ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের ফেরার অপেক্ষায় স্বজনেরা

  • আপডেট সময় : ০৭:২২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১
  • ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন-বিক্ষোভ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালিত হয়। তবে গতকাল শুক্রবার সকালে জায়গাটিতে এমন একটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, যা সবাইকে আবেগতাড়িত করেছে। নানা সময়ে ‘গুমের’ শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এসেছিলেন তাদের মনের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরতে। একেকটি পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য দেয়ার সময় কান্নায় অনেকটা ভারী হয়ে ওঠে প্রেসক্লাব এলাকার পরিবেশ।
দেশে নানা সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি জানালেন শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতারা। তাদের সবারই ভাষ্য, কোথায় কেমন আছেন তাদের নিখোঁজ স্বজন কিছুই তারা জানেন না। প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘গুম সপ্তাহ’। মানববন্ধনে ২০১৯ সালের ২০ জুন থেকে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করেছি আমরা। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।’
পরিবারে বাবার শূন্যতার কথা তুলে ধরে আনিসা বলেন, ‘আব্বু হারিয়ে যাবার পর ছোট ভাই দুই মাস ঘুমাতে পারেনি। আম্মু কিছু বলতে পারত না। শুধু বলতো, ঘুমাও আব্বু এসে কলিং বেল বাজাবে। এভাবে তো দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আব্বু তো কলিং বেল বাজায় না।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিসা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, ‘আপনি একবার দেখেন। আমরা কেউ মিথ্যা বলিনি। আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আব্বু ছাড়া আমরা কীভাবে থাকব।’ আনিশার মতো সাথিকা সরকার এসেছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া সাথিকার বাবা মো. সোহেল আট বছর আগে গুম হয়েছেন। এখনো তার খোঁজ পায়নি তার পরিবার।
সাথিকা বলে, ‘আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনে নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।’ গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।’
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমার বাবা ও তার গাড়িচালক গুম হন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’ ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের ফেরার অপেক্ষায় স্বজনেরা

আপডেট সময় : ০৭:২২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন-বিক্ষোভ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালিত হয়। তবে গতকাল শুক্রবার সকালে জায়গাটিতে এমন একটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, যা সবাইকে আবেগতাড়িত করেছে। নানা সময়ে ‘গুমের’ শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এসেছিলেন তাদের মনের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরতে। একেকটি পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য দেয়ার সময় কান্নায় অনেকটা ভারী হয়ে ওঠে প্রেসক্লাব এলাকার পরিবেশ।
দেশে নানা সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি জানালেন শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতারা। তাদের সবারই ভাষ্য, কোথায় কেমন আছেন তাদের নিখোঁজ স্বজন কিছুই তারা জানেন না। প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘গুম সপ্তাহ’। মানববন্ধনে ২০১৯ সালের ২০ জুন থেকে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করেছি আমরা। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।’
পরিবারে বাবার শূন্যতার কথা তুলে ধরে আনিসা বলেন, ‘আব্বু হারিয়ে যাবার পর ছোট ভাই দুই মাস ঘুমাতে পারেনি। আম্মু কিছু বলতে পারত না। শুধু বলতো, ঘুমাও আব্বু এসে কলিং বেল বাজাবে। এভাবে তো দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আব্বু তো কলিং বেল বাজায় না।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিসা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, ‘আপনি একবার দেখেন। আমরা কেউ মিথ্যা বলিনি। আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আব্বু ছাড়া আমরা কীভাবে থাকব।’ আনিশার মতো সাথিকা সরকার এসেছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া সাথিকার বাবা মো. সোহেল আট বছর আগে গুম হয়েছেন। এখনো তার খোঁজ পায়নি তার পরিবার।
সাথিকা বলে, ‘আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনে নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।’ গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।’
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমার বাবা ও তার গাড়িচালক গুম হন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’ ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’