লাইফস্টাইল ডেস্ক: গৃহকর্মীরা অনেক সময় পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে ওঠে-বিপদে পাশে দাঁড়ায়, সাহায্য করে। কিন্তু বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। বাস্তব জীবনে কিছু গৃহকর্মী অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। সম্প্রতি বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গৃহকর্মীর আড়ালে ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে-মূল্যবান জিনিস চুরি হচ্ছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রাণও ঝুঁকিতে পড়ছে।
তাই কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এতে উভয় পক্ষের দায়িত্ব স্পষ্ট থাকে, এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়।
সঠিক তথ্য নিন
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার পরিচয় যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য এবং ব্যক্তির অন্যান্য পরিচয়প্রমাণ সংগ্রহ করুন। এরপর এই তথ্যগুলো নিকটস্থ থানায় জমা দিন এবং নিজের কাছে কপি রাখুন। এতে যদি গৃহকর্মী পূর্বে কোনো অপরাধে জড়িত থাকে, পুলিশ সহজেই তাকে শনাক্ত করতে পারবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
পূর্ববর্তী কর্মস্থল যাচাই
গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই পূর্ববর্তী কর্মস্থল সম্পর্কে বিস্তারিত যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় কাজ করেছে, কেন চাকরি ছাড়েছে-এসব তথ্য জেনে নিন। প্রয়োজনে পূর্বের কর্মস্থলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা নিশ্চিত করুন। এতে গৃহকর্মীর চরিত্র ও যোগ্যতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
কাজের লোকের পরিবারিক তথ্য যাচাই
গৃহকর্মীর পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার স্থায়ী ঠিকানা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, কারা কোথায় থাকে-এসব জেনে নিন। প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে পারেন সে আসলে ওই ঠিকানায় বসবাস করে কি না। এখন হয়তো এগুলো ঝামেলা মনে হবে, কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে এই তথ্যগুলোই আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
সিসি ক্যামেরা স্থাপন
বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেইন গেইটে সিসি ক্যামেরা লাগানো খুব কার্যকর। এতে অপরিচিত কারোর যাতায়াত হলে তা সহজেই নজরে আসে। প্রয়োজন মনে করলে ঘরের ভেতরেও ক্যামেরা স্থাপন করতে পারেন, যাতে আপনার অনুপস্থিতিতেও কাজের বুয়ার আচরণ ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা যায়। এটি আপনাকে বাড়তি নিরাপত্তা ও মানসিক স্বস্তি দেবে।
মানসিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই
গৃহকর্মীর মানসিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। যদি কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেন, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া, তার চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। এতে বোঝা সহজ হবে সে লোভী বা অসৎ মনোভাবের কি না।
মূল্যবান জিনিসপত্রের নিরাপত্তা
বাসায় মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার এবং টাকা কাজের বুয়া বা গৃহকর্মীর অগোচরে রাখুন। লকারের চাবি সবসময় নিজের কাছে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে লকার বা আলমারি যে রুমে আছে সেই রুম আলাদাভাবে লক করুন। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন, কাজের বুয়া মোবাইলে সন্দেহজনক কারোর সঙ্গে কথা বলছে কি না বা তার কাছে কেউ অজানা ব্যক্তি দেখা দিয়েছে কি না।
বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নেওয়া
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার প্রতিষ্ঠান সাধারণত প্রাথমিক যাচাই, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং প্রয়োজনে বদলির সুবিধা প্রদান করে। তবে নিশ্চিত হতে হবে এজেন্সি বিশ্বাসযোগ্য, লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং পূর্ববর্তী গ্রাহকদের রিভিউ ভালো। নিয়োগের শর্তাদি পরিষ্কারভাবে জানা থাকলে কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় বন্ধু, পরিবার বা প্রতিবেশীদের মাধ্যমে গৃহকর্মী নেওয়া। এতে গৃহকর্মীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়।
সূত্র: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)
এসি/আপ্র/০৯/১২/২০২৫
























