ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি বছরেই ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ

  • আপডেট সময় : ০২:৪২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : চলতি বছরের মধ্যেই দেশের ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি সরকার আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে গণহারে টিকাদান শুরু করা হয়েছে। মূলত করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের বিকল্প হিসাবে সকলের জন্য টিকা কর্মসূচিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন এ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ও টাকা দিয়ে মোট ১০ কোটি টিকার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্মের কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স থেকে আসা টিকা দিয়েই গণটিকাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। কোভ্যাক্স এবং চীন ছাড়াও জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। সিঙ্গেল ডোজ ওই টিকা কিনতে পারলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। টিকা কিনতে অর্থ সংস্থান এবং করোনা পুরোপুরি নির্মূলে দুই বছরের পরিকল্পনা নেয়া হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকা সংগ্রহের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। আশা করা যায় করোনার সংক্রমণ রোধ করা গেলে দ্রুতই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক হয়ে আসবে। টিকা কার্যক্রম বেগবান করা গেলে দেশের তিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নেয়াও সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলো টিকা কার্যক্রম জোরদার করায় সেখানকার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের টিকা কেনা এবং উৎপাদনে চলতি বাজেটে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়া জনজীবন সুরায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় ‘ন্যাশনাল ডিপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করেছে সরকার। করোনা প্রতিরোধে সরকার শুরুতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে তৃতীয় প হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ওই চুক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল ৩২ লাখ ডোজ। ভারতের সেরাম থেকে এখনো ২ কোটি ডোজ পাওনা আছে। ভারতে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আগামী মাসে চুক্তির বাকি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও বর্তমানের সঙ্কট মেটাতে সেরামের বিকল্প হিসেবে চীনের সঙ্গে ২ কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশের ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। টিকা নিয়ে সব প যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রা করে তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ভ্যাকসিন হাতে আসবে। তাতে নতুন করে আরো সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। একইসঙ্গে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সিঙ্গেল ডোজের জনসন এ্যান্ড জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জনসনের টিকা কিনতে পারলে আগামী বছরের এই সময়ের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাকরণে আওতায় নিয়ে আসা যাবে। ইতোমধ্যে সরকারের প থেকে কোভ্যাক্সের কাছে জনসনের টিকা চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের টিকা কিনতে আগামী দুই বছরে ২৫ হাজার কোটি টাক ব্যয়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চলতি ২০২১-’২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বাকি টাকা ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ২০২২-’২৩ অর্থবছরে ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে টিকা এবং করোনার জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কিনতে বাজেটে আরো ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) আওতায় ‘ন্যাশনাল ডিপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই কর্মসূচীর আওতায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচী সফলভাবে শুরু করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের সবাইকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি’র অর্থায়নে কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপার্ডনেন্স প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্প হতে টিকা ক্রয়, অক্সিজেন লাইন স্থাপন, আইসিইউ-সিসিইউ স্থাপন এবং অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। দেশের সবাই যাতে বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন পায় সেজন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জীবন বাঁচানো গেলে দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আবার গতি ফিরে আসবে। ওই কারণেই দেশের সকল নাগরিক টিকা পাবে।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০২১-’২৩ অর্থবছরে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ভ্যাকসিন বা টিকা ক্রয়ে ১৫০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাকি ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা হিসাবে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া টিকা কিনতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫২ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার লজিস্টিক সাপোর্ট হিসাবে ব্যয় করা হবে। বাকি ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার পুরোটা টিকা ক্রয় খাতে যাবে। পাশাপাশি টিকা কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দেবে ৯৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি ২০২১-’২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার ২৩ প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে করোনার টিকা কিনতে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। সংস্থাটির কাছ থেকে টিকা কিনতে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫০০ টাকার কোটির ঋণ সহায়তা আসছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির সঙ্গে ওই সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। করোনার টিকা ক্রয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা করেছেন। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের মোট জনগণের ৮০ শতাংশকে ভ্যাকসিন তথা টিকার আওতায় আনার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ উন্নত দেশগুলো টিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করায় দ্রুত সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনে এখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। ওসব দেশের মানুষ টিকা নিয়ে এখন মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পাচ্ছে। কঠোর লকডাউনের পরিবর্তে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মানুষজন স্ব স্ব কর্মেেত্র ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও করোনার টিকা প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্না ও চীনের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ও আগস্টে এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৪০ লাখের ওপর টিকা আসবে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে চুক্তির আরো টিকা দেশে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন এ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের ২০২১ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে ওই সুবিধার আওতায় একটি চালানে ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা এসেছে দেশে। তাছাড়া ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা। আগামীতে কোভ্যাক্স থেকে এ্যাস্ট্রাজেনেকার আরো টিকা আসবে। আর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তির টিকা না পেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ চীনের বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট কোং লিমিটেডের কাছ থেকে ওই টিকা কিনেছে সরকার। সিনোফার্মের কাছ থেকে মোট এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা কিনছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ওই টিকা আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিউটিক্যাল চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশের আরো একটি ওষুধ কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মা রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক ভি আমদানির বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। তার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত ২৭ জুন দেশে ৮ম টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি, চীনের সিনোফার্ম, বেলজিয়ামের ফাইজার, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের জনসনের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচীটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্থগিত করা হয়। বর্তমানে চীনের সিনোফার্ম ও ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের গণটিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে আসা মডার্নার ২৫ লাখ টিকা বাংলাদেশে মজুদ রয়েছে। ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় বাংলাদেশ গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ডোজের কোভিড টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। আর ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া গত ৫ মে থেকে স্থগিত করা হয়। মজুদ টিকার পরিমাণ বাড়ায় এখন বাংলাদেশে গণটিকাকরণের নতুন করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। প্রথমে দ্বিতীয় ধাপের নিবন্ধন মেডিক্যাল কলেজের শিার্থী, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের নিবন্ধন শুরু হয়। সারাদেশে টিকাকরণের পরিধি বাড়াতে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ৩৫ বছর নির্ধারণ করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। বর্তমানে সরকারের হাতে এসেছে এক কোটি ৬০ লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা। তার মধ্যে এ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি তিন লাখ ডোজ, সিনোফার্মের ৩১ লাখ ডোজ, মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ এবং ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা রয়েছে।
টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বাজেট আলোচনায় সরকার দেশের সব নাগরিককে বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেবার কথা বলেছেন। টিকা সংগ্রহে যতো টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন সরকার তা দেবে। টিকা নিয়ে সমস্যা হবে না। জুলাই মাস থেকে আরো টিকা আসবে এবং দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হবে। টিকা কেনার জন্য চলতি বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে এক কোটি ৬০ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। মূলত করোনার টিকা নিয়ে যখন গবেষণা চলছিল, তখন থেকেই বাংলাদেশ টিকার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছিল। ভারতে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। তাতে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু এখন টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সব কোম্পানির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
আর টিকাকরণ কর্মসূচির ওপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার লকডাউন নির্ভর হতে চায় না, টিকানির্ভর হতে চায়। টিকায় স্বনির্ভর হবে দেশ। লকডাউনের মাধ্যমে মানুষের তি হয়। যা কাম্য নয়। কিন্তু মানুষের জীবন রার্থে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে লকডাউন দিতে হচ্ছে। করোনা মহামারীকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আগামীতে নিজ দেশেই উৎপন্ন হবে টিকা। আপাতত জরুরী ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর এসব উন্নয়নের কারণেই এদেশে মৃত্যুহার দেড় শতাংশ আর সারা পৃথিবীতে মৃত্যুর হার আড়াই শতাংশ। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে দেশেই টিকা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। দেশের গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনের কারখানা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মহান বিজয়ের মাস শুরু

চলতি বছরেই ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ

আপডেট সময় : ০২:৪২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : চলতি বছরের মধ্যেই দেশের ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি সরকার আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে গণহারে টিকাদান শুরু করা হয়েছে। মূলত করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের বিকল্প হিসাবে সকলের জন্য টিকা কর্মসূচিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন এ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ও টাকা দিয়ে মোট ১০ কোটি টিকার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্মের কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স থেকে আসা টিকা দিয়েই গণটিকাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। কোভ্যাক্স এবং চীন ছাড়াও জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। সিঙ্গেল ডোজ ওই টিকা কিনতে পারলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। টিকা কিনতে অর্থ সংস্থান এবং করোনা পুরোপুরি নির্মূলে দুই বছরের পরিকল্পনা নেয়া হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকা সংগ্রহের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। আশা করা যায় করোনার সংক্রমণ রোধ করা গেলে দ্রুতই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক হয়ে আসবে। টিকা কার্যক্রম বেগবান করা গেলে দেশের তিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নেয়াও সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলো টিকা কার্যক্রম জোরদার করায় সেখানকার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের টিকা কেনা এবং উৎপাদনে চলতি বাজেটে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়া জনজীবন সুরায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় ‘ন্যাশনাল ডিপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করেছে সরকার। করোনা প্রতিরোধে সরকার শুরুতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে তৃতীয় প হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ওই চুক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল ৩২ লাখ ডোজ। ভারতের সেরাম থেকে এখনো ২ কোটি ডোজ পাওনা আছে। ভারতে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আগামী মাসে চুক্তির বাকি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও বর্তমানের সঙ্কট মেটাতে সেরামের বিকল্প হিসেবে চীনের সঙ্গে ২ কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশের ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। টিকা নিয়ে সব প যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রা করে তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ভ্যাকসিন হাতে আসবে। তাতে নতুন করে আরো সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। একইসঙ্গে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সিঙ্গেল ডোজের জনসন এ্যান্ড জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জনসনের টিকা কিনতে পারলে আগামী বছরের এই সময়ের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাকরণে আওতায় নিয়ে আসা যাবে। ইতোমধ্যে সরকারের প থেকে কোভ্যাক্সের কাছে জনসনের টিকা চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের টিকা কিনতে আগামী দুই বছরে ২৫ হাজার কোটি টাক ব্যয়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চলতি ২০২১-’২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বাকি টাকা ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ২০২২-’২৩ অর্থবছরে ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে টিকা এবং করোনার জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কিনতে বাজেটে আরো ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) আওতায় ‘ন্যাশনাল ডিপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই কর্মসূচীর আওতায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচী সফলভাবে শুরু করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের সবাইকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি’র অর্থায়নে কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপার্ডনেন্স প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্প হতে টিকা ক্রয়, অক্সিজেন লাইন স্থাপন, আইসিইউ-সিসিইউ স্থাপন এবং অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। দেশের সবাই যাতে বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন পায় সেজন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জীবন বাঁচানো গেলে দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আবার গতি ফিরে আসবে। ওই কারণেই দেশের সকল নাগরিক টিকা পাবে।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০২১-’২৩ অর্থবছরে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ভ্যাকসিন বা টিকা ক্রয়ে ১৫০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাকি ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা হিসাবে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া টিকা কিনতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫২ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার লজিস্টিক সাপোর্ট হিসাবে ব্যয় করা হবে। বাকি ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার পুরোটা টিকা ক্রয় খাতে যাবে। পাশাপাশি টিকা কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দেবে ৯৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি ২০২১-’২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার ২৩ প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে করোনার টিকা কিনতে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। সংস্থাটির কাছ থেকে টিকা কিনতে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫০০ টাকার কোটির ঋণ সহায়তা আসছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির সঙ্গে ওই সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। করোনার টিকা ক্রয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা করেছেন। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের মোট জনগণের ৮০ শতাংশকে ভ্যাকসিন তথা টিকার আওতায় আনার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ উন্নত দেশগুলো টিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করায় দ্রুত সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনে এখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। ওসব দেশের মানুষ টিকা নিয়ে এখন মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পাচ্ছে। কঠোর লকডাউনের পরিবর্তে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মানুষজন স্ব স্ব কর্মেেত্র ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও করোনার টিকা প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্না ও চীনের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ও আগস্টে এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৪০ লাখের ওপর টিকা আসবে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে চুক্তির আরো টিকা দেশে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন এ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের ২০২১ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে ওই সুবিধার আওতায় একটি চালানে ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা এসেছে দেশে। তাছাড়া ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা। আগামীতে কোভ্যাক্স থেকে এ্যাস্ট্রাজেনেকার আরো টিকা আসবে। আর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তির টিকা না পেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ চীনের বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট কোং লিমিটেডের কাছ থেকে ওই টিকা কিনেছে সরকার। সিনোফার্মের কাছ থেকে মোট এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা কিনছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ওই টিকা আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিউটিক্যাল চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশের আরো একটি ওষুধ কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মা রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক ভি আমদানির বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। তার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত ২৭ জুন দেশে ৮ম টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি, চীনের সিনোফার্ম, বেলজিয়ামের ফাইজার, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের জনসনের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচীটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্থগিত করা হয়। বর্তমানে চীনের সিনোফার্ম ও ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের গণটিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে আসা মডার্নার ২৫ লাখ টিকা বাংলাদেশে মজুদ রয়েছে। ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় বাংলাদেশ গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ডোজের কোভিড টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। আর ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া গত ৫ মে থেকে স্থগিত করা হয়। মজুদ টিকার পরিমাণ বাড়ায় এখন বাংলাদেশে গণটিকাকরণের নতুন করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। প্রথমে দ্বিতীয় ধাপের নিবন্ধন মেডিক্যাল কলেজের শিার্থী, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের নিবন্ধন শুরু হয়। সারাদেশে টিকাকরণের পরিধি বাড়াতে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ৩৫ বছর নির্ধারণ করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। বর্তমানে সরকারের হাতে এসেছে এক কোটি ৬০ লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা। তার মধ্যে এ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি তিন লাখ ডোজ, সিনোফার্মের ৩১ লাখ ডোজ, মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ এবং ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা রয়েছে।
টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বাজেট আলোচনায় সরকার দেশের সব নাগরিককে বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেবার কথা বলেছেন। টিকা সংগ্রহে যতো টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন সরকার তা দেবে। টিকা নিয়ে সমস্যা হবে না। জুলাই মাস থেকে আরো টিকা আসবে এবং দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হবে। টিকা কেনার জন্য চলতি বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে এক কোটি ৬০ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। মূলত করোনার টিকা নিয়ে যখন গবেষণা চলছিল, তখন থেকেই বাংলাদেশ টিকার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছিল। ভারতে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। তাতে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু এখন টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সব কোম্পানির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
আর টিকাকরণ কর্মসূচির ওপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার লকডাউন নির্ভর হতে চায় না, টিকানির্ভর হতে চায়। টিকায় স্বনির্ভর হবে দেশ। লকডাউনের মাধ্যমে মানুষের তি হয়। যা কাম্য নয়। কিন্তু মানুষের জীবন রার্থে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে লকডাউন দিতে হচ্ছে। করোনা মহামারীকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আগামীতে নিজ দেশেই উৎপন্ন হবে টিকা। আপাতত জরুরী ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর এসব উন্নয়নের কারণেই এদেশে মৃত্যুহার দেড় শতাংশ আর সারা পৃথিবীতে মৃত্যুর হার আড়াই শতাংশ। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে দেশেই টিকা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। দেশের গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনের কারখানা হবে।