ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

চলনবিলের ভাসমান স্কুল পেলো ইউনেস্কোর পুরস্কার

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত

পাবনা সংবাদদাতা: বর্ষাকালে বা বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যায়। তখন সব স্কুল বন্ধ হয়। শিশুরা মাসের পর মাস শিক্ষাবঞ্চিত থাকে। এই অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। তবে চলনবিলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজওয়ান এই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করেছিলেন। ২০০২ সালে তিনি স্থানীয় একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর করেন। এটাকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল।

এবার স্কুলটির অর্জনের ঝুড়িতে যুক্ত হলো ইউনেস্কোর পুরস্কার। এ যেন বুক উঁচু করে বিশ্ব দরবারে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া।

চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনেস্কোর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বা সম্মাননার একটি কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার-২০২৫ লাভ করেছে স্কুলটি। বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান এই সৌরচালিত ভাসমান স্কুলের উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তার পরিচালিত ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল একটি। অন্য দুটি হলো- আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং ও মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

২০তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়। রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’র পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান বা পুরস্কার।

সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছোটবেলায় স্থপতি রেজোয়ান চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন। যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান। স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে পাঠদান চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। ইউনেস্কো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যা প্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের মডেল এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও অনুসরণ করছে এবং এটি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশকে একই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ পুরস্কার অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, শিক্ষা শুধু পড়া-লেখা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি সাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে আমাদের তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে যেখানে কোনো দুর্যোগই কোনো শিশুর শিক্ষাকে থামাতে পারবে না। এক্ষেত্রে উদ্ভাবিত ভাসমান স্কুল সহায়ক ভূমিকা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে ‘মাইগ্রেশনস অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সজিবিশন’এ ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ- ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্ট হিসেবে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ নির্বাচিত হয়েছে। চলনবিলের সুবিশাল জলরাশি থেকে জন্ম নেওয়া এক স্থানীয় উদ্ভাবন আজ সাক্ষরতা, ডিজাইন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় প্রেরণা জোগাচ্ছে।

এসি/আপ্র/২৫/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

চলনবিলের ভাসমান স্কুল পেলো ইউনেস্কোর পুরস্কার

আপডেট সময় : ০৩:৪৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

পাবনা সংবাদদাতা: বর্ষাকালে বা বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যায়। তখন সব স্কুল বন্ধ হয়। শিশুরা মাসের পর মাস শিক্ষাবঞ্চিত থাকে। এই অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। তবে চলনবিলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজওয়ান এই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করেছিলেন। ২০০২ সালে তিনি স্থানীয় একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর করেন। এটাকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল।

এবার স্কুলটির অর্জনের ঝুড়িতে যুক্ত হলো ইউনেস্কোর পুরস্কার। এ যেন বুক উঁচু করে বিশ্ব দরবারে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া।

চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনেস্কোর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বা সম্মাননার একটি কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার-২০২৫ লাভ করেছে স্কুলটি। বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান এই সৌরচালিত ভাসমান স্কুলের উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তার পরিচালিত ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল একটি। অন্য দুটি হলো- আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং ও মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

২০তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়। রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’র পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান বা পুরস্কার।

সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছোটবেলায় স্থপতি রেজোয়ান চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন। যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান। স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে পাঠদান চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। ইউনেস্কো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যা প্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের মডেল এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও অনুসরণ করছে এবং এটি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশকে একই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ পুরস্কার অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, শিক্ষা শুধু পড়া-লেখা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি সাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে আমাদের তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে যেখানে কোনো দুর্যোগই কোনো শিশুর শিক্ষাকে থামাতে পারবে না। এক্ষেত্রে উদ্ভাবিত ভাসমান স্কুল সহায়ক ভূমিকা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে ‘মাইগ্রেশনস অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সজিবিশন’এ ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ- ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্ট হিসেবে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ নির্বাচিত হয়েছে। চলনবিলের সুবিশাল জলরাশি থেকে জন্ম নেওয়া এক স্থানীয় উদ্ভাবন আজ সাক্ষরতা, ডিজাইন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় প্রেরণা জোগাচ্ছে।

এসি/আপ্র/২৫/১০/২০২৫