বিদেশের খবর ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় সব ধরনের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছে কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। মিশর ও কাতার রবিবার (২ মার্চ) ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। আর জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। রবিবার এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ‘অস্ত্রবিরতি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’ বলে অভিযুক্ত করেছে।’ কাতার ও মিশর গাজার অস্ত্রবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিল। সৌদি আরবও ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা অবরোধের ‘নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের প্রাণরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে হামাস এই সহায়তা লুট করছে এবং সেগুলো ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করছে’।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি গাজায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যদিও ইসরায়েল ওই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। হামাস আগেও গাজায় মানবিক সহায়তা লুট করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামাসের এক মুখপাত্র ইসরায়েলের অবরোধকে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অস্ত্রবিরতি চুক্তির ফলে ১৫ মাস ধরে চলা হামাস ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছিল। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। নেতানিয়াহু আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ যে সাময়িক অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, হামাস তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপ ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল এবং শনিবার মধ্যরাতে তা শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী অস্ত্রবিরতি, সকল জীবিত বন্দির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তবে তা কার্যকরভাবে শুরু হয়নি। ধারণা করা হয়, বর্তমানে ২৪ জন বন্দি জীবিত রয়েছে এবং আরও ৩৯ জনকে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।
হামাস আগে বলেছিল, তারা অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে নয়, যদি না মধ্যস্থতাকারীরা দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করার নিশ্চয়তা দেন। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল উইটকফের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, যেখানে রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উপলক্ষে প্রায় ছয় সপ্তাহ অস্ত্রবিরতি অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ের শেষে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে ইসরায়েল যুদ্ধ ফের শুরু করার অধিকার সংরক্ষণ করবে। ইসরায়েলের মতে, উইটকফের প্রস্তাবে প্রথমে অর্ধেক জীবিত ও মৃত বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। উইটকফের প্রস্তাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি। রবিবার সকাল পর্যন্ত গাজায় কোনও মানবিক সহায়তার ট্রাক প্রবেশ করতে পারেনি বলে সাহায্য সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তা আন্তোয়ান রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, ‘মানবিক সহায়তার প্রবাহ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকল পক্ষকে একটি সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছি।‘ অস্ত্রবিরতির পর থেকে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার ট্রাক গাজার ভেতরে প্রবেশ করেছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সরবরাহ মজুত করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে বর্তমানে বেসামরিক জনগণের জন্য তাৎক্ষণিক সংকট নেই। রবিবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা উত্তর গাজায় একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পুঁতছিল এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের তীব্র নিন্দা আরব রাষ্ট্র ও জাতিসংঘের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ