নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জানাজা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদকে শেষ বিদায় জানালেন তার সাবেক সহকর্মী, বন্ধু ও স্বজনরা। সাবেক এই কূটনীতিকের জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ শতাধিক সাবেক সহকর্মী ও স্বজন সেখানে জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শুরুর আগে ছোট ভাই জহির উদ্দিন রেওয়াজ মাফিক পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ভাইয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চান এবং তার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জানাজার আগে মহিউদ্দিন আহমদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা স্মরণ করে পরররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “তিনি একজন সফল কূটনীতিক ছিলেন। গোটা জাতি তার অবদান সর্বদা মনে রাখবে।”
গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার বাসা শিউলিতলায় মারা যান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া কূটনীতিক মহিউদ্দিন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
তিনি লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তিন সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর চারদিন আগে মহিউদ্দিন আহমদকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল বলে তার ভাই জানান।
সোমবার রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদে মহিউদ্দিন আহমদের জানাজা হয়। সকালে তার কফিন নেওয়া হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তার ছোট ভাই জানান, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় নূরপুরে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে মহিউদ্দিনের মরদেহ। সেখানে আছরের পর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
মহিউদ্দিন আহমদের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৯ জুন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৭ সালে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে লন্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত ছিলেন মহিউদ্দিন। ১ আগস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন।
ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। পেশাদার কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদের চাকরিজীবন কেটেছে নানা উত্থান পতনে। এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল অন্য মন্ত্রণালয়ে। বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখার ‘অপরাধে’ বিএনপি সরকার করেছিল চাকরিচ্যুত। পরে শেখ হাসিনা সরকারে এসে মহিউদ্দিন আহমদকে চাকরিতে ফেরান, সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেন।
২০০১ সালের জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান মহিউদ্দিন আহমদ। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দারিদ্র্য, উন্নয়ন প্রভৃতি নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে নিয়মিত কলাম লিখেছেন।
চলে গেলেন চৌকষ কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ