ঝিনাইদহ সংবাদদাতা: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যোগীহুদা গ্রামের দাওরায়ে হাদিস পড়ুয়া আবদুল্লাহ (২৫) চাকরির পেছনে না ছুটে হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। প্রযুক্তি ও নিজের মেধার সংমিশ্রণে গড়ে তুলেছেন আনার বাগান। গাছ লাগানোর দুই বছর পরে এসেছে ফলন। গাছে গাছে ঝুলছে লাল টকটকে আনার। দু’হাত ভরে সফলতা পেয়েছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
সরেজমিনে জানা যায়, মহেশপুরের কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে যোগীহুদা গ্রামে ১ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে আবদুল্লাহর আনার বাগান। বাগানে আছে ৯১টি গাছ। প্রতিটি গাছে ধরেছে লাল টুকটুকে আনার। একেকটি গাছে গড়ে ৫০-৬৫টি ফল এসেছে। কোনো কোনো গাছে এসেছে নতুন কুঁড়ি।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ জানান, ইউটিউবে আনার চাষের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে চুয়াডাঙ্গার আনার চাষি মোকাররমের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেন। বাড়ির পাশে নিজের ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। ২০২২ সালের শেষদিকে ৯১টি চারা রোপণের মধ্য দিয়ে বাগানটি গড়ে তোলেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। বাজারে বিক্রি করেও ভালো আয় করছেন।
আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাকরি করাই কেবল লেখাপড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। আমি লেখাপড়া করছি নিজের জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে। মনে করি, চাকরির পেছনে বছরের পর বছর না ছুটে নিজের মতো করে কিছু করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আনার চাষ শুরু করেছি। আনার ছাড়া অন্যান্য আবাদও আছে।’
অন্য ফল রেখে কেন আনার চাষে ঝুঁকলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আনার অনেক দামি ফল। বিদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার আনার আমদানি করা হয়। আমরা যদি দেশেই আনার চাষ বাড়াতে পারি, তাহলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।’
আবদুল্লাহর বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। উদ্যোক্তারাও আসেন নিয়মিত। নিচ্ছেন নানান রকম পরামর্শ। দেশের মাটিতে আনার চাষ ও ফলন দেখে খুশি দর্শনার্থীরাও।
যশোরের গদখালী এলাকার নাজমুল হাসান বলেন, ‘ফেসবুকে ভিডিও দেখে আবদুল্লাহর আনার বাগান দেখতে এসেছি। বাগানে ফলের বাহার দেখে আমি অবাক। সমতলে এরকম আনারের ফলন নতুন আশা জাগাচ্ছে। আমারও আনার বাগান করার ইচ্ছা আছে।’
কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ জানান, ভারতীয় ভাগওয়া জাতের আনার চাষ করেছেন তিনি। পরিচর্যা করেন নিজেই। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে কীটনাশকের পাশাপাশি আলোর ফাঁদ ও জলের ফাঁদ ব্যবহার করেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে এ আনারের চাহিদা ব্যাপক। প্রতি কেজি আনার বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘আবদুল্লাহ পরিশ্রমী তরুণ। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পেয়ারা ও মাল্টার চাষ করেছেন। তবে আনারের বাগান করে সাড়া ফেলেছেন। আমি তার বাগান পরিদর্শন করেছি। আনারের স্বাদ, গন্ধ ও মান খুবই ভালো। তার আনার চাষ দেখে অন্যরা উৎসাহী হবে। আমরা তাকে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
এসি/আপ্র/১৩/০৯/২০২৫