নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডারচাপায় শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ১০ জনের নামে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে আদালতে একটি মামলা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকালে ঢাকা চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। এর আগে সকালে নিহত আইয়ুব হোসেন রুবেলের প্রথম স্ত্রী শাহিদা খানম ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে মামলার আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় যাদের আসামি হয়েছে তারা হলেন-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আইএফএসসিওএন ইঞ্জিনিয়ারিং) ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশনস আজহারুল ইসলাম মিঠু, সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম, সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ, ক্রেন চালক আলামিন হোসেন ওরফে হৃদয়, হেলপার রাকিব হোসেন, ইফতেখার হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন তুষার, রুহুল আমীন মৃধা, রুবেল ও আফরোজ মিয়া। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানাধীন প্যারাডাউস টাওয়ারের সম্মুখে আশুলিয়াগামী ঢাকা ময়মনসিংহ সেক্টর-৩ এর ৩ নং রোডে প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটিএ প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ৫০ টন ওজনের গার্ডার বক্স আছড়ে পড়ে গাড়িতে অবস্থানরত আইয়ুব হোসেন রুবেল ওরফে নুর ইসলাম রুবেলসহ ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। বিআরটিএ প্রজেক্টের চাইনিজ প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি, ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে একটি ক্রেন সরবরাহ করার জন্য আইএফএসসিওএন ইঞ্জিনিয়ারিং দায়িত্ব দিলে ওই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশনস আজহারুল ইসলাম মিঠু এবং রুহুল আমীন ও মঞ্জুরুল ইসলামের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজসে অযোগ্য ড্রাইভার এবং হেলপার সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করেছে। চাইনিজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মঞ্জুরুল ইসলাম যা যাচাই বাছাই না করেই অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করার মানসে জাতীয় পর্যায়ের প্রজেক্টে অদক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে চরম অবহেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণ কাজ চালানোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ত্রাইসিস মোকাবেলার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এতগুলো প্রাণ সংহারে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ দায়িত্বকালীন সময়ে হেলথ সেফটি অ্যান্ড ইনভাইরোমেন্টের ওপর কোনো জ্ঞান না থাকায় সেফটির জন্য অর্থাৎ ক্রেন চালানোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার যা যা প্রয়োজন তার যথার্থ পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণ করেননি। চরম অবহেলা এবং খামখেয়ালিপনা করে প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, যার ফলশ্রুতিতে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে।
ক্রেনচালক আলামিন নিজে অবহেলাপূর্ণভাবে নিজের দায়িত্ব পালন না করে হেলপার রাকিবকে দিয়ে ক্রেন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বেআইনিভাবে কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় আলামিন রাকিব মৃত্যু পরিস্থিতি জেনেও কোনোরূপ সহযোগিতা না করেই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যান। আসামিদের চরম অবহেলা, গাফিলতি এবং অদক্ষ, অযোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের কারণে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। গত ১৫ আগস্ট বিকালে রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দীন রোডে র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম’র (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেট কারে থাকা শিশুসহ ৫ যাত্রী নিহত হন। এরা হলেন- মো. রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), জান্নাত (৬), জাকিয়া (২) এবং ফাইজ। তবে ভাগ্যক্রম বেঁচে যান নববিবাহিত দম্পতি হৃদয় ও রিয়া। ওইদিন দিবাগত রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই আফরান ম-ল বাবু উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটায় ক্রেনের চালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়। পরে এ মামলায় ১০ জন গ্রেপ্তার হয়ে মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছেন।
গার্ডারচাপায় পাঁচ মৃত্যুর ঘটনায় ১০ জনের নামে অবহেলার মামলা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ