ঢাকা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

চাঁদের ধূলার চেয়েও অনেক বিষাক্ত শহরের বায়ু: গবেষণা

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: চাঁদের ধুলা বিষাক্ত। তবে তা শহরের বায়ুর চেয়ে কমই বিষাক্ত বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন করে আবার চাঁদে যাওয়ার জন্য আর্টেমিস মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, যেখানে নভোচারীদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় হচ্ছে চাঁদের ধুলাবালি। চাঁদের পৃষ্ঠে থাকা খুবই সূক্ষ্ম ও ধারালো ধুলাবালিকে ‘রেগোলিথ’ বলা হয়, যা অনেক দিন ধরেই চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানীদের। কারণ, অ্যাপোলো মিশন থেকে ফিরে এসে নভোচারীরা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা অনুভব করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র এক নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ ও স্বস্তির খবর মিলেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, আগে যতটা ভয় ছিল তার চেয়ে চাঁদের ধুলা মানুষের ফুসফুসের কোষের জন্য অনেক কম ক্ষতিকর। এমনকি পৃথিবীর সাধারণ বায়ুদূষণের তুলনায় অনেক কম বিষাক্ত চাঁদের ধুলাবালি।

‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র পিএইচডি গবেষক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক মাইকেলা বি. স্মিথের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে, চাঁদের ধুলাবালি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে।

পরীক্ষাগারে মানুষের ফুসফুসের কোষের ওপর চাঁদের ধুলার মতো তৈরি করা কৃত্রিম ধুলার প্রভাব পরীক্ষা করেছেন স্মিথ। এরপর তিনি এর প্রভাবের তুলনা করেছেন সিডনির এক ব্যস্ত রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা বায়ুর কণার সঙ্গে।
গবেষকরা বলছেন, এতে বিস্ময়কর ফলাফল উঠে এসেছে। চাঁদের ধুলা শরীরের জন্য কিছুটা ঝামেলা তৈরি করতে পারে। তবে তা শহরের বায়ুদূষণের মতো মানব দেহকোষে তীব্র ক্ষতি বা প্রদাহ তৈরি করেনি।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পার্থক্যের ওপর জোর দিয়ে স্মিথ বলেছেন, শরীরে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া তৈরি করা আর বিষাক্ত কোনো পদার্থের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

গবেষণাটিতে বায়ুর সবচেয়ে ছোট বিভিন্ন কণার ওপর নজর দিয়েছেন গবেষকরা, যেগুলোর আকার ২.৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়েও কম। এসব ছোট কণা মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেরিয়ে ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফুসফুসের দুটো ভিন্ন ধরনের কোষ ব্যবহার করে গবেষণা দলটি বলছে, পৃথিবীর ধুলাবালি মানবদেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে বেশি প্রদাহ তৈরি করে, যেটি চাঁদের ধুলার চেয়েও বেশি বিষাক্ত। অ্যাপোলো মিশনের সময় যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল তারও সমাধান করেছে এই নতুন গবেষণা। আগে অ্যাপোলো মিশনে নভোচারীরা চাঁদের ধুলার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট পেয়েছিলেন, হাঁচি ও চোখে সমস্যা হয়েছিল তাদের। ফলে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, চাঁদের ধুলা খুব ক্ষতিকর।

তবে এ নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, চাঁদের ধুলাবালি নিয়ে আগের মতো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এটা পৃথিবীর সাধারণ ধুলার চেয়ে কম ক্ষতিকর। মূল পার্থক্য হচ্ছে, ধুলাবালি কীভাবে মানবদেহের বিভিন্ন কোষের ওপর প্রভাব ফেলে সেটি। চাঁদের ধুলার ক্ষতি মূলত এর অদ্ভুত আকার ও ধারালো কিনারের থেকে ঘটে, যা দেহের কোষের ক্ষতি করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক ক্ষতিকর ধুলাবালি কোষের এমন ক্ষতি করে, যাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলা হয়। এমনটি বায়ুর অস্থিতিশীল অণুর কারণে ঘটে। তবে চাঁদের ধুলাবালি মানবদেহের তেমন ক্ষতি করে না।

স্মিথ বলেছেন, যে কোনো ধুলা শ্বাসের সঙ্গে গেলে আপনি হাঁচি, কাশি ও আরো অনেক অস্বস্তি অনুভব করবেন। তবে চাঁদের ধুলাবালি রাসায়নিক যৌগ সিলিকার মতো বিষাক্ত নয়। ১০ বছর ধরে কোনো নির্মাণ সাইটে কাজ করলে সিলিকার কারণে ‘সিলিকোসিস’ নামে ফুসফুসের মারাত্মক রোগ হতে পারে।
গবেষণায় ভালো খবর উঠে এলেও চাঁদের ধুলার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সতর্কভাবে কাজ করছে নাসা। এজন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে তারা। সংস্থাটি এমন এক ধরনের স্পেসসুট তৈরি করেছে, যা রোভারের বাইরে লাগানো থাকবে। মহাকাশচারী রোভারের ভেতর থেকে ওই স্যুটে উঠবেন ও নামবেন। আর এ স্যুট কখনও রোভারের ভেতরে প্রবেশ করবে না। ফলে ধুলাময় স্যুট রোভারের ভেতরের ক্ষতি করতে পারবে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাঁদের ধূলার চেয়েও অনেক বিষাক্ত শহরের বায়ু: গবেষণা

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: চাঁদের ধুলা বিষাক্ত। তবে তা শহরের বায়ুর চেয়ে কমই বিষাক্ত বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন করে আবার চাঁদে যাওয়ার জন্য আর্টেমিস মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, যেখানে নভোচারীদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় হচ্ছে চাঁদের ধুলাবালি। চাঁদের পৃষ্ঠে থাকা খুবই সূক্ষ্ম ও ধারালো ধুলাবালিকে ‘রেগোলিথ’ বলা হয়, যা অনেক দিন ধরেই চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানীদের। কারণ, অ্যাপোলো মিশন থেকে ফিরে এসে নভোচারীরা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা অনুভব করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র এক নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ ও স্বস্তির খবর মিলেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, আগে যতটা ভয় ছিল তার চেয়ে চাঁদের ধুলা মানুষের ফুসফুসের কোষের জন্য অনেক কম ক্ষতিকর। এমনকি পৃথিবীর সাধারণ বায়ুদূষণের তুলনায় অনেক কম বিষাক্ত চাঁদের ধুলাবালি।

‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র পিএইচডি গবেষক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক মাইকেলা বি. স্মিথের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে, চাঁদের ধুলাবালি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে।

পরীক্ষাগারে মানুষের ফুসফুসের কোষের ওপর চাঁদের ধুলার মতো তৈরি করা কৃত্রিম ধুলার প্রভাব পরীক্ষা করেছেন স্মিথ। এরপর তিনি এর প্রভাবের তুলনা করেছেন সিডনির এক ব্যস্ত রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা বায়ুর কণার সঙ্গে।
গবেষকরা বলছেন, এতে বিস্ময়কর ফলাফল উঠে এসেছে। চাঁদের ধুলা শরীরের জন্য কিছুটা ঝামেলা তৈরি করতে পারে। তবে তা শহরের বায়ুদূষণের মতো মানব দেহকোষে তীব্র ক্ষতি বা প্রদাহ তৈরি করেনি।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পার্থক্যের ওপর জোর দিয়ে স্মিথ বলেছেন, শরীরে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া তৈরি করা আর বিষাক্ত কোনো পদার্থের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

গবেষণাটিতে বায়ুর সবচেয়ে ছোট বিভিন্ন কণার ওপর নজর দিয়েছেন গবেষকরা, যেগুলোর আকার ২.৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়েও কম। এসব ছোট কণা মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেরিয়ে ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফুসফুসের দুটো ভিন্ন ধরনের কোষ ব্যবহার করে গবেষণা দলটি বলছে, পৃথিবীর ধুলাবালি মানবদেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে বেশি প্রদাহ তৈরি করে, যেটি চাঁদের ধুলার চেয়েও বেশি বিষাক্ত। অ্যাপোলো মিশনের সময় যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল তারও সমাধান করেছে এই নতুন গবেষণা। আগে অ্যাপোলো মিশনে নভোচারীরা চাঁদের ধুলার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট পেয়েছিলেন, হাঁচি ও চোখে সমস্যা হয়েছিল তাদের। ফলে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, চাঁদের ধুলা খুব ক্ষতিকর।

তবে এ নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, চাঁদের ধুলাবালি নিয়ে আগের মতো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এটা পৃথিবীর সাধারণ ধুলার চেয়ে কম ক্ষতিকর। মূল পার্থক্য হচ্ছে, ধুলাবালি কীভাবে মানবদেহের বিভিন্ন কোষের ওপর প্রভাব ফেলে সেটি। চাঁদের ধুলার ক্ষতি মূলত এর অদ্ভুত আকার ও ধারালো কিনারের থেকে ঘটে, যা দেহের কোষের ক্ষতি করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক ক্ষতিকর ধুলাবালি কোষের এমন ক্ষতি করে, যাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলা হয়। এমনটি বায়ুর অস্থিতিশীল অণুর কারণে ঘটে। তবে চাঁদের ধুলাবালি মানবদেহের তেমন ক্ষতি করে না।

স্মিথ বলেছেন, যে কোনো ধুলা শ্বাসের সঙ্গে গেলে আপনি হাঁচি, কাশি ও আরো অনেক অস্বস্তি অনুভব করবেন। তবে চাঁদের ধুলাবালি রাসায়নিক যৌগ সিলিকার মতো বিষাক্ত নয়। ১০ বছর ধরে কোনো নির্মাণ সাইটে কাজ করলে সিলিকার কারণে ‘সিলিকোসিস’ নামে ফুসফুসের মারাত্মক রোগ হতে পারে।
গবেষণায় ভালো খবর উঠে এলেও চাঁদের ধুলার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সতর্কভাবে কাজ করছে নাসা। এজন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে তারা। সংস্থাটি এমন এক ধরনের স্পেসসুট তৈরি করেছে, যা রোভারের বাইরে লাগানো থাকবে। মহাকাশচারী রোভারের ভেতর থেকে ওই স্যুটে উঠবেন ও নামবেন। আর এ স্যুট কখনও রোভারের ভেতরে প্রবেশ করবে না। ফলে ধুলাময় স্যুট রোভারের ভেতরের ক্ষতি করতে পারবে না।