নিজস্ব প্রতিবেদক : আলোচিত ব্যবসায়ী গোল্ডেন মনির এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহ বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় গোলেন্ড মনির ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন—রাজউকের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অফিস সহায়ক পারভেজ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) নাসির উদ্দিন শরীফ, উপ-পরিচালক দিদারুল আলম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (এস্টেট ও ভূমি-১) আনোয়ার হোসেন, নিরীক্ষা ও বাজেট শাখার ঊর্ধ্বতন হিসাব সহকারী এস এম তৌহিদুল ইসলাম, এস্টেট ও ভূমি-১ শাখার কার্যতদারককারী মান-২ এর আলাউদ্দিন সরকার। এছাড়া মামলায় দক্ষিণখানের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন খানকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পারস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ লাভ ও লোভের বশবর্তী হয়ে অসৎ উদ্দশ্যে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অফিস থেকে নিয়মানুযায়ী নথিসমূহ মুভমেন্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে এবং কাজ শেষে রেকর্ডরুমে না পাঠিয়ে সরকারি নথিপত্র কৌশলে সরিয়ে ও বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল অবৈধভাবে তৈরি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বে-আইনিভবে ভূয়া নথি তৈরি ও লিজ দলিল সম্পাদন করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/৫১১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ একটি টিম রাজউক এনেক্স ভবনের ৫ম তলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে তল্লাশি করেন। তল্লাশীকালে ওই কক্ষ থেকে ৭০টি প্লটের নথি, একটি ল্যাপটপ, রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তার ১৫টি সিলসহ স্ট্যাম্প প্যাড, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র ১৭০টি, ডিমান্ড কালেকশন রেজিস্ট্রার (ডিসিআর) বই একটি, ৪টি লিজ ডিড এর কপি, বরাদ্দপত্রের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মতিঝিল থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে থানায় সাধারণ ডাইরি করা হয়। মতিঝিল থানার এসআই সফিকুল ইসলাম উদ্ধার করা আলামত জব্দ করেন। দুদক সূত্র জানায়, তল্লাশিকালে ওই জব্দ করা রাজউকের মূল্যবান নথিপত্রের সঙ্গে মনির হোসেনের কর্মচারী হিসেবে পরিচিত মো. নাসির ও রাজউকের পিয়ন মো. পারভেজ চৌধুরীকে কর্মরত দেখা যায়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে নাসির পালিয়ে যায়। রাজউকের পিয়ন পারভেজ চৌধুরীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজউক অ্যানেক্স ভবনের পঞ্চম তলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষটি ১৯৮৬ সাল থেকে পলি ওভারসিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হককে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। পরিদর্শনকালে রাজউকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ফজলুল হক ওই কক্ষের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা মনির হোসেনকে (গোল্ডেন মনির) সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছে। আটক হওয়া পারভেজ চৌধুরীও জানায়, ফাইলগুলো গোল্ডেন মনিরের নির্দেশে রেকর্ডরুম ও সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে সংগ্রহ করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওই কক্ষে নেওয়া হয়েছিল। আটকের পর পারভেজ চৌধুরী সে সময় জানায়, গাল্ডেন মনিরের নির্দেশে তিনিসহ জিন্নাহ ও নাসিরসহ আরও কয়েকজন মিলে ৭০টি নথি কৌশলে রাজউকের মূলভবন থেকে এনেক্স ভবনের এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিন্তু রাজউকের ফাইল সংশ্লিষ্ট শাখা এবং রেকর্ডরুম ছাড়া অন্য কোথাও থাকার কথা নয়। নথিগুলো যে রুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই রুমটি রাজউকের অফিস রুম নয়। পরে রাজউকের চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে রাজউকের দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে পারভেজ চৌধুরী, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির, জিন্নাহ ও নাসিদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলটি পরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, গোল্ডেন মনির অর্থ ও প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় সরকারি নথিপত্র কৌশলে সরিয়ে এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল তৈরি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বে-আইনিভবে ভূয়া নথি তৈরি ও লিজ দলিল সম্পাদন করে রাজউকের বাড্ডা প্রকল্পের অর্ধশতাধিক প্লট আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।
গোল্ডেন মনির ও রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ