ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

গাজা দখল করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করবে এবং ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসন করে এই এলাকা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তার দাবি, এই প্রকল্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করতে পারে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন গাজার অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। সেখানে অগণিত চাকরি ও আবাসন সুবিধা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা দখল করব এবং এর উন্নয়নে কাজ করব। এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’ ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন পরিষ্কার করা এবং বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র অপসারণের দায়িত্ব তার প্রশাসন নেবে। এ ঘোষণার কয়েকদিন আগে ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে উচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে প্রতেবেশি দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা উচিত। সে সময় গাজাকে একটি ‘বিধ্বস্ত এলাকা’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

তবে গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা সৃষ্টির রেসিপি বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, গাজার জনগণ এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত হতে দেবে না। হামাস বলছে, যা প্রয়োজন তা হলো আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখল ও আগ্রাসন বন্ধ করা, তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ নয়। আমাদের জনগণ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণের মধ্যেও বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা প্রতিহত করেছে। এদিকে ট্রাম্পের গাজা দখলের ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আরব দেশগুলো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও এ নিয়ে জানিয়েছেন নিন্দা।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অসুস্থ রসিকতা’ আখ্যা দিয়ে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, “আমরা গাজা দখল করছি না।” মার্কিন কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালাইব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রাষ্ট্রপতি প্রকাশ্যে একটি গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর পাশে বসে জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানাচ্ছেন।’
‘ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়’
এদিকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়ার পর হোয়াইট হাউজের বাইরে শত শত বিক্ষোভকারী চিৎকার করে জানিয়ে দেন- ‘ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়।’ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।

ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা। প্রতিবাদকারীরা ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ স্লোগান দিতে থাকেন এবং ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা জানান। এ সময় তাদেরকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনী কড়া প্রহরায় ছিল। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানবাধিকার কর্মী মাইকেল শিরৎজার বলেন, আমেরিকানরা চান না যে তাদের ট্যাক্সের টাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে ব্যবহৃত হোক।

তিনি ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাকে ‘উন্মাদনা’ বলে অভিহিত করেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা কোথাও যাবে না। তারা সেই ভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠী।’ ‘কোন দেশের জনগণকে উচ্ছেদ করার চিন্তা ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’, বলেও উল্লেখ করেন শিরৎজার। এর আগে, ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা যদি সুযোগ পায় তবে তারা ‘খুশি মনে’ গাজা ছেড়ে চলে যাবে। তিনি আবারও বলেন, গাজার সব জনগোষ্ঠীকে ‘চিরতরে’ উচ্ছেদ করা উচিত। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের আহ্বান’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গাজা দখল করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

আপডেট সময় : ০৭:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করবে এবং ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসন করে এই এলাকা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তার দাবি, এই প্রকল্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করতে পারে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন গাজার অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। সেখানে অগণিত চাকরি ও আবাসন সুবিধা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা দখল করব এবং এর উন্নয়নে কাজ করব। এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’ ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন পরিষ্কার করা এবং বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র অপসারণের দায়িত্ব তার প্রশাসন নেবে। এ ঘোষণার কয়েকদিন আগে ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে উচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে প্রতেবেশি দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা উচিত। সে সময় গাজাকে একটি ‘বিধ্বস্ত এলাকা’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

তবে গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা সৃষ্টির রেসিপি বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, গাজার জনগণ এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত হতে দেবে না। হামাস বলছে, যা প্রয়োজন তা হলো আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখল ও আগ্রাসন বন্ধ করা, তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ নয়। আমাদের জনগণ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণের মধ্যেও বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা প্রতিহত করেছে। এদিকে ট্রাম্পের গাজা দখলের ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আরব দেশগুলো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও এ নিয়ে জানিয়েছেন নিন্দা।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অসুস্থ রসিকতা’ আখ্যা দিয়ে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, “আমরা গাজা দখল করছি না।” মার্কিন কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালাইব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রাষ্ট্রপতি প্রকাশ্যে একটি গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর পাশে বসে জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানাচ্ছেন।’
‘ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়’
এদিকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়ার পর হোয়াইট হাউজের বাইরে শত শত বিক্ষোভকারী চিৎকার করে জানিয়ে দেন- ‘ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়।’ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।

ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা। প্রতিবাদকারীরা ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ স্লোগান দিতে থাকেন এবং ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা জানান। এ সময় তাদেরকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনী কড়া প্রহরায় ছিল। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানবাধিকার কর্মী মাইকেল শিরৎজার বলেন, আমেরিকানরা চান না যে তাদের ট্যাক্সের টাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে ব্যবহৃত হোক।

তিনি ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাকে ‘উন্মাদনা’ বলে অভিহিত করেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা কোথাও যাবে না। তারা সেই ভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠী।’ ‘কোন দেশের জনগণকে উচ্ছেদ করার চিন্তা ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’, বলেও উল্লেখ করেন শিরৎজার। এর আগে, ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা যদি সুযোগ পায় তবে তারা ‘খুশি মনে’ গাজা ছেড়ে চলে যাবে। তিনি আবারও বলেন, গাজার সব জনগোষ্ঠীকে ‘চিরতরে’ উচ্ছেদ করা উচিত। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের আহ্বান’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।