চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: চট্টগ্রামে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। চট্টগ্রামে চলতি বছর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩ হাজার ৭৬২ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৩ হাজার ৬৭২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২০ জন মারা গেছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ২৫ এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন তথ্য দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
তাদের পরিচালিত সম্প্রতি এক জরিপে এসব এলাকা ডেঙ্গুর অন্যতম ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ এলাকাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশই এসব এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে কয়েকটি আবাসিক এলাকাও রয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এরপরও সিটি করপোরেশন লোক দেখানো কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়ার শঙ্কা করছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।
জরিপের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নগরের ২৫টি এলাকা হলো- বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর, সদরঘাট, বাকলিয়া, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী, পাঁচলাইশ, আকবরশাহ, চকবাজার, চান্দগাঁও, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, পাথরঘাটা, লালখানবাজার, আন্দরকিল্লা, কাট্টলী, দেওয়ানহাট, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, চন্দনপুরা ও মোহাম্মদপুর। এর মধ্যে বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর ও সদরঘাট এলাকাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে।
হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা, পানি, ময়লা-আবর্জনা যেন জমে না থাকে, নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৩ হাজার ৭৬২ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর তথ্য না থাকলেও ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২০ জন। এর মধ্যে ৩ জন শিশু, ১১ জন পুরুষ এবং ৬ নারী রয়েছে। ডেঙ্গুতে নগরে ২ হাজার ২২ জন এবং জেলার ১৫টি উপজেলায় আক্রান্ত হন এক হাজার ৭৪০ জন। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ২৭০ জন, পুরুষ ১ হাজার ৯৩৭ জন এবং নারী ১ হাজার ৪৬৫ জন। অপরদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ৬৬৮ জন, পুরুষ ১ হাজার ৯৭০ জন ও নারী ১ হাজার ১২৪ জন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বছরের এ সময়েও ডেঙ্গুর বিস্তার রয়েছে। প্রতিদিন অনেক লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে। কিছু কিছু এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার বেশি। ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া দুইটি মশা বাহিত রোগ। এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই মশা নিধন করতে হবে। মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মশা মারতে না পারলে আক্রান্তের হার আরো বাড়বে।’
নগরের সঙ্গীত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আনাস উদ্দিন সোয়াত বলেন, ‘এখানে মশার উপদ্রব বাড়লেও সিটি করপোশেনকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাত অনেকগুন বেড়ে যায়। এরপরও সিটি করপোরেশনের লোকজনকে মশার ওষুধ ছিটাতে এই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সারাবছর স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। যেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি সেখানে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে। ওষুধ ছিটানোর জন্য ২১০ জন কর্মী আছেন। তারা নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে কাজ করছেন। এর মধ্যে বড় ওয়ার্ডগুলোতে ৭ জন এবং ছোট ওয়ার্ডগুলোতে ৫ জন লোক ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মরত আছেন। এর বাইরে ৭২ জন সদস্য নিয়ে ছয়টি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো ডেঙ্গু রোগী যেখানে শনাক্ত হচ্ছে সেসব এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
এসি/আপ্র/০৮/১১/২০২৫



















