লাইফস্টাইল ডেস্ক: সবুজে মোড়া বিস্তৃত মাঠ, মাঝখানে ক্রিকেট পিচ ঘিরে কিছু তরুণ খেলছে, পেছনে উঁচু পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ঝরনাধারা। ভাইরাল হওয়া এমন ভিডিওর কল্যাণে জায়গাটাকে এখন কেউ বলছেন ‘বাংলার কাশ্মীর’, কারো কাছে ‘সিলেটের পেহেলগাম’। এখানে সিলেটের গোয়াইনঘাটের ওই ছোট্ট জনপদ নলজুরি ঘুরে আসা একজনের গল্প বলা হলো-
ঘড়িতে বেলা তখন ২টা। সিলেট শহর থেকে বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়ি। সঙ্গী আলোকচিত্রী ম্যাক সুমন। শুরুতে গন্তব্য ঠিক ছিল না। যেতে যেতেই চোখে ভেসে ওঠে গোয়াইনঘাটের নলজুড়ির দৃশ্য। পাহাড়, ঝরনা আর সবুজ প্রান্তর নিয়ে গোয়াইনঘাটের ছোট্ট এক জনপদ। কিছুদিন আগেও অল্প পরিচিত এলাকাটি এখন ভাইরাল। স্থানীয় লোকজন একে বলেন ‘খাসি হাওর’। কেউ বলেন খাসিয়া হাওর। মেঘালয় পাহাড়ে খাসিয়াদের আদি নিবাস। এ জন্যই ওই নাম।
জ্যৈষ্ঠের দুপুরে আকাশে সাদা-কালো মেঘ। সিলেট-তামাবিল সড়কের দুই পাশে জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়া ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। কিছতা দূরে মাঠে বোরো ধান ঘরে নেওয়ার ব্যস্ততা। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা জানান দিচ্ছে যেকোনো সময় ঝুম করে নামবে! এভাবে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে জৈন্তাপুরের আরেক সুন্দর জায়গা শ্রীপুরে পৌঁছাই।
শ্রীপুরের রাংপানি এখন সবার চেনাজানা। এই শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি আর আলুবাগান পার হয়েই নলজুড়ি। তামাবিল সড়কের এখানেই শুরু গোয়াইনঘাট উপজেলা। প্রায় ৫১ কিলোমিটার পেরিয়ে, দুই ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় পর আমরা পৌঁছাই নলজুড়ি বাজার। তখন বিকেলের আলো নরম হয়ে এসেছে। বাজারের বাঁ দিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। আর ডান দিকের এক কিলোমিটার মেঠো পথ ধরে এগোতেই সবুজে মোড়া খেলার মাঠ। মাঠ ঘেঁষা মেঘালয়ের জৈন্তা-খাসিয়া সবুজ পাহাড়।
পাহাড়ের পাদদেশে খেলার মাঠ। পাহাড়ের বুক ছুঁয়ে মাঠের দিকে নেমে এসেছে দুটি ঝরনা। মাঠ লাগোয়া খাসি খালে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ পানি। কেউ কেউ এটাকে নলজুড়ি খালও বলেন। জৈন্তাপুর উপজেলা ও গোয়াইনঘাট উপজেলাকে আলাদা করেছে এই খাল। পূর্বে জৈন্তাপুর, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট। মাঠে ক্রিকেট খেলা চলছে। কেউ ঘুরে ঘুরে মাঠ দেখছেন, কেউ আবার বসে বসে উপভোগ করছেন ঝরনাধারার দৃশ্য, খালের পানিতে নেমে কেউ কেউ গোসলও করছেন।
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ও সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে ব্যক্তিগত মোটরবাইক এবং সিএনজিতে করে সরাসরি যাওয়া যাবে মাঠের কাছে। সিলেট থেকে জাফলংগামী লোকাল বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। আর বিরতিহীন বাসে ১৫০ টাকায় পৌঁছানো যাবে নলজুড়ি বাজার পর্যন্ত। এখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যেতে পারেন নলজুড়ি মাঠ। মনে রাখবেন, পর্যটনস্থানটি ভারত সীমান্তবর্তী। তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ও স্থানীয়দের নির্দেশনা মেনে চলুন। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বর্ষাকালে ঝরনাটি আরও প্রমত্তা হয়ে ওঠে। মাঠ পর্যন্ত চলে আসে পানির ধারা। মাঠের পশ্চিমে চোখ রাখলেই দেখা যায় সারি সারি সুপারিগাছ। পাহাড়ের ঢালজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো বাতাসে দুলছে। গাছের পাতায় রোদের আলো পড়ছে, এই আলোছায়ার খেলা শুধু চোখে দেখলেই বোঝা যায়।
বারো মাসই সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে নলজুড়ি। যারা প্রকৃতিকে নিজের মতো রেখে তার সান্নিধ্যে নিতে চান, ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নির্জন জায়গায় সময় কাটাতে যাদের ভালো লাগে, তাদের জন্য নলজুড়ি হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য।
মধ্যে সীমানা টানতে পারেন, তারা কর্মক্ষেত্রে আরো সফল হন এবং মানসিকভাবেও অনেক বেশি স্থিতিশীল থাকেন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ