ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

গৃহপরিচারিকাদের প্রতি মানবিক আচরণ কাম্য

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১৮ বার পড়া হয়েছে

প্রদীপ সাহা : অনেকেই বাসাবাড়িতে কাজের মেয়ে রাখেন নিজেদের কাজের সহযোগিতার জন্য। আভিধানিক অর্থে এসব কাজের মেয়েকে বলা হয় ‘গৃহপরিচারিকা’। আমাদের দেশে দারিদ্র্যের কারণে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য এরা বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে।
কর্মসংস্থানের অভাবেও অনেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য হয়। মূলত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে গৃহপরিচারিকা রাখা হয়। শহরে সচ্ছল পরিবারের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে গৃহপরিচারিকাদের ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকে। অনেক বাড়িতে একের বেশিও গৃহপরিচারিকা রাখা হয়। এ উপমহাদেশে গৃহস্থালির কাজে বাড়িতে গৃহপরিচারিকা রাখার প্রচলন দীর্ঘদিনের। গৃহপরিচারিকাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাকা হয় ‘বুয়া’ নামে।
অথচ দেশ বিভক্তির আগে, এমনকি ১৯৪৭ সালের বেশ কিছুকাল পরেও গৃহপরিচারিকাদের নামকরণে ‘বুয়া’ শব্দটি শোনা যায়নি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রায় সবার মুখে মুখে ‘বুয়া’ নামটি চালু হয়ে গেছে। অতীতে উচ্চবিত্ত-ধনী পরিবারে কাজের লোক রেখে কাজের ধরন অনুসারে তা ভাগাভাগি করে দেওয়া হতো এবং কাজের লোকদের বিভিন্ন নামকরণ করা হতো। যেমন রান্নার কাজে ছিল ‘বাবুর্চি’। ঘরদোর পরিষ্কার করা, কাপড় কাচা, বাড়িঘর গোছগাছ ও আসবাবপত্র পরিষ্কার ইত্যাদির দায়িত্ব দেওয়া হতো একজনের ওপর। খাবার পরিবেশন, কে কী খাবার খাবে এসব তদারকি ও অতিথিদের আপ্যায়ন, বিছানা করা ও তোলা ইত্যাদি করত ‘সামনেওয়ালী’।
সদ্যোজাত শিশু ও ছোট বাচ্চাদের লালন-পালনে নিয়োজিত থাকত ‘খেলাই’। একটু বড় বাচ্চাদের দেখাশোনা করত ‘আয়া’। সে সময় উঠতি ধনিক শ্রেণির ঘরেও আয়া-বাবুর্চি রাখার রেওয়াজ ছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারে যেসব মেয়ে কাজ করত, তাদের সংসারের সবরকম কাজ করতে হতো। সে সময় যারা রান্নায় পারদর্শী ছিল, তাদের চাহিদা ছিল বেশি। আরেক শ্রেণির কাজের মেয়ে ছিল, তারা বাড়ি বাড়ি বাজার করে দিত, তারা ছিল পঞ্চাশোর্ধ। সে সময় কাজের মেয়েদের ৯০ ভাগই ছিল বয়স্ক। কিন্তু এখন বাসাবাড়িতে ১০-১১ বছর থেকে ৩০-৩৫ বছর, এমনকি যে কোনো বয়সের কাজের মেয়েই রাখা হয়। এটিকে কেউ কোনো সমস্যা মনে করে না। বর্তমানে কাজের মেয়েদের নিয়ে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে মাঝেমাঝে।
এদের কারণে বাড়ির ‘বেগম সাহেব’ বা ছেলেমেয়েদের অনেক সময় জীবন দিতেও হয়। পাশাপাশি গৃহপরিচারিকা বা কাজের মেয়েদের ওপরও চলে হত্যা, ধর্ষণ ও বিভিন্ন অমানবিক ঘটনা। আজকাল পত্রিকার পাতায় প্রায়ই থাকে গৃহপরিচারিকাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের খবর। আমাদের দেশের গৃহপরিচারিকারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যায্য পারিশ্রমিক ও মর্যাদা পায় না। কিন্তু অতীতে এমনটি ছিল না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আজ পালটে গেছে অনেক কিছু। পরিবর্তন হয়েছে সমাজ ও সমাজব্যবস্থা। তাই অতীত ও বর্তমানের গৃহপরিচারিকাদের মধ্যে এসেছে বিরাট ব্যবধান। গৃহপরিচারিকাদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তারা যেন উপযুক্ত মর্যাদা ও পারিশ্রমিক পেয়ে সাধারণ পেশার মতো সম্মানজনকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। গৃহপরিচারিকারা আমাদের পরিবারেরই সদস্য। আসুন, আমরা সবাই গৃহপরিচারিকাদের প্রতি সদয় হই এবং মানবিক আচরণসহ তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

গৃহপরিচারিকাদের প্রতি মানবিক আচরণ কাম্য

আপডেট সময় : ০২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

প্রদীপ সাহা : অনেকেই বাসাবাড়িতে কাজের মেয়ে রাখেন নিজেদের কাজের সহযোগিতার জন্য। আভিধানিক অর্থে এসব কাজের মেয়েকে বলা হয় ‘গৃহপরিচারিকা’। আমাদের দেশে দারিদ্র্যের কারণে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য এরা বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে।
কর্মসংস্থানের অভাবেও অনেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য হয়। মূলত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে গৃহপরিচারিকা রাখা হয়। শহরে সচ্ছল পরিবারের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে গৃহপরিচারিকাদের ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকে। অনেক বাড়িতে একের বেশিও গৃহপরিচারিকা রাখা হয়। এ উপমহাদেশে গৃহস্থালির কাজে বাড়িতে গৃহপরিচারিকা রাখার প্রচলন দীর্ঘদিনের। গৃহপরিচারিকাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাকা হয় ‘বুয়া’ নামে।
অথচ দেশ বিভক্তির আগে, এমনকি ১৯৪৭ সালের বেশ কিছুকাল পরেও গৃহপরিচারিকাদের নামকরণে ‘বুয়া’ শব্দটি শোনা যায়নি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রায় সবার মুখে মুখে ‘বুয়া’ নামটি চালু হয়ে গেছে। অতীতে উচ্চবিত্ত-ধনী পরিবারে কাজের লোক রেখে কাজের ধরন অনুসারে তা ভাগাভাগি করে দেওয়া হতো এবং কাজের লোকদের বিভিন্ন নামকরণ করা হতো। যেমন রান্নার কাজে ছিল ‘বাবুর্চি’। ঘরদোর পরিষ্কার করা, কাপড় কাচা, বাড়িঘর গোছগাছ ও আসবাবপত্র পরিষ্কার ইত্যাদির দায়িত্ব দেওয়া হতো একজনের ওপর। খাবার পরিবেশন, কে কী খাবার খাবে এসব তদারকি ও অতিথিদের আপ্যায়ন, বিছানা করা ও তোলা ইত্যাদি করত ‘সামনেওয়ালী’।
সদ্যোজাত শিশু ও ছোট বাচ্চাদের লালন-পালনে নিয়োজিত থাকত ‘খেলাই’। একটু বড় বাচ্চাদের দেখাশোনা করত ‘আয়া’। সে সময় উঠতি ধনিক শ্রেণির ঘরেও আয়া-বাবুর্চি রাখার রেওয়াজ ছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারে যেসব মেয়ে কাজ করত, তাদের সংসারের সবরকম কাজ করতে হতো। সে সময় যারা রান্নায় পারদর্শী ছিল, তাদের চাহিদা ছিল বেশি। আরেক শ্রেণির কাজের মেয়ে ছিল, তারা বাড়ি বাড়ি বাজার করে দিত, তারা ছিল পঞ্চাশোর্ধ। সে সময় কাজের মেয়েদের ৯০ ভাগই ছিল বয়স্ক। কিন্তু এখন বাসাবাড়িতে ১০-১১ বছর থেকে ৩০-৩৫ বছর, এমনকি যে কোনো বয়সের কাজের মেয়েই রাখা হয়। এটিকে কেউ কোনো সমস্যা মনে করে না। বর্তমানে কাজের মেয়েদের নিয়ে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে মাঝেমাঝে।
এদের কারণে বাড়ির ‘বেগম সাহেব’ বা ছেলেমেয়েদের অনেক সময় জীবন দিতেও হয়। পাশাপাশি গৃহপরিচারিকা বা কাজের মেয়েদের ওপরও চলে হত্যা, ধর্ষণ ও বিভিন্ন অমানবিক ঘটনা। আজকাল পত্রিকার পাতায় প্রায়ই থাকে গৃহপরিচারিকাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের খবর। আমাদের দেশের গৃহপরিচারিকারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যায্য পারিশ্রমিক ও মর্যাদা পায় না। কিন্তু অতীতে এমনটি ছিল না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আজ পালটে গেছে অনেক কিছু। পরিবর্তন হয়েছে সমাজ ও সমাজব্যবস্থা। তাই অতীত ও বর্তমানের গৃহপরিচারিকাদের মধ্যে এসেছে বিরাট ব্যবধান। গৃহপরিচারিকাদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তারা যেন উপযুক্ত মর্যাদা ও পারিশ্রমিক পেয়ে সাধারণ পেশার মতো সম্মানজনকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। গৃহপরিচারিকারা আমাদের পরিবারেরই সদস্য। আসুন, আমরা সবাই গৃহপরিচারিকাদের প্রতি সদয় হই এবং মানবিক আচরণসহ তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করি।