ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগ

  • আপডেট সময় : ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী সংবাদদাতা : রাফিয়া সুলতানা রাজশাহীর শহীদ নাজমুল হক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে এক সহপাঠীর সাথে বসেছিল। বাড়িতে আসার পরের দিন তার চোখ ওঠে। এরপর রাফিয়া চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়। রেদওয়ান আহম্মেদ নোমান রাজশাহী মহানগরীর আসাম কলোনী বায়তুল আমান জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম। মসজিদে আযান দেওয়ার পর দেখা গেল তার চোখে কালো রোদ চশমা। কেন চশমা পরেছেন প্রশ্ন করতেই জানালেন চোখ উঠেছে। বাড়িতে গৃহকর্মী কাজ করছেন কালো চশমা পরে। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন- চোখে ব্যথা এবং চোখের মধ্যে খচ খচ করছে। আলোর দিকে তাকাতে পারছেন না। তাই কালো চশমা পরে কাজ করছেন। এভাবেই প্রতিদিন রাজশাহীতে ছোঁয়াচে চোখের রোগ ‘কনজাংটিভাইটিস’ এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে! যাকে সবাই চোখ ওঠা রোগ বলছেন। রাজশাহীতে চলতি সপ্তাহে হঠাৎই চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চোখের কনজাংটিভাইটিস নামক পর্দার প্রদাহের এই রোগটি ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় এখন সংক্রমণের ভীতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। কারণ শিশু থেকে বৃদ্ধ; সব বয়সের মানুষই এই ছোঁয়াচে রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন। শহর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম সবখানেই এখন একই অবস্থা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন- এই রোগ আগেও ছিল। এই চোখ ওঠা রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেবল প্রয়োজন সতর্কতা। এই রোগটি ভাইরাসজনিত হলেও করোনা বা মহামারির মতো ভয়ংকর কিছু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ এবং নিয়ম মেনে চললে ৬/৭ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন রোগী। এদিকে হঠাৎ করেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কোনোভাবে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। যেমন- রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলেও তার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়। তাই রোগ প্রতিরোধে দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. নাইমুল হক বলেন, এটা সাধারণত মৌসুমি রোগ। সাধারণত ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগে চোখ সাধারণত লাল হয়ে যায়। প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়৷ চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখে অস্বস্তিবোধ হয়, চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখে ব্যথা হয়, সূর্য বা অন্য কোনো আলো চোখে সহ্য করা যায় না, দুই চোখের ভেতরই হালকা জ্বালাপোড়া হওয়া এ লক্ষণ দেখা যায়।
ডা. নাইমুল হক আরও বলেন, চোখ নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্ন থাকলে সাধরণত এই ওঠা রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনে কিছু আই ড্রপ আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া হয়। আর কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত রোগী হাত দিয়ে চোখ চুলকাতে পারবেন না। আর বাইরে বের হলে অবশ্যই তাকে কালো চশমা পরতে হবে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, এই রোগ কমবেশি গোটা দেশেই ছড়িয়েছে। রোগটি এমনিই ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারা এই রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগ

আপডেট সময় : ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২

রাজশাহী সংবাদদাতা : রাফিয়া সুলতানা রাজশাহীর শহীদ নাজমুল হক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে এক সহপাঠীর সাথে বসেছিল। বাড়িতে আসার পরের দিন তার চোখ ওঠে। এরপর রাফিয়া চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়। রেদওয়ান আহম্মেদ নোমান রাজশাহী মহানগরীর আসাম কলোনী বায়তুল আমান জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম। মসজিদে আযান দেওয়ার পর দেখা গেল তার চোখে কালো রোদ চশমা। কেন চশমা পরেছেন প্রশ্ন করতেই জানালেন চোখ উঠেছে। বাড়িতে গৃহকর্মী কাজ করছেন কালো চশমা পরে। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন- চোখে ব্যথা এবং চোখের মধ্যে খচ খচ করছে। আলোর দিকে তাকাতে পারছেন না। তাই কালো চশমা পরে কাজ করছেন। এভাবেই প্রতিদিন রাজশাহীতে ছোঁয়াচে চোখের রোগ ‘কনজাংটিভাইটিস’ এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে! যাকে সবাই চোখ ওঠা রোগ বলছেন। রাজশাহীতে চলতি সপ্তাহে হঠাৎই চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চোখের কনজাংটিভাইটিস নামক পর্দার প্রদাহের এই রোগটি ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় এখন সংক্রমণের ভীতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। কারণ শিশু থেকে বৃদ্ধ; সব বয়সের মানুষই এই ছোঁয়াচে রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন। শহর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম সবখানেই এখন একই অবস্থা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন- এই রোগ আগেও ছিল। এই চোখ ওঠা রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেবল প্রয়োজন সতর্কতা। এই রোগটি ভাইরাসজনিত হলেও করোনা বা মহামারির মতো ভয়ংকর কিছু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ এবং নিয়ম মেনে চললে ৬/৭ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন রোগী। এদিকে হঠাৎ করেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কোনোভাবে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। যেমন- রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলেও তার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়। তাই রোগ প্রতিরোধে দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. নাইমুল হক বলেন, এটা সাধারণত মৌসুমি রোগ। সাধারণত ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগে চোখ সাধারণত লাল হয়ে যায়। প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়৷ চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখে অস্বস্তিবোধ হয়, চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখে ব্যথা হয়, সূর্য বা অন্য কোনো আলো চোখে সহ্য করা যায় না, দুই চোখের ভেতরই হালকা জ্বালাপোড়া হওয়া এ লক্ষণ দেখা যায়।
ডা. নাইমুল হক আরও বলেন, চোখ নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্ন থাকলে সাধরণত এই ওঠা রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনে কিছু আই ড্রপ আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া হয়। আর কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত রোগী হাত দিয়ে চোখ চুলকাতে পারবেন না। আর বাইরে বের হলে অবশ্যই তাকে কালো চশমা পরতে হবে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, এই রোগ কমবেশি গোটা দেশেই ছড়িয়েছে। রোগটি এমনিই ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারা এই রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।