কুমিল্লা সংবাদদাতা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গুপ্ত স্বৈরাচার থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আজকে আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে, সেটি হচ্ছে, বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হতে হবে। আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশ গঠন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, আমরা যদি সবাই আজকে ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা যদি গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সব ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা যদি দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে দেশ স্বাধীনের পর যেভাবে স্বৈরাচার চেপে বসেছিল, ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচন দিয়ে, ওয়ান-ইলেভেনের ফলে তথাকথিত নির্বাচন দিয়ে যেভাবে স্বৈরাচার দেশের কাঁধে চেপে বসেছিল, যদি আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে বলা যায় না, আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর এক স্বৈরাচার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনকে বিতাড়িত করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে আবার স্বৈরাচার এসেছে। জনগণ আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছে। বিগত ১৫ বছর আরেক স্বৈরাচার চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচারকেও বিতাড়িত করেছে জনগণ। কাজেই জনগণের চাওয়া অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে।
দেশকে সবার ঘর উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, একটি ঘর তৈরির জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। সবাই মিলে, শ্রমিকেরা মিলে যখন কাজ করে, তখন একটি সুন্দর ঘর হয়। কিন্তু একটি ঘরকে যদি ধ্বংস করে দিতে হয়, তখন কিন্তু বেশি লোকের প্রয়োজন লাগে না। এই দেশটি হচ্ছে আপনার, আমার—সবার ঘর। এই ঘরে ডাকাত পড়েছিল ১৫-১৬ বছর ধরে। সেই ডাকাতকে বাংলাদেশের জনগণ বিতাড়িত করেছে। এখন বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। দেশগঠনের শক্তি হচ্ছে জনগণ। তাই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।
সভা-সমাবেশ করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নেতা-কর্মীদের দুজন, তিনজন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের সমর্থন পেলে কীভাবে দেশকে পুনর্গঠন করবে। কীভাবে জনগণের সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবে, কীভাবে যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলবে, কীভাবে নারীদের আমরা ক্ষমতায়ন করব, কীভাবে কৃষকদের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে, কীভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলবে। কৃষক-তরুণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। সেটি ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে, জনসভা করে না। বিএনপির এখন লক্ষ্য ঐক্য, জনগণ এবং দেশগঠন।
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছর আমরা দেশের মানুষকে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, স্বৈরাচার দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাহলে সামনে কী? এখন সামনে হচ্ছে দেশগঠন। সামনে মূল কাজ হচ্ছে দেশকে পুনর্গঠন করা। দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয়, দেশকে যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ নগরের টাউন হল মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও দুপুরে থেকে দলে দলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বেলা আড়াইটার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে নেতা-কর্মীরা কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন। এতে দুপুরের পর থেকেই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধক ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ (বুলু)। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহেরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমিন-উর-রশিদ (ইয়াছিন), কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার জাহান ভূঁইয়া।
সানা/আপ্র/২৭/০৯/২০২৫