নারী ও শিশু ডেস্ক: ইচ্ছা ছিল শিক্ষিকা হবেন। কিন্তু হয়েছেন উদ্যোক্তা। উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের (উই) সঙ্গে যুক্ত হয়ে গৃহিণী রাজিয়া সুলতানার তৈরি কুশন কভার, সিকা, দোলনা, শোপিস, ড্রিমক্যাচার, ওয়াল মিরর, ব্যাগ, সিøপার, পাটের ব্যাগ, প্যাকেজিং ব্যাগ ও ঝাড়বাতি অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, কাতার, সৌদি আরব ও ফ্রান্সসহ ৯ দেশে সরাসরি বা বায়ারের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে; পেয়েছেন তিনবার জয়িতার উপাধি। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুর মুন্সিপাড়ার গৃহবধূ রাজিয়া সুলতানা।
স্বামী মালেকুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী। তাদের দুই ছেলেমেয়ে। রাজিয়া একজন নারী কর্মচারী নিয়ে কখনো ইউটিউব দেখে, কখনোবা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরির চেষ্টা করেন। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে পাটজাত পণ্য উৎপাদনের কাজ পুরোপুরি আয়ত্ব করে ফেলেন। এরপরই শুরু হয় তার পথচলা।
২০২০ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ফেসবুকে খোলেন নান্দনিক ক্রাফট নামে একটি পেজ। এরপর মেলায় অংশ নিয়ে পণ্যের পরিচিতি ও বিক্রি বাড়ে। এখন তার কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ১০ নারী শ্রমিক। তারা মাসে ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান।
সারা বছর পণ্য উৎপাদন এবং নারী কর্মচারীদের বেতন প্রদান এবং খরচ বাদে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে রাজিয়া সুলতানার আয় হচ্ছে এখন বছরে আট লাখ টাকা।
রাজিয়া সুলতানার কারখানার নারী শ্রমিক রোজিনা বেগম বলেন, আমি আগে অভাবের মধ্যে ছিলাম। তারপর ৪ বছর আগে নান্দনিক ক্রাফট কারখানায় কাজ শুরু করি। এখানে কাজ করে মাসে ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারী ছিলাম আমি। এখন এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমি সংসারে সহায়তা করার পাশাপাশি সন্তানের পড়ালেখা চালাচ্ছি।
আরেক শ্রমিক তানজিলা আক্তার বলেন, আমি একটি কলেজে পড়ালেখা করি, সেটার পাশাপাশি এখানে কাজ করি। আমরা বাবা নিম্নআয়ের মানুষ, আমাদের পড়ালেখা চালাতে তার কষ্ট হয়। পরে আমি নান্দনিক ক্রাফটের খোঁজ পেয়ে এখানে যুক্ত হই। এখানে যুক্ত হয়ে আমি মাসে ১২ হাজার টাকার মতো বেতন পাই। এটা দিয়ে নিজের পড়ালেখা চালানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তা করছি।
শ্রমিক রাহেদা বেগম বলেন, আমি অভাবের সংসারে বড় হয়েছি। এরপর আমার বিয়ে হয়, বিয়ের পর স্বামীর সংসার কিছু দিন ভালো চললেও পরে অভাব শুরু হয়। পরে রাজিয়া আপার নান্দনিক ক্রাফটের কথা শুনে এখানে এসে কাজ শুরু। এখানে কাজ শুরু করার পর থেকে আমি পরিবার নিয়ে খুব ভালোই আছি।
নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা করছিলাম কি করা যায়। পরে মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষিকা পেশায় যেতে মন স্থির করি। কিন্তু শিক্ষিকা হবার চাকরি পাওয়াও যে সহজ নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নারী উদ্যোক্তা হয়ে যাই। ফেসবুকে পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স নামে একটি গ্রুপে যুক্ত হই। ওখান থেকে অনুপ্রেরণা পাই। সেখান থেকে পাটসুতা দিয়ে পণ্য তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করি। পরে একটি মেলায় অংশগ্রহণ করে আমার পরিচিত বাড়ে সেখান থেকে আমার বিক্রি আরও বেড়ে যায়। পরে আমি নান্দনিক ক্রাফট নামে একটি কারখানা দেই। তিনি বলেন, আমার কারখানায় ১০ নারী শ্রমিক দৈনিক কাজ করছে। আমার এটির পিছনে আমার স্বামী বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। আমার তৈরি পাটের চট ও সুতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। সৌদি আরব, কাতার, জাপানসহ ৯টি দেশে যাচ্ছে। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনবার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছি। আমি চাই সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে যাক তারা ভালো কিছু করুক। সমাজের বিভিন্ন নারীকে আমিও ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করি। পাটজাত পণ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পাটের ওপর অন্য রকম একটা ভালো লাগা জন্মেছে।
সৈয়দপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরনাহার শাহজাদী বলেন, আমরা উদ্যোক্তা নারীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি। আমরা নারীদের এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষকসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নারীদের উদ্যোক্তা বা আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। শহরে রাজিয়া সুলতানা একজন নারী উদ্যোক্তা আছেন, তিনি আমাদের অধিদপ্তর থেকে তিনবার জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ


























