ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ২০১৭ সাল থেকেই স্কুলজীবনে স্কিপিং রোপ খেলা শুরু। একসময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপ খেলায় অংশ নিয়ে প্রথম হন। পরে বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিলেও কোনো কারণে তা বাতিল করা হয়। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেন একদিন এ খেলায় অংশ নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়বেন।
এরপর থেকেই বাসার আশপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছেন সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছেন। একসময় নিজেকে এ খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে আবেদন করেন। প্রথমে স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি ইভেন্টে চ্যালেঞ্জ করেন। একটি ৩০ সেকেন্ডের, অন্যটি ১ মিনিটের ওপর।
পারফরম্যান্স দেখে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করে। গিনেস বুকে এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও তিনি করেছেন ১৪৫ বার।
আরেকটি অন্য ইভেন্টে ১ মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও তিনি সেই রেকর্ড ভেঙে করেছিলেন ২৫৮ বার। এ দুটি রেকর্ড গড়ে সনদপত্র হাতে পান ২০২১ সালের ২৯ জুলাইয়ে।
এরমধ্যে এক পায়ে ১ মিনিটে স্কিপিং রোপে ২৫৮ বার লাফানোর রেকর্ড ভেঙে ফেলেন এক বিদেশি। তিনি ওই ইভেন্ট চ্যালেঞ্জ করেন। পরে এক পায়ে ১ মিনিটে স্কিপিং রোপে ২৬২ বার লাফিয়ে রেকর্ড গড়েন।
এর আগে স্কিপিং রোপ এক জাম্পে দুইবার রশি ঘোরানো ইভেন্টে ৩ মিনিটে ৪৫৮ বার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন ২০২১ সালের ১০ মার্চে। এ দুটি রেকর্ডের সনদপত্র ডাকযোগের মাধ্যমে হাতে পান রোববার (২৯ মে)। মোট চারবার গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছেন এ যুবক।
ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়া এ যুবক আর কেউ নন। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাসেল ইসলাম (২০)।
রাসেল সিরাজপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
এ কৃতিত্বের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হন রাসেল ইসলাম। তার সফলতায় উৎফুল্ল তার পরিবার।
রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘গরিব হওয়া সত্ত্বেও ছেলেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। একান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে সে চারবার বিশ্ব রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে!’
রাসেলের বড় ভাই আরিফ বলেন, ‘প্রথমে বিশ্বাস হতো না রাসেল এত বড় কিছু অর্জন করতে পারবে। প্রথমবার যখন সে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দুটি সার্টিফিকেট পায়, তখন থেকেই তার প্রতি আমার ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আশা করছি সে আরও ভালো করবে ও বড় পর্যায়ে যেতে পারবে।’
এ বিষয়ে রাসেল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রোপ স্কিপিং খেলায় এবার দিয়ে চারবার গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছি। তবে শুধু চারটি নয়, এ ধরনের আরও অনেক বিশ্ব রেকর্ড করে বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করি সবাই আমার পাশে থাকবেন।’
এমন কৃতিত্বে রাসেলকে সাধুবাদ জানান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাসেলের এ খেলার বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে।’
রাসেলের স্কিপিং রোপ খেলায় এবার দিয়ে চারটি বিশ্ব রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান আসিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাসেলকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সে যেন এ খেলাটি চালিয়ে যেতে পারে। তার কৃতিত্বের বিষয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।’
গিনেস বুকে চারবার নাম লেখালেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ