বিদেশের খবর ডেস্ক : কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে ভয়াবহ হামলায় এক দিনে আরও ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। আর বৃহস্পতিবার নিহত হন ৭৭ ফিলিস্তিনি। গতকাল শনিবার (৪ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ নিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হওয়ার পর গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা থেকে রেহাই নেই গাজার বাসিন্দাদের। মুখে হামাস নিধনের কথা বললেও নেতানিয়াহু বাহিনী হামলা চালাচ্ছে অঞ্চলটির শরণার্থী শিবির ও কোনোমতে সচল থাকা হাসপাতালগুলোতে। এতে হতাহত হচ্ছেন উপত্যকাটির বাস্তুচ্যুত নিরীহ বাসিন্দারা। শুক্রবার গাজার মাঘাজি শরণার্থী শিবির ও জাওয়াইদাসহ অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
এতে নিহত হন অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি। ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিরও খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, হামাসের ৪০টি অবস্থানকে লক্ষ্য করে তারা এসব হামলা চালিয়েছে। বাসিন্দাদের ক্ষতি কমাতে চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের। যদিও এমন কথা অস্বীকার করেছে হামাস। গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকে ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আটক গাজার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে ‘ধ্বংস’ করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এদিকে শুক্রবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় গাজার বাসিন্দাদের সমর্থনে র্যালি করেছেন লাখো মানুষ।
র্যালি চলাকালীন সবার উদ্দেশে বক্তব্য দেন দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে। তিনি জানান, ইসরাইলে দুটি অভিযান চালিয়েছে হুতিরা। এসময় আন্দোলনকারীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেন। পোড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকাও।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে আগ্রহী ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের সঙ্গে পরোক্ষ বৈঠকের নতুন দফায় এই মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা বাসেম নাইম। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই (এমইই) এ খবর জানিয়েছে।
নাইমকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করাকে মূল বিবেচনায় রেখে নতুন দফার আলোচনা চলছে। গত এক বছর ধরে দোহায় চলমান আলোচনায় কোনও কার্যকর সমঝোতা না হওয়ায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এখনও অধরা রয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পুনরায় প্রেরণের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির সম্ভাবনাকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করে যাচ্ছেন তিনি। হামাস ও ইসরায়েল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমঝোতার চেষ্টা করছিল।
তখনও হামাস অভিযোগ করেছিল যে, ইসরায়েলি আলোচকরা নতুন শর্ত চাপিয়ে সমঝোতার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির পথে আসল বাধা তৈরি করছে হামাস। যুদ্ধবিরতির পথে হামাসকে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দোষারোপ করে আসলেও বিশ্লেষকদের দাবি, চুক্তিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহুর দিক থেকেও তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। পুরো ২০২৪ সাল জুড়ে হামাসের প্রয়াত প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ারকে যুদ্ধবিরতির প্রধান বাধা বলে অভিযুক্ত করে এসেছিল ওয়াশিংটন ও তেল আবিব। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে সিনাওয়ার নিহত হওয়ার প্রায় দুমাস হতে চললেও যুদ্ধবিরতির কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, ২০ জানুয়ারি অভিষেকের আগেই একগাদা হুমকি ধামকি দিয়ে পুরো বিশ্বকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওভাল অফিসে বসার আগে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হলে হামাসকে তার ‘চরম মূল্য দিতে হবে’।