প্রত্যাশা ডেস্ক : পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ করার দাবি নিয়ে লংমার্চ সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমাবেশ চলাকালে গুলির ঘটনা ঘটে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো। এদিকে আহত ইমরান হাসপাতালে বলেন, ‘আল্লাহ আমায় আরও একটা জীবন দিলেন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের ওই সমাবেশস্থল থেকে লাহোরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের নেতা এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
বিবৃতিতে ইমরান বলেন, ‘আল্লাহ আমায় আরও একটা জীবন দিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আবার লড়াই করব।’ ওয়াজিরাবাদের ওই সমাবেশস্থলে গুলির ঘটনায় আহত হন ইমরানের দল পিটিআইয়ের সিনেটর ফয়জল জাভেদ। গোটা ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত নয়জন। পিটিআইয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি দাবি করেছেন, ইমরান খানের ওপর একে-৪৭ দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে ইমরান খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে লাহোরের লিবার্টি চকে কর্মী-সমর্থকদের জড়ো হতে বলেছেন পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমাবেশ চলাকালে গুলির ঘটনা ঘটে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় ইমরান খানকে একটি এসইউভিতে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। আক্রমণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারী ইমরান খানকে লক্ষ্য করেই গুলি চালিয়েছিল। গুলি করার সময় একটি কন্টেইনারের ওপর দাঁড়িয়ে লং মার্চের আহ্বান জানাচ্ছিলেন পিটিআই দলের প্রধান। পিটিআইয়ের নেতা ইমরান ইসমাইল বলেছেন, দলের প্রধান ইমরান খানের পায়ে তিন থেকে চার বার গুলি করা হয়েছে। পাকিস্তানের বোল টিভিতে কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন, হামলার সময় তিনি ইমরানের পাশে ছিলেন। ফয়সাল জাভেদও ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং ইমরানের পায়ে তিন থেকে চারটি গুলি লেগেছে। তিনি আরও বলেন, আক্রমণকারী সরাসরি কন্টেইনারের সামনে ছিল এবং একে-৪৭ দিয়ে গুলি চালাচ্ছিল। ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ২০০৭ সালে একই ধরণের সমাবেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনাটি তারই পুনরাবৃত্তি বলছেন বিশ্লেষকরা। জিও নিউজের খবরে বলা হয়, গুলির শব্দের পর আল্লাহওয়ালা চকে তার অভ্যর্থনা শিবিরের কাছে বিশৃঙ্খল দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। আহতদের মধ্যে দলের অন্তত আরও চার নেতা রয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের নিন্দা
এদিকে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবে পিটিআইর লংমার্চে হামলায় ইমরান খান আহত হওয়ার পর তিনি এই নিন্দা জানান। ডন এই খবর জানিয়েছে। ইমরান খানের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় শাহবাজ শরিফ নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন দিতে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি। পিটিআই চেয়ারম্যান ও অপর আহতদের সুস্থতার জন্য আমি দোয়া করছি। তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ও তদন্তের জন্য পাঞ্জাব সরকারকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইমরান খান নিরাপদ আছেন কিন্তু পায়ে কয়েকটি গুলি লেগেছে। আশা করি তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। এক ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানের আওয়ামী মুসলিম লিগ নেতা শেখ রশিদ দেশটির জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। হামলায় গুলিবিদ্ধ হওয়া পিটিআই নেতা রক্তাক্ত পোশাকে জিও টিভিকে হাসপাতাল থেকে বলেছেন, আমাদের দলের অনেক নেতা আহত হয়েছেন। একজন নিহত হয়েছেন।
এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে সভা-সমাবেশ করে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন ইমরান খান। এই দাবিতে গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডে শুরু হয়ে লংমার্চটি ধীরে ধীরে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছানোর কথা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক টুইটবার্তায় শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমি পিটিআই চেয়ারম্যানের ওপর বন্দুক হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
‘ইতোমধ্যে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি, এখনই যেন এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে সংঘাতের কোনো স্থান নেই।’
ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের লিবার্টি চক থেকে লংমার্চ শুরু করে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনাসাফ (পিটিআই)। ৪ নভেম্বর ইসলামাবাদের রাওয়াত এলাকায় শেষ হওয়ার কথা ছিল এই কর্মসূচির। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে লংমার্চের শুরু থেকেই গাড়ি বহরের সামনে ছিলেন ইমরান।
লংমার্চের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদ শহরে সমাবেশ করছিলেন ইমরান খান। সেই সময়েই গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি তার পা লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হামলার সময় প্রাণঘাতী বন্দুক একে ৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিল হামলাকারী। এছাড়া হামলাকারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে পিটিআইয়ের একজন কর্মী নিহত হন, আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। ঘটনার পরপরই পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। জিও টিভির জানিয়েছে, হামলার আগে যেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন হামলাকারী ওই ব্যক্তি, সেই স্থানটিতে তিনি একাই ছিলেন।
গুলিতে আহত ইমরান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ