ঢাকা ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
মামলায় আসামি ৫৭৫, গ্রেফতার ১৬৪

গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ আরো একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৫

  • আপডেট সময় : ০৯:১২:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

গোপালগঞ্জ জেলার সড়কগুলো ফাঁকা, জনসমাগম নেই - ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকজন মারা গেছেন। গত বুধবার (১৬ জুলাই) আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত দুইটার দিকে মারা গেছেন।

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেলেন। এর আগে এ ঘটনায় নিহত হন, গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরো দুজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁরা হলেন, সুমন বিশ্বাস (৩০) ও আব্বাস আলী (৩০)। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে রমজান আলী মুন্সীর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানাপাড়ায়। তিনি মৃত আকবর মুন্সীর ছেলে। রমজান আলী রিকশাচালক ছিলেন।

আহত অবস্থায় রমজান মুন্সীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন তাঁর ভাই হীরা মুন্সী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ভাই রিকশাচালক। ঘটনার দিন গত বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর এলাকায় সিনেমা হলের পাশেই রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে ফেরার পথে তিনি সহিংসতার মধ্যে পড়েন এবং গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই দিবাগত রাত ২ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম বলেন, রমজান মুন্সীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।

গত বুধবার দিনভর দফায় দফায় গোপালগঞ্জে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালান কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ সদস্য ও তাঁদের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে সমাবেশস্থলে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে তিনটার দিকে ফেরার সময় হামলার শিকার হন এনসিপির নেতারা।

বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করে এনসিপির নেতারা। গত বুধবার রাত আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউয়ের সময় বাড়ানো হয়।

কারফিউর সময় বাড়লো, গ্রেফতার ১৬৪: গোপালগঞ্জে কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে। এদিকে গোপালগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮ থেকে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ শিথিলের সময় গোপালগঞ্জ শহরে বিভিন্ন যানবাহন চলতে দেখা যায়। জরুরি দরকারে গন্তব্যে যান মানুষ। মূল সড়কের পাশে ও গলির ভেতর বেশ কিছু দোকান খুলেন ব্যবসায়ীরা। তবে মার্কেটগুলো বন্ধ ছিল। বাজারের বেশিরভাগ দোকান খোলেনি।

শহরের বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, দোকান খুলতে না পাড়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তিনদিনে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল পচে গেছে। শুক্রবার তিন ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছি। কিন্তু এসময় আর কতটুকু বিক্রি করা যায়। আমরা চাই, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসুক। এর আগে গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ। পুলিশের সঙ্গে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ, জারি করা হয় কারফিউ। এখনো সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে সদর থানায় ৪৫ জন, মুকসুদপুর থানায় ৬৬ জন, কাশিয়ানী থানায় ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় ১২ জন। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, মারপিট ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাস নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত সাড়ে ৪০০- ৫০০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওসি জানান, ১৬ জুলাই সকালে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। এসময় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল লোক পুলিশের ওপর হামলা করে। তারপর তারা পুলিশ সদস্যদের মারপিট ও গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশের পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাসসহ ৫ পুলিশ আহত হন।

পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা, আসামি ৫৭৫: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহমদ বিশ্বাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক নারীকে দুই ভাই বিয়ে করে বললেন- আমরা গর্বিত

মামলায় আসামি ৫৭৫, গ্রেফতার ১৬৪

গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ আরো একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৫

আপডেট সময় : ০৯:১২:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকজন মারা গেছেন। গত বুধবার (১৬ জুলাই) আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত দুইটার দিকে মারা গেছেন।

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেলেন। এর আগে এ ঘটনায় নিহত হন, গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরো দুজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁরা হলেন, সুমন বিশ্বাস (৩০) ও আব্বাস আলী (৩০)। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে রমজান আলী মুন্সীর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানাপাড়ায়। তিনি মৃত আকবর মুন্সীর ছেলে। রমজান আলী রিকশাচালক ছিলেন।

আহত অবস্থায় রমজান মুন্সীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন তাঁর ভাই হীরা মুন্সী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ভাই রিকশাচালক। ঘটনার দিন গত বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর এলাকায় সিনেমা হলের পাশেই রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে ফেরার পথে তিনি সহিংসতার মধ্যে পড়েন এবং গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই দিবাগত রাত ২ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম বলেন, রমজান মুন্সীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।

গত বুধবার দিনভর দফায় দফায় গোপালগঞ্জে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালান কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ সদস্য ও তাঁদের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে সমাবেশস্থলে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে তিনটার দিকে ফেরার সময় হামলার শিকার হন এনসিপির নেতারা।

বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করে এনসিপির নেতারা। গত বুধবার রাত আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউয়ের সময় বাড়ানো হয়।

কারফিউর সময় বাড়লো, গ্রেফতার ১৬৪: গোপালগঞ্জে কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে। এদিকে গোপালগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮ থেকে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ শিথিলের সময় গোপালগঞ্জ শহরে বিভিন্ন যানবাহন চলতে দেখা যায়। জরুরি দরকারে গন্তব্যে যান মানুষ। মূল সড়কের পাশে ও গলির ভেতর বেশ কিছু দোকান খুলেন ব্যবসায়ীরা। তবে মার্কেটগুলো বন্ধ ছিল। বাজারের বেশিরভাগ দোকান খোলেনি।

শহরের বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, দোকান খুলতে না পাড়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তিনদিনে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল পচে গেছে। শুক্রবার তিন ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছি। কিন্তু এসময় আর কতটুকু বিক্রি করা যায়। আমরা চাই, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসুক। এর আগে গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ। পুলিশের সঙ্গে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ, জারি করা হয় কারফিউ। এখনো সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে সদর থানায় ৪৫ জন, মুকসুদপুর থানায় ৬৬ জন, কাশিয়ানী থানায় ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় ১২ জন। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, মারপিট ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাস নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত সাড়ে ৪০০- ৫০০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওসি জানান, ১৬ জুলাই সকালে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। এসময় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল লোক পুলিশের ওপর হামলা করে। তারপর তারা পুলিশ সদস্যদের মারপিট ও গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশের পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাসসহ ৫ পুলিশ আহত হন।

পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা, আসামি ৫৭৫: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহমদ বিশ্বাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।