নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এর মধ্যেই একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং তা অনুমোদনের জন্য কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই তা প্রকাশ করা হবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সচিব।
সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে আসা ৮২টি আপত্তির শুনানি আগামী ২৪ আগস্ট থেকে একটানা চারদিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এনআইডি সংশোধন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, এনআইডি সংশোধনের জন্য যে আবেদনগুলো প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়েছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে এ ধরনের আপিলের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। ইসি মনে করে, যদি ডাটা এন্ট্রি আরো নিখুঁত হয়, তাহলে আপত্তির সংখ্যা আরো কমে আসবে।
ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ স্ক্যানের বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ২০০৮ সাল থেকে যে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তার অনেকগুলো ফর্ম এখনো স্ক্যান করা বাকি ছিল। সেই ফর্মগুলো স্ক্যান করে কমিশনের পোর্টালে আপলোড করার কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে তথ্যভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ হবে।
ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে না বরং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোতেই ভোটারদের উপস্থিতি সমন্বয় করা হবে। বর্তমানে প্রতি ৫০০ ভোটারের জন্য একটি বুথ আছে, যা ভবিষ্যতে ৬০০ করা হতে পারে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে সচিব আরো বলেন, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের আবেদন মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তাদের কাজ চলছে। যাদের আবেদন বাতিল বা বিবেচনাযোগ্য মনে হয়নি, তাদের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বাতিল হওয়ার পেছনে কোন শর্তপূরণ হয়নি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো উদ্বেগ নেই বলে কমিশন জানিয়েছে। সবার নিজস্ব কাজ গুছিয়ে নিলেই হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, মাঠ প্রশাসন নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দায়িত্ব পালন করছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজের ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো ধরনের হুড়োহুড়ি বা সমস্যা না হয়।
২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানি শুরু: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনি এলাকাগুলোর পুনর্র্নিধারিত সীমানা সম্পর্কে আপত্তি বা পরামর্শ দাখিল করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আগামী ২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে আপত্তি শুনানি শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি); যা চলবে আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন শুনানিতে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইসির উপ-সচিব মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ২৪ আগস্ট কুমিল্লা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি করা হবে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩ ও ৫; আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কুমিল্লা-৬, ৯, ১০ ও ১১; সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চাঁদপুর-২ ও ৩, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে। ২৫ আগস্ট খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩, ৪, যশোর-৩, ৬, বাগেরহাট- ১, ২ ও ৩; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১, বরগুনা-১, ২, পিরোজপুর-১, ২, ৩, চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮, ১৯, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে। ২৬ আগস্ট ঢাকা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-১, ২, ৩, নরসিংদী-৪, ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩,৪,৫; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১,২,৩,৪,৫,৬,৭,১০,১৪,১৫,১৬,১৮ ও ১৯ আসনের শুনানি হবে।
২৭ আগস্ট রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ- ১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর- ২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আরো জানানো হয়, শুনানি শেষে রায় সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবে ইসির আইন শাখা।
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলোই নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি। ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়। বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে গত রোববার (১৭ আগস্ট) সীমানা পুনর্র্নিধারণ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে। সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে, ইসি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ১০টি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করেছিল। এর আগে, ২০১৮ সালে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২৫টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৩ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে ৮৭টি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করেছিল। অন্যদিকে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে ১৩৩টি আসনের সীমানায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।
এসি/সানা/১৮/৮/২০২৫