ঢাকা ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চবিতে সেশনজটের শঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার অনুসারে বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই চার মাসকে সাধারণত পরীক্ষার মৌসুম বলা হয়। এই মাসগুলোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর গেলো মাস থেকে সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে আছেন। এতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর জোরদার হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। গত ৭ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি, ১০ জুলাই থেকে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ ও সর্বশেষ ১৮ জুলাই থেকে কমপ্লিট শাটডাউনে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতায় পুরো শিক্ষা সূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ দুই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি বড় আঘাত আসে। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় গত ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে করে দেশের অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যার কারণে, শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের কারণে তারিখ ঘোষণা করে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে বিভাগগুলো। অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও পূর্ব ঘোষিত সমাবর্তনও। এর আগে করোনার প্রভাবে এলোমেলো শিক্ষা সূচি এখনও ঠিক হয়নি। করোনার কারণে টানা দেড় বছর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বন্ধ থাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো শিক্ষা সূচি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সে শিক্ষা সূচি এখনও এলোমেলোই রয়ে গেছে। করোনার সময়ে পড়া সেশনজট এখনো পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিভাগগুলো। এরমধ্যে নতুন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষা সূচি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। রয়েছে সেশনজটে পড়ার শঙ্কাও। চলমান পরিস্থিতি শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো আবার কবে খুলবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস না খুলে দিলে সেশনজটসহ শিক্ষা সূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই।
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যুত দেবনাথ বলেন, দেশজুড়ে চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেসব বিভাগে সেশনজট রয়েছে, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে পারে। সেশনজটমুক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচিসহ নানা কারণে বহুদিন থেকেই শিক্ষকদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ করে পরীক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য হতে পারে। স্নাতকের কিংবা স্নাতকোত্তরের শেষের দিকে থাকা বহু চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য এমন পরিস্থিতি হতে পারে বিড়ম্বনার কারণ। চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিপন সরকার বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিভাগ আছে যেগুলোতে এমনিতেই জট আছে। এরমধ্যে করোনা এক বছরের জট তৈরি করলো। সুতরাং, বিভাগগুলোতে ইতোমধ্যেই দুই বছরের জট বিদ্যমান। সম্প্রতি দেশের সব ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ায় আবারও শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যার কারণে, ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে ৭ বছরও লাগতে পারে। সুতরাং, আমি মনে করি, ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে দেশের এই পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হোক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চবির পালি বিভাগের ৩য় বর্ষের পরীক্ষা ২৭ জুন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষ ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের এমবিএ ২য় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা গত ৭ জুলাই, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ৮ জুলাই, ইতিহাস বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা গত ১৬ জুলাই এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১ জুলাই, বাংলা বিভাগের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১১ জুলাই, ওশানোগ্রাফি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা ১৫ জুলাই এবং রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়াও, প্রায় সবগুলো বিভাগে ধীরে ধীরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে সেই পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। যার কারণে, বিভাগগুলো সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজি বলেন, অনির্ধারিত যে কোনো বন্ধ, তা যদি দুদিনের জন্যও হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা বছরের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর হল ভ্যাকেন্ট করে দেওয়ার পর নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে শিক্ষাকার্যক্রম এই মুহূর্তে শুরু করতে হলেও আরও ১৪-১৫ দিন লেগে যাবে। এতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘ কয়েক মাসের ভয়াবহ এক সেশন জ্যামে যে ভুগবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সমস্ত শিক্ষা-কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, প্রথমত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হবে। তারপর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর সিন্ডিকেট সভা করে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যায়, সেশনজট নিরসন করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটের মধ্যে আছে। করোনার সময় যে জট সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো ঠিক হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার মতো অবস্থা হবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। তখন কর্তৃপক্ষকে জট নিরসনে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে, এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, অনিশ্চয়তা রয়েই যায় যে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষক, কমকর্তা-কর্মচারীরা কি তাদের নিজ কর্মস্থলে ফিরবেন? চালু হবে ক্লাস-পরীক্ষা? কেননা, সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের যে দাবি তারা জানিয়ে আসছিলেন, সে দাবি পূরণে সরকার এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যার কারণে, শিক্ষার্থীদের সেশনজটের শঙ্কা থেকেই যায়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই জাতীয় সংকটকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পোষানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় অধ্যাপক আলমগির মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, আমি দুঃখিত। আমার বয়স হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করবেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চবিতে সেশনজটের শঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ১০:৩৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার অনুসারে বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই চার মাসকে সাধারণত পরীক্ষার মৌসুম বলা হয়। এই মাসগুলোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর গেলো মাস থেকে সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে আছেন। এতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর জোরদার হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। গত ৭ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি, ১০ জুলাই থেকে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ ও সর্বশেষ ১৮ জুলাই থেকে কমপ্লিট শাটডাউনে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতায় পুরো শিক্ষা সূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ দুই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি বড় আঘাত আসে। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় গত ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে করে দেশের অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যার কারণে, শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের কারণে তারিখ ঘোষণা করে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে বিভাগগুলো। অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও পূর্ব ঘোষিত সমাবর্তনও। এর আগে করোনার প্রভাবে এলোমেলো শিক্ষা সূচি এখনও ঠিক হয়নি। করোনার কারণে টানা দেড় বছর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বন্ধ থাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো শিক্ষা সূচি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সে শিক্ষা সূচি এখনও এলোমেলোই রয়ে গেছে। করোনার সময়ে পড়া সেশনজট এখনো পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিভাগগুলো। এরমধ্যে নতুন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষা সূচি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। রয়েছে সেশনজটে পড়ার শঙ্কাও। চলমান পরিস্থিতি শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো আবার কবে খুলবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস না খুলে দিলে সেশনজটসহ শিক্ষা সূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই।
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যুত দেবনাথ বলেন, দেশজুড়ে চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেসব বিভাগে সেশনজট রয়েছে, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে পারে। সেশনজটমুক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচিসহ নানা কারণে বহুদিন থেকেই শিক্ষকদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ করে পরীক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য হতে পারে। স্নাতকের কিংবা স্নাতকোত্তরের শেষের দিকে থাকা বহু চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য এমন পরিস্থিতি হতে পারে বিড়ম্বনার কারণ। চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিপন সরকার বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিভাগ আছে যেগুলোতে এমনিতেই জট আছে। এরমধ্যে করোনা এক বছরের জট তৈরি করলো। সুতরাং, বিভাগগুলোতে ইতোমধ্যেই দুই বছরের জট বিদ্যমান। সম্প্রতি দেশের সব ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ায় আবারও শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যার কারণে, ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে ৭ বছরও লাগতে পারে। সুতরাং, আমি মনে করি, ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে দেশের এই পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হোক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চবির পালি বিভাগের ৩য় বর্ষের পরীক্ষা ২৭ জুন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষ ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের এমবিএ ২য় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা গত ৭ জুলাই, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ৮ জুলাই, ইতিহাস বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা গত ১৬ জুলাই এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১ জুলাই, বাংলা বিভাগের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১১ জুলাই, ওশানোগ্রাফি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা ১৫ জুলাই এবং রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়াও, প্রায় সবগুলো বিভাগে ধীরে ধীরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে সেই পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। যার কারণে, বিভাগগুলো সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজি বলেন, অনির্ধারিত যে কোনো বন্ধ, তা যদি দুদিনের জন্যও হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা বছরের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর হল ভ্যাকেন্ট করে দেওয়ার পর নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে শিক্ষাকার্যক্রম এই মুহূর্তে শুরু করতে হলেও আরও ১৪-১৫ দিন লেগে যাবে। এতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘ কয়েক মাসের ভয়াবহ এক সেশন জ্যামে যে ভুগবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সমস্ত শিক্ষা-কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, প্রথমত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হবে। তারপর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর সিন্ডিকেট সভা করে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যায়, সেশনজট নিরসন করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটের মধ্যে আছে। করোনার সময় যে জট সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো ঠিক হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার মতো অবস্থা হবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। তখন কর্তৃপক্ষকে জট নিরসনে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে, এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, অনিশ্চয়তা রয়েই যায় যে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষক, কমকর্তা-কর্মচারীরা কি তাদের নিজ কর্মস্থলে ফিরবেন? চালু হবে ক্লাস-পরীক্ষা? কেননা, সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের যে দাবি তারা জানিয়ে আসছিলেন, সে দাবি পূরণে সরকার এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যার কারণে, শিক্ষার্থীদের সেশনজটের শঙ্কা থেকেই যায়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই জাতীয় সংকটকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পোষানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় অধ্যাপক আলমগির মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, আমি দুঃখিত। আমার বয়স হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করবেন।