নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের আর্তি সরকার শুনতে না পেলে এর পরিণতি ‘শুভ’ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আবদুল মঈন খান।
গতকাল বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন। এ দিবসকে ‘বিষাদময়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ আগে আপনারা দেখেছেন কোমলমতি শিশুরা তারা মাইকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাদের বাবার স্মৃতি নিয়ে। একজন বলেছে, ‘এই গুম দিবস চাই না, আমি বাবা দিবস ফিরে পেতে চাই’। কল্পনা করেছেন, একটি শিশু কি মর্ম যাতনায় এই কথাটি বলতে পারে। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। “অন্যথায় এই কালের ক্রন্দন ধ্বনি এই সরকার শুনতে না পায়, এই ক্রন্দনের বন্যায় আজকের স্বৈরাচারী সরকার ভেসে যাবে।” বিকাল তিনটা থেকে এক ঘণ্টার এ মানববন্ধনে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের একপাশে নেতাকর্মীরা মুখে কাপড় বেঁধে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। ছিলেন গুম হওয়ার পরিবারের সদস্যরাও।
মানববন্ধনে মঈন খান বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিক নির্দেশনায় এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রদত্ত কর্মসূচি অনুসরণ করে আমরা এখানে এই সরকারকে বিদায় দেব শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ। ‘‘দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, এদেশে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে।” পরিবারের পক্ষ থেকে ‘গুম’ দাবি করা পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে হৃদি বলেন, ‘‘আমার বুকের সামনে এই ছবিটি আমার বাবার। আমি বাবাকে ১০ বছর দেখি না। আমি আমার পাপ্পাকে ফেরত চাই। আর ভালো লাগছে না আমার। বাবাকে আপনারা ফিরিয়ে দিন। আর গুম দিবস পালন করতে চাই না, বাবা দিবস ফেরত চাই।” ‘গুম’ হওয়া মাহফুজুর রহমান সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার বাবাকে আজকে ১০ বছর ধরে দেখি না। আমি ছোট কালে বাবাকে দেখি নাই। বাবা ছাড়া ভালো লাগে না। ‘‘আমি খুব কষ্টে আছি। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন, আমি আর কিছু চাই না।” এছাড়া ‘গুম’ দাবি করা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়া, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বড় ভাই লোটাস, মিরাজ খানের স্ত্রী আমেনা আখতার বৃষ্টি তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানের দাবিতে এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা ছাড়াও দেশের সব মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেধে মৌন মিছিল করেন।
গুম’ ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকারের ‘জবাব’ চান মঈন খান
জনপ্রিয় সংবাদ