ঢাকা ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে চাঁদা আদায় করতেন তারা

  • আপডেট সময় : ১১:৩২:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২
  • ১৪২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে যাত্রী বেশে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে আসছিল একটি চক্র। এরপর গাড়ির মালিকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কাগজপত্র ফেরত দিতে চাওয়া হতো চাঁদা। কোনো ক্ষেত্রে কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মাসিক চাঁদা দিতে পরিবহন মালিকদের বাধ্য করা হতো। কখনো বা চাঁদা না দিলে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হতো। প্রায় দুই বছর ধরে এই অভিনব পন্থায় চাঁদা আদায় করা চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার দিবগত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন— রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), শুকুর আলী (২৮), হৃদয় হোসেন (২১) ও শামিম (২৫)।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালীবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, একটি চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকার মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন এবং রবরব পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাগজপত্র চুরি করে আসছিল। তারা বাসে যাত্রীবেশে উঠে এবং অভিনব কায়দায় বাসের ব্লুবুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করতো। এরপর গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও ড্রাইভারদের নম্বর সংগ্রহ করে চোরাইকৃত প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা ও চালকদের মেরে ফেলার হুমকি দেন চক্রের সদস্যরা। কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকরা এক পর্যায়ে প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫-৭ হাজার টাকা দিতেন। টাকা পেয়ে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে ওই চক্র। সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আটকে রাখা কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে। মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হলে চক্রের মূল হোতা তুফান পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দেন। তিনি ফোনে বলেন, ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিকেরা মাসিক চাঁদা দেয়, কোনো পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা না দিলে আমি গাড়ির কাগজ চুরি করেই যাব, ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে পারবে না। ’
অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু তাতেও কোননো ফল না পাওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে অবহিত করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুর থেকে তুফান পরিচয়দানকারী রাকিব ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো বাসের চোরাই রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পরিচয় গোপন করতে মোবাইল চুরি করে সেসব মোবাইল দিয়ে ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের মাধ্যমে চাঁদার টাকা আদায় করতেন। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

র‌্যাবের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী সাহেব আলীকে ছিনিয়ে নিলো সহযোগীরা

গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে চাঁদা আদায় করতেন তারা

আপডেট সময় : ১১:৩২:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে যাত্রী বেশে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে আসছিল একটি চক্র। এরপর গাড়ির মালিকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কাগজপত্র ফেরত দিতে চাওয়া হতো চাঁদা। কোনো ক্ষেত্রে কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মাসিক চাঁদা দিতে পরিবহন মালিকদের বাধ্য করা হতো। কখনো বা চাঁদা না দিলে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হতো। প্রায় দুই বছর ধরে এই অভিনব পন্থায় চাঁদা আদায় করা চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার দিবগত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন— রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), শুকুর আলী (২৮), হৃদয় হোসেন (২১) ও শামিম (২৫)।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালীবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, একটি চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকার মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন এবং রবরব পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাগজপত্র চুরি করে আসছিল। তারা বাসে যাত্রীবেশে উঠে এবং অভিনব কায়দায় বাসের ব্লুবুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করতো। এরপর গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও ড্রাইভারদের নম্বর সংগ্রহ করে চোরাইকৃত প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা ও চালকদের মেরে ফেলার হুমকি দেন চক্রের সদস্যরা। কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকরা এক পর্যায়ে প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫-৭ হাজার টাকা দিতেন। টাকা পেয়ে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে ওই চক্র। সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আটকে রাখা কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে। মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হলে চক্রের মূল হোতা তুফান পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দেন। তিনি ফোনে বলেন, ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিকেরা মাসিক চাঁদা দেয়, কোনো পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা না দিলে আমি গাড়ির কাগজ চুরি করেই যাব, ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে পারবে না। ’
অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু তাতেও কোননো ফল না পাওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে অবহিত করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুর থেকে তুফান পরিচয়দানকারী রাকিব ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো বাসের চোরাই রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পরিচয় গোপন করতে মোবাইল চুরি করে সেসব মোবাইল দিয়ে ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের মাধ্যমে চাঁদার টাকা আদায় করতেন। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।