যের পরিবারে আমি একটা বোঝা।’
আরও বলেন, ‘আমার মা, বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বেকার হওয়ায় ভাই-বোনদের কোনও আবদার পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বৃদ্ধ বাবা-মার অথর্ব সন্তান হিসেবে কাউকে মুখ দেখাতে পারি না। অর্থের অভাবে ব্যবসা করারও সামর্থ্য নেই। তাই সার্টিফিকেট রেখে লাভ কী?’
লাইভটিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শাহিবুর ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ইচ্ছাশক্তি থাকলে বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানে ভালো কিছু করতে পারতেন। হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে সামনের দিকে এগিয়ে যান।’
মঞ্জুর-ই-এলাহী লিখেছেন, ‘বাদশা ভাই আপনি আমার একজন ভালো শুভাকাক্সক্ষী। নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হত একসময়। ভিডিওটা দেখে খুব খারাপ লাগছে ভাই। বিশ্বাস করতে পারছি না এমন ঘটনা ঘটাবেন।’
বাদশার বাবা মহুবার রহমান (৫৬) বলেন, ‘তার চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে মানসিক বিষাদে ভুগছে। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ সে সার্টিফিকেটগুলো ছিঁড়ে ফেলেছে।’
এই বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চাকরির বিষয়টি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাই তার চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবো না। তবে যুব উন্নয়নের আওতায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাকরি না পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন নিজের সব সার্টিফিকেট

আপডেট সময় : ০১:৫৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

নীলফামারী প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজের অ্যাকাডেমিক সনদপত্র ছিঁড়ে ফেললেন বাদশা মিয়া নামের এক যুবক। বাদশা নীলফামারীর ডিমলা বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের মো. মহুবার রহমানের ছেলে। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, বাদশা পাঙ্গা চৌপতি আব্দুল মজিদ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ সালে দাখিল (বিজ্ঞান বিভাগ) জিপিএ ৩.৯২, ২০০৯ সালে সোনাখুলি মুন্সিপাড়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে পাস করেন। ২০১৪ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে (পদার্থ বিজ্ঞান) স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে অভাবের কারণে স্নাতকোত্তর করতে পারেননি।
ফেসবুক লাইভে এসে বাদশা বলেন, ‘কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ করে খাচ্ছে। আর আমি তিন তিনটি সনদ পেয়েও সরকারি, বেসরকারি চাকরি জোগাড় করতে পারিনি। সার্টিফিকেট মূলে আমার চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো দিয়ে কী করবো? তাই বাধ্য হয়ে ছিঁড়ে ফেললাম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় আমি। আট সদস্যের পরিবারে আমি একটা বোঝা।’
আরও বলেন, ‘আমার মা, বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বেকার হওয়ায় ভাই-বোনদের কোনও আবদার পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বৃদ্ধ বাবা-মার অথর্ব সন্তান হিসেবে কাউকে মুখ দেখাতে পারি না। অর্থের অভাবে ব্যবসা করারও সামর্থ্য নেই। তাই সার্টিফিকেট রেখে লাভ কী?’
লাইভটিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শাহিবুর ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ইচ্ছাশক্তি থাকলে বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানে ভালো কিছু করতে পারতেন। হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে সামনের দিকে এগিয়ে যান।’
মঞ্জুর-ই-এলাহী লিখেছেন, ‘বাদশা ভাই আপনি আমার একজন ভালো শুভাকাক্সক্ষী। নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হত একসময়। ভিডিওটা দেখে খুব খারাপ লাগছে ভাই। বিশ্বাস করতে পারছি না এমন ঘটনা ঘটাবেন।’
বাদশার বাবা মহুবার রহমান (৫৬) বলেন, ‘তার চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে মানসিক বিষাদে ভুগছে। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ সে সার্টিফিকেটগুলো ছিঁড়ে ফেলেছে।’
এই বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চাকরির বিষয়টি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাই তার চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবো না। তবে যুব উন্নয়নের আওতায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন।’