ঢাকা ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলিতে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার নিহত

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা -ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনি গণসংযোগে অংশ নেওয়া ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন।

বুধবার (০৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাদের নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে সরোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরশাদ উল্লাহ চিকিৎসাধীন আছেন। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির সরোয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা তিনি।

গত ২৯ মার্চ রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সরোয়ারের প্রাইভেটকার গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। সেদিন গুলিতে গাড়িতে থাকা দুজন নিহত হন। তারা হলেন বখতিয়ার হোসেন মানিক (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩৬)। তারা সরোয়ারের সহযোগী। পাশাপাশি সরোয়ার ও তার দুই সহযোগী রবিন এবং হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর থেকে সরোয়ার কোথায় ছিলেন, তা অজানা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের। তবে তিনি কারও রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন, শুরু থেকে এটি বলছিল স্থানীয় লোকজন। তবে বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন।

বুধবার জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সরোয়ারের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়। এর আগে বিকালে নগরের চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন সরোয়ার। এতে এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার ও শান্ত নামের তিন জন গুলিতে আহত হন। তাদের মধ্যে সরোয়ারের মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেফতার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।

ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। একসময় সরোয়ার হোসেনও তার অনুসারী ছিলেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরোয়ার তাদের কাছ থেকে সরে যান।

২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আট জন নিহত হন। সে ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামাননি। বিদেশ থেকে তার বাহিনীর মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন ছোট সাজ্জাদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেন। তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে সরোয়ারকে যোগ দিতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থী জনসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়। আমাদের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন। তার চিকিৎসা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‌এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সরোয়ার নিহত হয়েছেন।

কারা গুলি করেছিল জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব রানা বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন হতে পারে। তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। বর্তমানে আমাদের দলীয় প্রার্থী এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি শঙ্কা মুক্ত। পাশাপাশি সরওয়ার বাবলা নিহত হন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলিতে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার নিহত

আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনি গণসংযোগে অংশ নেওয়া ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন।

বুধবার (০৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাদের নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে সরোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরশাদ উল্লাহ চিকিৎসাধীন আছেন। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির সরোয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা তিনি।

গত ২৯ মার্চ রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সরোয়ারের প্রাইভেটকার গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। সেদিন গুলিতে গাড়িতে থাকা দুজন নিহত হন। তারা হলেন বখতিয়ার হোসেন মানিক (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩৬)। তারা সরোয়ারের সহযোগী। পাশাপাশি সরোয়ার ও তার দুই সহযোগী রবিন এবং হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর থেকে সরোয়ার কোথায় ছিলেন, তা অজানা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের। তবে তিনি কারও রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন, শুরু থেকে এটি বলছিল স্থানীয় লোকজন। তবে বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন।

বুধবার জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সরোয়ারের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়। এর আগে বিকালে নগরের চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন সরোয়ার। এতে এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার ও শান্ত নামের তিন জন গুলিতে আহত হন। তাদের মধ্যে সরোয়ারের মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেফতার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।

ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। একসময় সরোয়ার হোসেনও তার অনুসারী ছিলেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরোয়ার তাদের কাছ থেকে সরে যান।

২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আট জন নিহত হন। সে ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামাননি। বিদেশ থেকে তার বাহিনীর মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন ছোট সাজ্জাদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেন। তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে সরোয়ারকে যোগ দিতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থী জনসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়। আমাদের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন। তার চিকিৎসা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‌এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সরোয়ার নিহত হয়েছেন।

কারা গুলি করেছিল জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব রানা বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন হতে পারে। তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। বর্তমানে আমাদের দলীয় প্রার্থী এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি শঙ্কা মুক্ত। পাশাপাশি সরওয়ার বাবলা নিহত হন।