ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

চলে গেলেন হাঁদা ভোঁদা-বাঁটুলের স্রষ্টা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলা কমিকসের গোড়াপত্তন হয়েছিল তাঁর হাতে। ‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ বা ‘নন্টে–ফন্টে’—বাংলা কমিকস কি এসব চরিত্র ছাড়া সম্পূর্ণ হয়? বাঙালির কিশোরবেলা রাঙিয়ে দেওয়া সেই কিংবদন্তি নারায়ণ দেবনাথ আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নারায়ণ দেবনাথকে গত ২৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর ফুসফুস থেকে শুরু করে কিডনির সমস্যা বাড়ছিল। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল তাঁর। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে গত ১৬ জানুয়ারি ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সে অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই নারায়ণ দেবনাথের হৃদ্যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা হচ্ছিল। রক্তচাপও দ্রুত ওঠানামার পাশাপাশি অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সব চেষ্টা বিফল করে চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ।
খবরে জানা গেছে, নারায়ণ দেবনাথ বয়সজনিত নানা সমস্যায় কয়েক বছর ধরেই ভুগছিলেন। এর আগেও একাধিকবার এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল।
নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শিবপুরে। পারিবারিক আদি বাসস্থান বাংলাদেশের বিক্রমপুর অঞ্চলে (অধুনা মুন্সিগঞ্জ)। তাঁর জন্মের আগেই পরিবার শিবপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। অল্প বয়স থেকেই তাঁর শিল্পসত্তার প্রকাশ ঘটেছিল। পারিবারিক পেশা স্বর্ণকার হওয়ায় অলংকারের নকশা করার সুযোগ ছিল তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আর্ট কলেজে পাঁচ বছরের ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তা চালিয়ে যাননি। শেষ বর্ষে এসে পড়া ছেড়ে দেন। এরপর কিছু বছর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। বাংলা কমিকসের জগতে নারায়ণ দেবনাথের আগমন ঘটে দেব সাহিত্য কুটিরের উৎসাহে। সে সময় বাংলা কমিকস বলতে ছিল একমাত্র প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ি বা কাফি খাঁর আঁকা শেয়াল প-িত, যা তখন যুগান্তরে প্রকাশিত হতো। ‘হাঁদা ভোঁদা’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকদের সমাদর পায় এবং শুকতারা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। শুরুতে দেবনাথ নিজেই ‘হাঁদা ভোঁদা’য় অঙ্কন ও কালি বসানোর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তা গ্রেস্কেলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়।
নারায়ণ দেবনাথের প্রথম রঙিন কমিক স্ট্রিপ ছিল ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। তাঁর নিজের জবানিতে, কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে ফেরার পথে তিনি বাঁটুলের কল্পনা করেন এবং তৎক্ষণাৎ তার প্রতিকৃতি এঁকে ফেলেছিলেন। পরে তুমুল জনপ্রিয় হয় ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। ২০১২ সালে বাঁটুল প্রথমবার ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। ২০২১ সালে নারায়ণ দেবনাথকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করে ভারত সরকার। এর আগে ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংগঠনের প্রতি উমামার কমিটমেন্ট ছিল কি না, প্রশ্ন রিফাতের

চলে গেলেন হাঁদা ভোঁদা-বাঁটুলের স্রষ্টা

আপডেট সময় : ০১:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলা কমিকসের গোড়াপত্তন হয়েছিল তাঁর হাতে। ‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ বা ‘নন্টে–ফন্টে’—বাংলা কমিকস কি এসব চরিত্র ছাড়া সম্পূর্ণ হয়? বাঙালির কিশোরবেলা রাঙিয়ে দেওয়া সেই কিংবদন্তি নারায়ণ দেবনাথ আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নারায়ণ দেবনাথকে গত ২৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর ফুসফুস থেকে শুরু করে কিডনির সমস্যা বাড়ছিল। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল তাঁর। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে গত ১৬ জানুয়ারি ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সে অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই নারায়ণ দেবনাথের হৃদ্যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা হচ্ছিল। রক্তচাপও দ্রুত ওঠানামার পাশাপাশি অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সব চেষ্টা বিফল করে চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ।
খবরে জানা গেছে, নারায়ণ দেবনাথ বয়সজনিত নানা সমস্যায় কয়েক বছর ধরেই ভুগছিলেন। এর আগেও একাধিকবার এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল।
নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শিবপুরে। পারিবারিক আদি বাসস্থান বাংলাদেশের বিক্রমপুর অঞ্চলে (অধুনা মুন্সিগঞ্জ)। তাঁর জন্মের আগেই পরিবার শিবপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। অল্প বয়স থেকেই তাঁর শিল্পসত্তার প্রকাশ ঘটেছিল। পারিবারিক পেশা স্বর্ণকার হওয়ায় অলংকারের নকশা করার সুযোগ ছিল তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আর্ট কলেজে পাঁচ বছরের ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তা চালিয়ে যাননি। শেষ বর্ষে এসে পড়া ছেড়ে দেন। এরপর কিছু বছর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। বাংলা কমিকসের জগতে নারায়ণ দেবনাথের আগমন ঘটে দেব সাহিত্য কুটিরের উৎসাহে। সে সময় বাংলা কমিকস বলতে ছিল একমাত্র প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ি বা কাফি খাঁর আঁকা শেয়াল প-িত, যা তখন যুগান্তরে প্রকাশিত হতো। ‘হাঁদা ভোঁদা’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকদের সমাদর পায় এবং শুকতারা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। শুরুতে দেবনাথ নিজেই ‘হাঁদা ভোঁদা’য় অঙ্কন ও কালি বসানোর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তা গ্রেস্কেলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়।
নারায়ণ দেবনাথের প্রথম রঙিন কমিক স্ট্রিপ ছিল ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। তাঁর নিজের জবানিতে, কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে ফেরার পথে তিনি বাঁটুলের কল্পনা করেন এবং তৎক্ষণাৎ তার প্রতিকৃতি এঁকে ফেলেছিলেন। পরে তুমুল জনপ্রিয় হয় ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। ২০১২ সালে বাঁটুল প্রথমবার ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। ২০২১ সালে নারায়ণ দেবনাথকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করে ভারত সরকার। এর আগে ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।