হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের পাহাড়ি অঞ্চল খ্যাত নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগণায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। দেশের ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির’ সুযোগে পাহাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে একদল অসাধু চক্র। অন্যদিকে ঝুঁকি বাড়ছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে দেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ। অন্যদিকে, পাহাড় কাটায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, গজনাইপুর, পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে দিনারপুর পরগণা। ২০১৭ সালে গণমাধ্যমে দিনারপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে হবিগঞ্জ জেলার সকল পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে এলাকার বিভিন্নস্থানে পাহাড় কেটে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে উচ্চ দামে এসব পাহাড়ি লাল মাটি বিক্রি করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু না করায় অস্থিরতার সুযোগে গত ১১ আগস্ট থেকে গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার-শতক-মৌলভীবাজার সড়কের পাশে শতক গ্রামের আব্দুর রহিমের মালিকানাধীন একটি পাহাড় কাটা শুরু হয়। বাহুবলের পুটিজুরি এলাকার ঠিকাদার সোহেল মিয়ার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই পাহাড় থেকে এক্সভেটর (ভেকু) মেশিনের সাহায্যে মাটি কাটছে। পরে ট্রাকভর্তি করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আথানগীরি এলাকায়। পাহাড় কাটার ফলে আশপাশের বাড়িঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে বাড়িঘর। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রতিকার চেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। শতক গ্রামের অলি মিয়া, মুবেদ মিয়া, আমিনুর রহমান, পাবেল আহমেদ যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট ও মাধবপুরে পাহাড় টিলা কেটে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। এতে সার্বিক পরিবেশ প্রতীবেশ ও প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সেটা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে। দেশের পরিবেশ আইন, প্রচলিত আইনসহ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু লোক এই অঞ্চলের পাহাড় টিলা কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত কর্তৃক পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো রক্ষায় কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার জন্য যে কার্যকর ভূমিকা ও আইন প্রয়োগ করা দরকার। সেটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে পালন করছেন না। ফলে পাহাড় ও টিলা কাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি ব্যবস্থাসহ পাহাড়-টিলাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, এখন তো দেশে অস্থিরতা চলছে- এই সুযোগে একদল মানুষ পরিবেশ ধ্বংসে লিপ্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর নবীগঞ্জ ক্যাম্পের মেজর তানভীর বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি আমরা জেনেছি। ইতিমধ্যে আমাদের একটি টহল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
চলমান পরিস্থিতির সুযোগে চলছে পাহাড় ধ্বংসের মহোৎসব
জনপ্রিয় সংবাদ