ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় রিমালজলাবদ্ধ-বিধস্ত উপকূলীয় জনপদ

  • আপডেট সময় : ০১:১০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

দেশের খবর ডেস্ক :ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয়জনপদ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। এতে উপকূলীয় জনপদ এখন ক্ষতবিক্ষত। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। নদ-নদীর পানি ২-৫ ফুট পর্যন্ত বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। জানাচ্ছেন প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারাঃ
পিরোজপুরে ৭ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, পানিবন্দি ৭২ হাজার মানুষ
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে পিরোজপুরে। এতে নদ-নদীর পানি ২-৫ ফুট পর্যন্ত বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৭২ হাজার মানুষ। প্রবল বাতাসে সাত হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, পিরোজপুর সদর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, কাউখালি, স্বরূপকাঠী, ভান্ডারিয়া ও নাজিরপুর বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ৩-৫ ফুট উঁচু জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলায় এখন পর্যন্ত সাত হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও ৭২ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে। সাত হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, সব উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা বরাদ্দ ছিল তা দিয়ে সবাইকে দ্রুত সহায়তা করা হচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি তাদের সহায়তা আগে দেওয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পিরোজপুর সদর এলাকার বাসিন্দা এস কে আলামিন বলেন, ‘রোববার রাত থেকে ঘরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুকনা খাবার খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। ঘূর্ণিঝড় থামার পর কিছুটা তৃপ্তি পাচ্ছি।’ ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পিরোজপুরে সাত হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতনেচ্ছা এশা জানান, সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে সবজির বাজারে একদফা প্রভাব পড়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দ্বিতীয় দফায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে শাকসবজিসহ দেশি ফলের দাম বেড়ে যেতে পারে। নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি নিজে লোকজন নিয়ে সড়ক ও নৌপথ সচল করতে কাজ করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ভোলায় বিধ্বস্ত সাড়ে ৭ হাজার বসতঘর
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভোলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভোলার সাত উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৩ ওয়ার্ডেই এসব ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৬২৩টি বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৬৫টি বসতঘর ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৫৮টি বসতঘর। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অতি জোয়ারের তলিয়েছে সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রাম। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অতি জোয়ারের পানিতে জেলার ৫ হাজার ৮৬০টি পুকুর ও ৯৫০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বোরো, আউস, সবজিসহ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি। ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জেলে পল্লী
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার কুয়াকাটার আশি ঘর কলোনীতে গেলে দেখা যায়, জেলে পল্লীটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে টানা দুই দিনে লন্ডভন্ড উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ জায়গা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আশি ঘর কলোনী নামে পরিচিতি জেলে পল্লীটি। এই পল্লীর শতভাগ ঘরগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অচল হয়ে পড়েছে প্রায় ২০০ মানুষের জনজীবন। জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরের পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে জেলেদের জন্য কুয়াকাটা পৌরসভার খাজুরা গ্রামে ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৮০টি ঘরের শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করার মতো পরিবেশও নেই ওই বসত ঘরগুলোতে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য বা অনুদান পাননি তারা। আশি ঘর কলোনীর বাসিন্দা বৃদ্ধ খলিল হওলাদার বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। ঘরের চাল উড়িয়ে কোথায় নিয়ে গেছে সেটার কোন খোঁজ পাইনি এখনো। রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমানোর মতো অবস্থাও নেই। ঘরের মধ্যে সব কাদা হয়ে গেছে। এই পল্লীর অপর এক বাসিন্দা সেলিম বলেন, আমাদের ৮০ ঘরের মধ্যে প্রায় ৭০টির বেশি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। কেবল মাত্র আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। সরকারের কাছে আমরা আবেদন করছি খুব দ্রুত আমাদের সাহায্য করুন। কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান শরীফ বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ৮০ ঘর কলোনীর বেশিরভাগ ঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তারা খুবই অসহায় জীবন যাপন করছে। তবে সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমরা তাদের দুয়ারে পৌঁছে দেব। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার সব চেয়ারম্যানদের খাবার বরাদ্দ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দ্রুত খাবার পৌঁছে যায়। তবে আশি ঘর জেলে পল্লীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমি এখনো কোনো তথ্য পাইনি। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
গোপালগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে ৪০০ ঘর প্লাবিত ও সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক জায়গা। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকে জেলার সর্বত্র বৃষ্টি শুরু হয়। সেইসঙ্গে বয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়া। তা অব্যাহত থাকে সোমবার সারারাত। ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। তবে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এ দুই উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ-মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক জানান, উপজেলার সাড়ে তিনশ বাড়িঘরে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। অন্তত ৪০০ লোককে বাঁশবাড়িয়া হাইস্কুল, পাটগাতি স্কুল, সরদারপাড়া স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কোটালীপাড়া ইউএনও শাহিনুর আক্তার জানান, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক জায়গায় তারা খোঁজখবর নিতে পারেননি। তবে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রশাসন কাজ করছে। অন্যদিকে, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে আউশ ধানের বীজতলা, শাকসবজি ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি, মিলছে বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ইতোমধ্যে উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বনের অভ্যন্তরে বনবিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, সুপেয় পানির পুকুর, বনবিভাগের জলযান ও ওয়ারলেস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আমরা যতটুকু জেনেছি সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আপনারা জানেন বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে। সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বনকর্মী, জেলে বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় পানির যে আধার ছিল সেগুলো প্লাবিত হয়ে লবণ পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকার সুপেয় পানির পুকুরটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোছ¡াসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বাতাসের ফলে বনের গাছ ভেঙে গেছে। যেহেতু প্রায় দুইদিন ধরে ঝড় হয়েছে এবং জলোচছ¡াস অনেক বন্য প্রাণী বিপদাপন্ন হয়েছে। বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর আমরাও পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু গতকাল রাত পর্যন্ত ঝড় ছিল আমরা সরেজমিন কোথাও যেতে পারিনি। সরেজমিনে এসব এলাকায় যাব এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করব। শরণখোলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সভাপতি শেখ নাজমুল বলেন, আমরা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করি। আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। যদি বন্য প্রাণী লোকালয়ে আসে আমরা তাৎক্ষণিক সেটি উদ্ধার করে বনে রেখে আসি। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙেছে। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়। সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি হরিণের ছবি দিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘হরিণটি বড় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও আরও কত হরিণ ও বন্য প্রাণী জলোছ¡াসে ভেসে গেছে, তার কোনো হিসাব কখনো পাওয়া যাবে না।’ তিনি আবার দুপুর ১টায় আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমেল থেমে গেছে। কিন্তু জানি না এর ভয়াবহতা কতদিনে কাটিয়ে উঠবে সুন্দরবন।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

ঘূর্ণিঝড় রিমালজলাবদ্ধ-বিধস্ত উপকূলীয় জনপদ

আপডেট সময় : ০১:১০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

দেশের খবর ডেস্ক :ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয়জনপদ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। এতে উপকূলীয় জনপদ এখন ক্ষতবিক্ষত। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। নদ-নদীর পানি ২-৫ ফুট পর্যন্ত বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। জানাচ্ছেন প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারাঃ
পিরোজপুরে ৭ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, পানিবন্দি ৭২ হাজার মানুষ
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে পিরোজপুরে। এতে নদ-নদীর পানি ২-৫ ফুট পর্যন্ত বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৭২ হাজার মানুষ। প্রবল বাতাসে সাত হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, পিরোজপুর সদর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, কাউখালি, স্বরূপকাঠী, ভান্ডারিয়া ও নাজিরপুর বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ৩-৫ ফুট উঁচু জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলায় এখন পর্যন্ত সাত হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও ৭২ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে। সাত হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, সব উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা বরাদ্দ ছিল তা দিয়ে সবাইকে দ্রুত সহায়তা করা হচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি তাদের সহায়তা আগে দেওয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পিরোজপুর সদর এলাকার বাসিন্দা এস কে আলামিন বলেন, ‘রোববার রাত থেকে ঘরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুকনা খাবার খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। ঘূর্ণিঝড় থামার পর কিছুটা তৃপ্তি পাচ্ছি।’ ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পিরোজপুরে সাত হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতনেচ্ছা এশা জানান, সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে সবজির বাজারে একদফা প্রভাব পড়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দ্বিতীয় দফায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে শাকসবজিসহ দেশি ফলের দাম বেড়ে যেতে পারে। নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি নিজে লোকজন নিয়ে সড়ক ও নৌপথ সচল করতে কাজ করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ভোলায় বিধ্বস্ত সাড়ে ৭ হাজার বসতঘর
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভোলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভোলার সাত উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৩ ওয়ার্ডেই এসব ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৬২৩টি বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৬৫টি বসতঘর ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৫৮টি বসতঘর। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অতি জোয়ারের তলিয়েছে সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রাম। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অতি জোয়ারের পানিতে জেলার ৫ হাজার ৮৬০টি পুকুর ও ৯৫০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বোরো, আউস, সবজিসহ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি। ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জেলে পল্লী
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার কুয়াকাটার আশি ঘর কলোনীতে গেলে দেখা যায়, জেলে পল্লীটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে টানা দুই দিনে লন্ডভন্ড উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ জায়গা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আশি ঘর কলোনী নামে পরিচিতি জেলে পল্লীটি। এই পল্লীর শতভাগ ঘরগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অচল হয়ে পড়েছে প্রায় ২০০ মানুষের জনজীবন। জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরের পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে জেলেদের জন্য কুয়াকাটা পৌরসভার খাজুরা গ্রামে ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৮০টি ঘরের শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করার মতো পরিবেশও নেই ওই বসত ঘরগুলোতে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য বা অনুদান পাননি তারা। আশি ঘর কলোনীর বাসিন্দা বৃদ্ধ খলিল হওলাদার বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। ঘরের চাল উড়িয়ে কোথায় নিয়ে গেছে সেটার কোন খোঁজ পাইনি এখনো। রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমানোর মতো অবস্থাও নেই। ঘরের মধ্যে সব কাদা হয়ে গেছে। এই পল্লীর অপর এক বাসিন্দা সেলিম বলেন, আমাদের ৮০ ঘরের মধ্যে প্রায় ৭০টির বেশি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। কেবল মাত্র আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। সরকারের কাছে আমরা আবেদন করছি খুব দ্রুত আমাদের সাহায্য করুন। কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান শরীফ বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ৮০ ঘর কলোনীর বেশিরভাগ ঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তারা খুবই অসহায় জীবন যাপন করছে। তবে সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমরা তাদের দুয়ারে পৌঁছে দেব। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার সব চেয়ারম্যানদের খাবার বরাদ্দ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দ্রুত খাবার পৌঁছে যায়। তবে আশি ঘর জেলে পল্লীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমি এখনো কোনো তথ্য পাইনি। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
গোপালগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে ৪০০ ঘর প্লাবিত ও সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক জায়গা। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকে জেলার সর্বত্র বৃষ্টি শুরু হয়। সেইসঙ্গে বয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়া। তা অব্যাহত থাকে সোমবার সারারাত। ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। তবে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এ দুই উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ-মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক জানান, উপজেলার সাড়ে তিনশ বাড়িঘরে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। অন্তত ৪০০ লোককে বাঁশবাড়িয়া হাইস্কুল, পাটগাতি স্কুল, সরদারপাড়া স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কোটালীপাড়া ইউএনও শাহিনুর আক্তার জানান, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক জায়গায় তারা খোঁজখবর নিতে পারেননি। তবে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রশাসন কাজ করছে। অন্যদিকে, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে আউশ ধানের বীজতলা, শাকসবজি ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি, মিলছে বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ইতোমধ্যে উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বনের অভ্যন্তরে বনবিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, সুপেয় পানির পুকুর, বনবিভাগের জলযান ও ওয়ারলেস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আমরা যতটুকু জেনেছি সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আপনারা জানেন বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে। সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বনকর্মী, জেলে বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় পানির যে আধার ছিল সেগুলো প্লাবিত হয়ে লবণ পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকার সুপেয় পানির পুকুরটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোছ¡াসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বাতাসের ফলে বনের গাছ ভেঙে গেছে। যেহেতু প্রায় দুইদিন ধরে ঝড় হয়েছে এবং জলোচছ¡াস অনেক বন্য প্রাণী বিপদাপন্ন হয়েছে। বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর আমরাও পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু গতকাল রাত পর্যন্ত ঝড় ছিল আমরা সরেজমিন কোথাও যেতে পারিনি। সরেজমিনে এসব এলাকায় যাব এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করব। শরণখোলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সভাপতি শেখ নাজমুল বলেন, আমরা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করি। আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। যদি বন্য প্রাণী লোকালয়ে আসে আমরা তাৎক্ষণিক সেটি উদ্ধার করে বনে রেখে আসি। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙেছে। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়। সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি হরিণের ছবি দিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘হরিণটি বড় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও আরও কত হরিণ ও বন্য প্রাণী জলোছ¡াসে ভেসে গেছে, তার কোনো হিসাব কখনো পাওয়া যাবে না।’ তিনি আবার দুপুর ১টায় আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমেল থেমে গেছে। কিন্তু জানি না এর ভয়াবহতা কতদিনে কাটিয়ে উঠবে সুন্দরবন।’