ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
রেলভবনে তিন উপদেষ্টার যৌথ বৈঠক

চন্দ্রনাথ ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

  • আপডেট সময় : ০৯:০৬:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) স্রাইন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় রেলভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে স্রাইন কমিটির নেতারা জানান, পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা। তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক থেকেই তিন উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান কমিটির সদস্যরা। স্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিঁড়ি এখন খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’
কমিটির সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তবর্তী সরকার সবার জন্য বৈষম্যহীন সমাজে নির্মাণে কাজ করছে।’

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ‘অন্য ধর্মের স্থাপনার ওপর যারা আক্রমণ করে, তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ। একাজে কোনো ধর্ম নেই, অধর্ম রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের কোনো ধরনের চেষ্টা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই- আপনারা নায্য দাবি-দাওয়াগুলো মন্ত্রণালয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’

রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়- এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সিঁড়ির সংস্কার দ্রুতই শুরু হবে: এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেছেন, পাহাড়ের ১২০০ ফুট উঁচুতে হচ্ছে মন্দির। ওখানে সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। ওই সিঁড়িটা যেই অবস্থায় আছে সেটাকে আরো ডেভলপমেন্ট করা হবে। আজকে (বুধবার) তিনজন উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন এই সিঁড়ির ডেভলপমেন্টের কাজটা যেন খুব দ্রুত শুরু করা যায়।

বুধবার (২৭ আগস্ট) রেলভবনে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। শফিকুল আলম বলেন, চন্দ্রনাথ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মীয় ভাই-বোনদের সবচাইতে মহাত্বের জায়গা। এটা হাজার হাজার বছর ধরে সেই জায়গাটায় আছে। ওইখানে ৪০০ মন্দির আছে। আমাদের তিন উপদেষ্টা বলেছেন, চট্টগ্রামের ডিসি, পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে বলা হয়েছে। কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি সীতাকুণ্ড ইউএনও সবার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো ধরনের সমস্যা যদি থাকে সেগুলো খুব দ্রুত রিজলভ করা হবে।

রাজধানীর খিলক্ষেতে দুইটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের জন্য রেলওয়ে জমি দেওয়ার বিষয় তিনি বলেন, রেলের আইনে কোথাও লেখা নেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে। এই আইনকে সামনে রেখে এটা কিছু পরিবর্তন করে হিন্দু ভাইবোনদের জন্য পার্মানেন্টলি জমি দেওয়া হয়েছে। এর আগে রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদ, আন-নূর জামে মসজিদ ও খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের অনুকূলে জমি প্রদান করেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

রেলভবনে তিন উপদেষ্টার যৌথ বৈঠক

চন্দ্রনাথ ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

আপডেট সময় : ০৯:০৬:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) স্রাইন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় রেলভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে স্রাইন কমিটির নেতারা জানান, পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা। তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক থেকেই তিন উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান কমিটির সদস্যরা। স্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিঁড়ি এখন খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’
কমিটির সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তবর্তী সরকার সবার জন্য বৈষম্যহীন সমাজে নির্মাণে কাজ করছে।’

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ‘অন্য ধর্মের স্থাপনার ওপর যারা আক্রমণ করে, তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ। একাজে কোনো ধর্ম নেই, অধর্ম রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের কোনো ধরনের চেষ্টা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই- আপনারা নায্য দাবি-দাওয়াগুলো মন্ত্রণালয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’

রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়- এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সিঁড়ির সংস্কার দ্রুতই শুরু হবে: এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেছেন, পাহাড়ের ১২০০ ফুট উঁচুতে হচ্ছে মন্দির। ওখানে সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। ওই সিঁড়িটা যেই অবস্থায় আছে সেটাকে আরো ডেভলপমেন্ট করা হবে। আজকে (বুধবার) তিনজন উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন এই সিঁড়ির ডেভলপমেন্টের কাজটা যেন খুব দ্রুত শুরু করা যায়।

বুধবার (২৭ আগস্ট) রেলভবনে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। শফিকুল আলম বলেন, চন্দ্রনাথ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মীয় ভাই-বোনদের সবচাইতে মহাত্বের জায়গা। এটা হাজার হাজার বছর ধরে সেই জায়গাটায় আছে। ওইখানে ৪০০ মন্দির আছে। আমাদের তিন উপদেষ্টা বলেছেন, চট্টগ্রামের ডিসি, পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে বলা হয়েছে। কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি সীতাকুণ্ড ইউএনও সবার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো ধরনের সমস্যা যদি থাকে সেগুলো খুব দ্রুত রিজলভ করা হবে।

রাজধানীর খিলক্ষেতে দুইটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের জন্য রেলওয়ে জমি দেওয়ার বিষয় তিনি বলেন, রেলের আইনে কোথাও লেখা নেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে। এই আইনকে সামনে রেখে এটা কিছু পরিবর্তন করে হিন্দু ভাইবোনদের জন্য পার্মানেন্টলি জমি দেওয়া হয়েছে। এর আগে রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদ, আন-নূর জামে মসজিদ ও খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের অনুকূলে জমি প্রদান করেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।