বরিশাল সংবাদদাতা :বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীর একাধিক সমর্থকদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে ভুক্তভোগীরা। আর পুলিশ বলছে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে একাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজয়ী চেয়ারম্যান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন (কাপ-পিরিচ প্রতীক)। তিনি বলেন, গত রাতে হঠাৎ করেই বিভিন্ন জায়গায় আমার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় পরাজিত প্রার্থীর (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান) লোকজন। যার মধ্যে গৌরনদী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মো. ইখতিয়ার হোসেন হালদার, খোকন মল্লিকসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এছাড়া পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান শিপ্রা রানী বিশ্বাসের বাড়িতে তো অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, রোববার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর গোটা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমার কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে ছোট-বড় একাধিক হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি আছে। আর এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সভাপতি মো. মনির হোসেন। এদিকে হামলার শিকার শিপ্রা রানী বিশ্বাস জানান, তিনি নিজে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনির হোসেনকে সমর্থন জানিয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার পর রোববার রাতের আঁধারে হঠাৎ করেই পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালায়। শিপ্রা রানী বিশ্বাস বলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ভাগ্যক্রমে বসবাসের ঘরে আগুন না দেওয়ায় সবাই প্রাণে রক্ষা পাই। আর ওইসময় হামলাকারীদের বোঝাতে গিয়ে আমার এক মাসি আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর রাতেই পুলিশসহ সবাই আমাদের বাড়িতে এসেছে। আমিও থানায় গিয়েছিলাম মামলা করার জন্য, তবে তারা লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বলেছে। এখন সেই প্রস্তুতিই চলছে।
এদিকে ওই রাতেই দিয়াসুর গ্রামে মো. ইখতিয়ার হোসেন হালদারের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। যে হামলার ঘটনার পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ভাঙচুরকৃত চেয়ার ও মোটরসাইকেল বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গৌরনদী পৌর সভার কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মো. ইখতিয়ার হোসেন হালদার জানান, তার বাড়ি ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের বাড়ি একই গ্রামে। আর সে পরাজিত হওয়ার পেছনে মো. ইখতিয়ার হোসেন হালদারকে দায়ী করছেন। এদিকে দিয়াসুর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকশত মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়ে, যার মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যারা গৌরনদীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর তারা শুধু ইখতিয়ার হোসেন হাওলাদার কিংবা তোফাজ্জেল হোসেন নয়, কাপ-পিরিচ প্রতীকের সমর্থক অনেকের বাড়িতেই হামলা চালিয়েছেন। যাদের সামনে পেয়েছেন কিংবা হামলায় বাধা দিয়েছেন তাদের মারধরও করেছেন। আবার অনেকের বাড়িতে লুটপাটও চালানো হয়েছে। আর এসব বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হারিছুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে হামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। আর রাতের ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি।