ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

চাকরিদাতা সেজে ৮০০ জনকে ঠকিয়েছেন মায়া

  • আপডেট সময় : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : এক-দুজন নয়; আটশ চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন তার কাছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রতারিত কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে সামসুন্নাহার মায়া নামের কথিত এই চাকরিদাতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
ঢাকার উত্তরখানে মা মনোয়ারা সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় তার কথিত কোম্পানি সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবনবৃত্তান্ত ফরম, মানি রিসিট বই, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, দুটি সিল, ১৫টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিস্টার, মোবাইল ফোনসেট, ভিজিটিং কার্ড, নগদ ২০ হাজার ৪০০ টাকাসহ অনলাইনে দেওয়া বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট।
গত বুধবার সামসুন্নাহার মায়া ও তার চক্রের আরও ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে জানান র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় আটশ চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস মায়া বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। চক্রের মূল হোতা সামসুন্নাহার মায়ার সঙ্গে আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন জুয়েল ভূইয়া, মো. কামরুজ্জামান, ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার, মেহেদী হাসান, আল মামুন মাসুদ ও তাজবির হাসান লোহান।
প্রতারিতরা যা বলছেন : এসএসসি পাসের পর চাকরি খোঁজা তরুণ সাদ্দাম হোসেন অনলাইনে মায়ার কথিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে সিভি পাঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করে তাকে বলা হয়, তিনি প্রাথমিকভাবে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য তাকে ভাইভাতে আসতে বলা হয়। তাদের কথা অনুযায়ী, এই তরুণ উত্তরখানে সেই অফিসে গেলে তার কাছ থেকে আবেদন করা বাবদ চারশ টাকা দিতে বলা হয়। এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন বুঝে অভিযোগ দেন র‌্যাবের কাছে।
অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে গাইবান্ধা থেকে রানা বাবু নামে এক যুবক ঢাকায় আসেন। সরাসরি তিনি অফিসে এসে সিভি জমা দেন। পরবর্তী সময়ে তার চাকরি কনফার্ম করা হয়েছে জানিয়ে চার হাজার টাকা নেওয়া হয়। যা তিনি ধার দেনা করে সংগ্রহ করে দেন। রানাকে জানানো হয়, তাকে অফিসে কল সেন্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বেতন সাত হাজার টাকা। এভাবে সাত দিন কলসেন্টারে বসিয়ে তাকে (রানা) বলা হয়, মাসে চাকরিপ্রত্যাশী ১৪ জনকে জোগাড় করতে হবে। জনপ্রতি এগারোশ টাকা দেওয়া হবে। তাছাড়া তাকে কোনো বেতন দেওয়া হবে না। কিন্তু তাদের শর্তানুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশী জোগাড়ে ব্যর্থ হন। এই তরুণের মতো প্রতারিত আরও অনেকের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে র‌্যাব। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বুস্ট করা হতো। আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছিল। এমন ঘটনায় অনেকে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়।
অভিযোগ পেয়ে ছায়াতদন্তের পর র‌্যাব-১ রাজধানীর উত্তরখানে সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালিয়ে সামসুজ্জাহার মায়া ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মায়া জানান, তিনি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে তাদের একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এভাবে বেকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
যেভাবে প্রতারণা করা হতো : প্রথমে বিজ্ঞাপন। তা দেখে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন। প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। আবেদনের নামে প্রথমে চার থেকে পাঁচশ টাকা নেওয়া হয়। ভাইভার পর নিয়োগপত্র দেখিয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা জামানত আদায় করা হতো। পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে জানানো হতো। পরে সিনথিয়া সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো, প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেওয়া হবে। ভুক্তভোগীরা কোম্পানির প্রতারণার বিষয় বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করা হতো। গেল ছয় মাসে এভাবে প্রায় ৮০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এই সময়ে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
কে এই মায়া? অষ্টম শ্রেণি পাস সামসুন্নাহার মায়ার বাড়ি নওগাঁ। ২০২০ সালে রাজধানীতে এসে দক্ষিণখানের একটি সিকিউরিটি সার্ভিসে মার্কেটিং অফিসার পদে চাকরি শুরু করেন। পরে নিজেই সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি চাকরিপ্রত্যাশী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রতারণা করছিল। মায়ার ‘কোম্পানি আইন’ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।
যা বললেন র‌্যাব-১ অধিনায়ক : যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কী হবে এবং আগেও তারা এমন কোনো প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারাই এই মামলার বাদী হবেন। তারা আগে কোনো প্রতারণা করেছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি ভুয়া সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন।’
এমন অনেকগুলোর সংস্থা আছে যাদের প্রতারণা খবর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আমরা আগেও পেয়েছি এবং অল্প শিক্ষিত লোকদেরকে টার্গেট করে এসব প্রতারণা করে আসছে। এসব চাকরি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনারা কী বলবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘এর আগেও আমরা এধরনের প্রতারক চক্র গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে, তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় এ ধরনের কোম্পানি চালু করছে। সেখানে অন্য নাম কিংবা অন্য ঠিকানায় তা চালু করছে। এক্ষেত্রে বলতে চাই কোন ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হবেন না। চাকরি নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে নেবেন।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাকরিদাতা সেজে ৮০০ জনকে ঠকিয়েছেন মায়া

আপডেট সময় : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মহানগর প্রতিবেদন : এক-দুজন নয়; আটশ চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন তার কাছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রতারিত কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে সামসুন্নাহার মায়া নামের কথিত এই চাকরিদাতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
ঢাকার উত্তরখানে মা মনোয়ারা সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় তার কথিত কোম্পানি সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবনবৃত্তান্ত ফরম, মানি রিসিট বই, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, দুটি সিল, ১৫টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিস্টার, মোবাইল ফোনসেট, ভিজিটিং কার্ড, নগদ ২০ হাজার ৪০০ টাকাসহ অনলাইনে দেওয়া বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট।
গত বুধবার সামসুন্নাহার মায়া ও তার চক্রের আরও ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে জানান র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় আটশ চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস মায়া বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। চক্রের মূল হোতা সামসুন্নাহার মায়ার সঙ্গে আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন জুয়েল ভূইয়া, মো. কামরুজ্জামান, ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার, মেহেদী হাসান, আল মামুন মাসুদ ও তাজবির হাসান লোহান।
প্রতারিতরা যা বলছেন : এসএসসি পাসের পর চাকরি খোঁজা তরুণ সাদ্দাম হোসেন অনলাইনে মায়ার কথিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে সিভি পাঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করে তাকে বলা হয়, তিনি প্রাথমিকভাবে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য তাকে ভাইভাতে আসতে বলা হয়। তাদের কথা অনুযায়ী, এই তরুণ উত্তরখানে সেই অফিসে গেলে তার কাছ থেকে আবেদন করা বাবদ চারশ টাকা দিতে বলা হয়। এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন বুঝে অভিযোগ দেন র‌্যাবের কাছে।
অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে গাইবান্ধা থেকে রানা বাবু নামে এক যুবক ঢাকায় আসেন। সরাসরি তিনি অফিসে এসে সিভি জমা দেন। পরবর্তী সময়ে তার চাকরি কনফার্ম করা হয়েছে জানিয়ে চার হাজার টাকা নেওয়া হয়। যা তিনি ধার দেনা করে সংগ্রহ করে দেন। রানাকে জানানো হয়, তাকে অফিসে কল সেন্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বেতন সাত হাজার টাকা। এভাবে সাত দিন কলসেন্টারে বসিয়ে তাকে (রানা) বলা হয়, মাসে চাকরিপ্রত্যাশী ১৪ জনকে জোগাড় করতে হবে। জনপ্রতি এগারোশ টাকা দেওয়া হবে। তাছাড়া তাকে কোনো বেতন দেওয়া হবে না। কিন্তু তাদের শর্তানুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশী জোগাড়ে ব্যর্থ হন। এই তরুণের মতো প্রতারিত আরও অনেকের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে র‌্যাব। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বুস্ট করা হতো। আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছিল। এমন ঘটনায় অনেকে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়।
অভিযোগ পেয়ে ছায়াতদন্তের পর র‌্যাব-১ রাজধানীর উত্তরখানে সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালিয়ে সামসুজ্জাহার মায়া ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মায়া জানান, তিনি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে তাদের একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এভাবে বেকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
যেভাবে প্রতারণা করা হতো : প্রথমে বিজ্ঞাপন। তা দেখে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন। প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। আবেদনের নামে প্রথমে চার থেকে পাঁচশ টাকা নেওয়া হয়। ভাইভার পর নিয়োগপত্র দেখিয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা জামানত আদায় করা হতো। পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে জানানো হতো। পরে সিনথিয়া সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো, প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেওয়া হবে। ভুক্তভোগীরা কোম্পানির প্রতারণার বিষয় বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করা হতো। গেল ছয় মাসে এভাবে প্রায় ৮০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এই সময়ে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
কে এই মায়া? অষ্টম শ্রেণি পাস সামসুন্নাহার মায়ার বাড়ি নওগাঁ। ২০২০ সালে রাজধানীতে এসে দক্ষিণখানের একটি সিকিউরিটি সার্ভিসে মার্কেটিং অফিসার পদে চাকরি শুরু করেন। পরে নিজেই সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি চাকরিপ্রত্যাশী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রতারণা করছিল। মায়ার ‘কোম্পানি আইন’ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।
যা বললেন র‌্যাব-১ অধিনায়ক : যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কী হবে এবং আগেও তারা এমন কোনো প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারাই এই মামলার বাদী হবেন। তারা আগে কোনো প্রতারণা করেছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি ভুয়া সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন।’
এমন অনেকগুলোর সংস্থা আছে যাদের প্রতারণা খবর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আমরা আগেও পেয়েছি এবং অল্প শিক্ষিত লোকদেরকে টার্গেট করে এসব প্রতারণা করে আসছে। এসব চাকরি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনারা কী বলবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘এর আগেও আমরা এধরনের প্রতারক চক্র গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে, তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় এ ধরনের কোম্পানি চালু করছে। সেখানে অন্য নাম কিংবা অন্য ঠিকানায় তা চালু করছে। এক্ষেত্রে বলতে চাই কোন ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হবেন না। চাকরি নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে নেবেন।’