ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

চাকরি ছেড়ে সবুজের ব্যবসায় সফল অরনী

  • আপডেট সময় : ১১:৩৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : চাকরিজীবী থেকে নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ইফতেসা অরনীর পাতাবাহার গাছ বিক্রির ফেসবুক পেজের নাম ‘অরনীর’। সম্প্রতি হেমন্তের এক বিকেলে অরনীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকার অদূরে আমিনবাজারে পাঁচ কাঠা জমির ওপর তৈরি তাঁর ছোট্ট নার্সারিতে। পারিবারিক এই জমিতে নেটের শেড দিয়ে ঘরের ভেতরের শোভা বাড়ায়, এমন গাছের অরণ্য তৈরি করেছেন অরনী। পাশে ছোট একটা টিনের ছাউনির নিচে রাখা একটি পিকআপ ভ্যান। বলতে গেলে এতটুকুই অরনীর ব্যবসার পুঁজি।
কাজের জায়গা কম হলেও কাজ কম নয়। যেদিন অরনীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সেদিন তাঁর চারজন কর্মী ব্যস্ত ছিলেন পরদিনের একটা বড় ক্রয়াদেশের পণ্য সরবরাহের প্রস্তুতিতে। খুচরা বিক্রি ছাড়াও অরনী কাজ করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে। তবে অরনীর ব্যবসা শুধু গাছ বিক্রি করা। অরনীর ভাষায়, তাঁর ব্যবসা গাছ বাঁচানোর।
সাধারণত অরনীর কাছে কেউ গাছ চায় না। আবার গাছ চাইলে যে অরনী বিক্রি করেন, এমনও না। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘আমার মূল ব্যবসা হচ্ছে কোথায় কোন গাছ রাখা যাবে বা বসানো দরকার, তা নির্ধারণ করা। ধরা যাক, কেউ অফিসের টেবিলের জন্য গাছের ক্রয়াদেশ দিলেন। অরনী জানতে চান, সেই অফিসে কতটা আলো আসে, রাতে কতক্ষণ বাতি জ্বলে, প্রাকৃতিক বাতাস চলাচল করে, নাকি এসি চলে অথবা ক্রেতার গাছে পানি দেওয়ার সময় আছে কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী গাছ বাছাই করে ক্রেতাকে পাঠান অরনী। সেখান থেকে ক্রেতা তাঁর পছন্দের গাছ বেছে নেন—এটাই আমার ব্যবসা।’
পরিবেশ বুঝে গাছের ধরন বাছাই করা হয় বলে অরনীর থেকে নেওয়া গাছ খুব সহজে মরে যায় না। এটাই তাঁকে বাজারের অন্য সব নার্সারি বা গাছ সরবরাহকারী থেকে আলাদা করেছে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘যখন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে আমরা যুক্ত হই, আমরা শুধু জেনে নিই কেমন পাতার কত উচ্চতার গাছ এই ডিজাইনের জন্য উপযুক্ত, এরপর সবকিছু আমি এবং আমার টিম তৈরি করি। এমনকি গাছের টব পর্যন্ত ইন্টেরিয়রের উপযোগী করে বানিয়ে নেওয়া হয়।’
অরনীর ব্যবসা শুরু করেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজিতে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘করোনার পরে যখন আবার চাকরি শুরু করলাম, তখন খুব অস্থিরতা কাজ করছিল নিজের ভেতর। আমার মনে হতো বাড়িতে বসে আমি গাছপালার মধ্যে আপন যে ভুবনে কাজ করতাম, সেই আনন্দটা কেউ কেড়ে নিয়েছে। তাই একদিন চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। বাড়ি ফিরলাম পাঁচ হাজার টাকার গৃহসজ্জার গাছ নিয়ে। তা দিয়েই শুরু হলো আমার ব্যবসা। ফেসবুকে পেজ খোলা হলো, ছবি তুলে দেওয়া শুরু করলাম। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এত বেশি ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করল যে পাশের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে হলো। তিন মাস পর দেখা গেল তাতেও হচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়েই আমিনবাজারের জমিতে আসতে বাধ্য হলাম।’
এখন পর্যন্ত অরনীতে অরনীর বিনিয়োগ ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কিছু টাকা গেছে জমি উন্নয়নে, একটা বড় খরচ হয়েছে পিকআপ ভ্যান কিনতে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘আমি আমার ১০ বছরের সঞ্চয় দিয়ে এই ব্যবসাটা শুরু করেছি, চাই ব্যবসাটাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই।’
অরনীর পরিকল্পনা গাছ এবং গাছের পরিচর্যা সরঞ্জামের সুপারশপ করার, যেখানে ক্রেতারা আসবেন, গাছ সম্পর্কে জানবেন, এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছ কিনবেন। আপাতত ব্যবসা যেভাবে বাড়ছে, তাতেই খুব খুশি তিনি। অরনী বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমার এক দিনের বিক্রি আমার আগের চাকরির পুরো মাসের বেতনের সমান হয়, সেদিনগুলোতে যে কী ভালো লাগে! আর ভালো লাগে যখন দেখি আমার রোপণ করা গাছগুলো অন্যদের বাসায় বড় হয়। ব্যবসা তো কত রকমেরই আছে। আমার ব্যবসা যদি পরিবেশের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটাই আমার বড় সাফল্য।’
অরনীর প্রতিটি গাছের দাম দুই শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। গাছের ধরন, আকার, জাত এবং গাছ রাখার পাত্রের ওপর এই দাম নির্ভর করে। এখন পর্যন্ত অরনী যত গাছ বিক্রি করেছে, তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নিজেদের নার্সারিতে জন্ম নেওয়া। তবে অন্যান্য জায়গা থেকেও এনে কিছু গাছ বিক্রি করেছে তারা। বর্তমানে অরনীর কাজ করছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কিটেকচুরা প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে। এ ছাড়াও ইন ডেপথ আর্কিটেক্ট নামে আরেক প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি প্রকল্পেও কাজ করেছে অরনী। বাস্তু নামে আরেক ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারির কাজ চলছে অরনীর।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চলে গেলেন আধুনিক ভাস্কর্য আন্দোলনের পথিকৃৎ হামিদুজ্জামান খান

চাকরি ছেড়ে সবুজের ব্যবসায় সফল অরনী

আপডেট সময় : ১১:৩৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১

নারী ও শিশু ডেস্ক : চাকরিজীবী থেকে নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ইফতেসা অরনীর পাতাবাহার গাছ বিক্রির ফেসবুক পেজের নাম ‘অরনীর’। সম্প্রতি হেমন্তের এক বিকেলে অরনীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকার অদূরে আমিনবাজারে পাঁচ কাঠা জমির ওপর তৈরি তাঁর ছোট্ট নার্সারিতে। পারিবারিক এই জমিতে নেটের শেড দিয়ে ঘরের ভেতরের শোভা বাড়ায়, এমন গাছের অরণ্য তৈরি করেছেন অরনী। পাশে ছোট একটা টিনের ছাউনির নিচে রাখা একটি পিকআপ ভ্যান। বলতে গেলে এতটুকুই অরনীর ব্যবসার পুঁজি।
কাজের জায়গা কম হলেও কাজ কম নয়। যেদিন অরনীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সেদিন তাঁর চারজন কর্মী ব্যস্ত ছিলেন পরদিনের একটা বড় ক্রয়াদেশের পণ্য সরবরাহের প্রস্তুতিতে। খুচরা বিক্রি ছাড়াও অরনী কাজ করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে। তবে অরনীর ব্যবসা শুধু গাছ বিক্রি করা। অরনীর ভাষায়, তাঁর ব্যবসা গাছ বাঁচানোর।
সাধারণত অরনীর কাছে কেউ গাছ চায় না। আবার গাছ চাইলে যে অরনী বিক্রি করেন, এমনও না। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘আমার মূল ব্যবসা হচ্ছে কোথায় কোন গাছ রাখা যাবে বা বসানো দরকার, তা নির্ধারণ করা। ধরা যাক, কেউ অফিসের টেবিলের জন্য গাছের ক্রয়াদেশ দিলেন। অরনী জানতে চান, সেই অফিসে কতটা আলো আসে, রাতে কতক্ষণ বাতি জ্বলে, প্রাকৃতিক বাতাস চলাচল করে, নাকি এসি চলে অথবা ক্রেতার গাছে পানি দেওয়ার সময় আছে কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী গাছ বাছাই করে ক্রেতাকে পাঠান অরনী। সেখান থেকে ক্রেতা তাঁর পছন্দের গাছ বেছে নেন—এটাই আমার ব্যবসা।’
পরিবেশ বুঝে গাছের ধরন বাছাই করা হয় বলে অরনীর থেকে নেওয়া গাছ খুব সহজে মরে যায় না। এটাই তাঁকে বাজারের অন্য সব নার্সারি বা গাছ সরবরাহকারী থেকে আলাদা করেছে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘যখন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে আমরা যুক্ত হই, আমরা শুধু জেনে নিই কেমন পাতার কত উচ্চতার গাছ এই ডিজাইনের জন্য উপযুক্ত, এরপর সবকিছু আমি এবং আমার টিম তৈরি করি। এমনকি গাছের টব পর্যন্ত ইন্টেরিয়রের উপযোগী করে বানিয়ে নেওয়া হয়।’
অরনীর ব্যবসা শুরু করেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজিতে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘করোনার পরে যখন আবার চাকরি শুরু করলাম, তখন খুব অস্থিরতা কাজ করছিল নিজের ভেতর। আমার মনে হতো বাড়িতে বসে আমি গাছপালার মধ্যে আপন যে ভুবনে কাজ করতাম, সেই আনন্দটা কেউ কেড়ে নিয়েছে। তাই একদিন চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। বাড়ি ফিরলাম পাঁচ হাজার টাকার গৃহসজ্জার গাছ নিয়ে। তা দিয়েই শুরু হলো আমার ব্যবসা। ফেসবুকে পেজ খোলা হলো, ছবি তুলে দেওয়া শুরু করলাম। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এত বেশি ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করল যে পাশের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে হলো। তিন মাস পর দেখা গেল তাতেও হচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়েই আমিনবাজারের জমিতে আসতে বাধ্য হলাম।’
এখন পর্যন্ত অরনীতে অরনীর বিনিয়োগ ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কিছু টাকা গেছে জমি উন্নয়নে, একটা বড় খরচ হয়েছে পিকআপ ভ্যান কিনতে। ইফতেসা অরনী বলেন, ‘আমি আমার ১০ বছরের সঞ্চয় দিয়ে এই ব্যবসাটা শুরু করেছি, চাই ব্যবসাটাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই।’
অরনীর পরিকল্পনা গাছ এবং গাছের পরিচর্যা সরঞ্জামের সুপারশপ করার, যেখানে ক্রেতারা আসবেন, গাছ সম্পর্কে জানবেন, এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছ কিনবেন। আপাতত ব্যবসা যেভাবে বাড়ছে, তাতেই খুব খুশি তিনি। অরনী বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমার এক দিনের বিক্রি আমার আগের চাকরির পুরো মাসের বেতনের সমান হয়, সেদিনগুলোতে যে কী ভালো লাগে! আর ভালো লাগে যখন দেখি আমার রোপণ করা গাছগুলো অন্যদের বাসায় বড় হয়। ব্যবসা তো কত রকমেরই আছে। আমার ব্যবসা যদি পরিবেশের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটাই আমার বড় সাফল্য।’
অরনীর প্রতিটি গাছের দাম দুই শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। গাছের ধরন, আকার, জাত এবং গাছ রাখার পাত্রের ওপর এই দাম নির্ভর করে। এখন পর্যন্ত অরনী যত গাছ বিক্রি করেছে, তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নিজেদের নার্সারিতে জন্ম নেওয়া। তবে অন্যান্য জায়গা থেকেও এনে কিছু গাছ বিক্রি করেছে তারা। বর্তমানে অরনীর কাজ করছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কিটেকচুরা প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে। এ ছাড়াও ইন ডেপথ আর্কিটেক্ট নামে আরেক প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি প্রকল্পেও কাজ করেছে অরনী। বাস্তু নামে আরেক ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারির কাজ চলছে অরনীর।-