গবেষণার শুরুতে ৪০ বছর বয়সী ৫৮৯ জনের ঘুম-বিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা শুরু করেন গবেষকরা। সেসময় তাদের কিছু প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ বছর পর অংশগ্র্রহণকারীদের সেই প্রশ্নপত্রের উত্তর জানতে চাওয়া হয়।
প্রশ্নের মধ্যে ছিলÑ সাধারণত কি ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধা হয়? প্রায় রাতে কি বারবার ঘুম ভাঙে? সাধারণত কি খুব তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়? এর পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়ন করতে বাজে ঘুমের ছয়টি বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- অল্প ঘুম, বাজে ধরনের ঘুম, ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা, ঘুমিয়ে থাকতে সমস্যা, তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙা এবং দিনের বেলায় ঘুম ঘুমভাব।
ওই তথ্যাগুলোর পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের মস্তিস্ক ‘স্ক্যান’ করে ছবি সংরক্ষণ করা হয়, যাতে গবেষকরা ‘মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধি’র বিষয়টা গণনা করতে পারেন।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গবেষকরা দেখতে পানÑ একক বৈশিষ্ট্যের ঘুম দেওয়া অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের তুলনায় যাদের দুই বা তিন বৈশিষ্ট্যের বাজে ঘুম হয় তাদের মস্তিষ্কের বয়স অন্তত দেড় বছর বেশি। যাদের তিনটি বৈশিষ্ট্যের বেশি বাজে ঘুম হয় তাদের মস্তিষ্কের বয়স আড়াই বছর বেশি।
চূড়ান্ত পর্যায়ে গবেষকরা উপসংহার টানেনÑ ‘মধ্যবয়সে মস্তিষ্কের বয়স বেশি হওয়ার সঙ্গে বাজে ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে।’ তবে তারা উল্লেখ করেন, এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঘুমের সঙ্গে মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধির সম্পর্ক বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য আরও অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তাই শুধু ঘুম-ই যে মস্তিষ্কের বয়স বাড়িয়ে দেয়, সেটি সরাসরি বলা যাবে না।
ওই গবেষণার অন্তত প্রমাণ করে, ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়তে পারলে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকার মিলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইন্সটিটিউট (এনএইচএলবিআই)’য়ের তথ্যানুসারে- প্রতিরাতে প্রাপ্তবয়স্কদের টানা সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর লক্ষ্য থাকতে হবে। যদি এর চেয়ে কম ঘুম হয়, তাহলে একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এরমধ্যে রয়েছে- হৃদসংক্রান্ত রোগ, বিপাকীয় ও হরমোন সম্বন্ধীয় সমস্যা।
সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য যেসব বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে, তা হলোÑ
= চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমতে যাওয়া এবং ওঠার (ছুটির দিন-সহ)।
= প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। তবে ঘুমানোর সময়ের দুতিন ঘণ্টা আগে নয়।
= ক্যাফিন ও নিকোটিন গ্রহণ দুপুরের পর এড়াতে হবে।
= ঘুমানোর আগে মদ্যপান করা যাবে না। অ্যালকোহল দ্রুত গভীর ঘুম পাড়ায়। এ কারণে অল্প সময়ে ঘুম ভেঙে যায়।
= রাতে ভারী খাবার খাওয়া এড়াতে হবে।
= দুপুর ৩টার পর ‘ন্যাপ’ বা স্বল্প ঘুম দেওয়া যাবে না।
= ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীর শিথিল করতে কুসুম গরম পানিতে গোসল উপকারী।
= ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে ঘরের আলো কমানো, কোলাহল কমানো, ঘুমের আগে টিভি না দেখা বা কম্পিউটারে কাজ না করার চেষ্টা করতে হবে।
= প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বাইরে গিয়ে প্রাকৃতিক আলোর স্পর্শে থাকতে হবে।
এত কিছু পরও রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে শরীর শিথিল করার নানা পন্থা আছে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। আর নিয়মিতভাবে ভালো ঘুম না হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
ঘুমের ব্যাঘাতে মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধি পায়
জনপ্রিয় সংবাদ