প্রত্যাশা ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩টি শিশুসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার ভোররাতে চালানো হামলায় এরা নিহত হন বলে জানিয়েছেন তারা।
এসব হামলার জবাবে গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিন ইসরায়েল ও গাজার লড়াই সপ্তম দিনে গড়ালেও সহিংসতা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোররাতের হামলাগুলো গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলে চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ক প্রতিবেদনগুলো দেখবেন।
গত সোমবার দুই পক্ষের সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এ পর্যন্ত ১৮১ জন নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে ৫২টি শিশু আছে। হামাস ও গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর রকেট হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত দুটি শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে একজন সৈন্য রয়েছেন। ২০১৪ সালের পর থেকে গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে চলা সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই। এ সহিংসতা নিয়ে রোববার জাতিসংঘের নিরপত্তা পরিষদে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ দিন ইসরায়েলি পুলিশ ছুরিসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা সীমান্ত পার হয়ে জর্ডান থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাতে হামাস ইসরায়েলের দিকে ১২০টি রকেট ছুড়েছে, এর অধিকাংশই আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে আর প্রায় ডজন খানেক রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাজার ভেতরেই পড়েছে। রকেট হামলার সাইরেন শুনে ইসরায়েলের তেল আবিব ও বীরশেবা শহরের বাসিন্দারা তাড়াহুড়া করে ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চলে যান। দৌঁড়ে এসব আশ্রয়স্থলে যাওয়ার সময় প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রোববার ভোররাতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসে হামাসের আঞ্চলিক নেতা ইয়াহিয়া আল সিনওয়ারের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তারা। সিনওয়ার ২০১১ সালে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে গাজা অঞ্চলের হামাসের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।
এদিকে শনিবার রাতে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যতক্ষণ প্রয়োজন গাজায় হামলা অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া জানিয়েছেন, পাল্টা জবাব দেয়া হবে। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলমান সংঘাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
অপরদিকে জেরুজালেম ও গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গতকাল রোববার জরুরি বৈঠক ডেকেছে ওআইসি। বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের উদ্যোগে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওআইসিভুক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গেরি প্রিটের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিড প্রাইস এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার হামলা চালিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) কার্যালয় ভবন গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। ইসরায়েলের এই সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আলাপ করেছেন গেরি প্রিট এবং অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।
ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে ফোন বাইডেনের, ফিলিস্তিনকে হামলা থামানোর আহ্বান : ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শনিবারের এ ফোনালাপে গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনীর তা-বকে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। একইসঙ্গে ইসরায়েলে রকেট হামলা থামাতে ফিলিস্তিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বাইডেনের এ ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে বাইডেন বলেছেন, গাজা থেকে হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রকেট হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তাদের এই অধিকারের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বিদ্যমান সংঘাতে শিশু ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি এবং সংবাদমাধ্যমের অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাইডেন। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের পর টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হামাসকে এমন বার্তা পাঠানো যে, পরের বার তারা চাইলেও আর রকেট হামলা চালাতে পারবে না। সেই সক্ষমতা তাদের থাকবে না।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শনিবার প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফোনে কথা বলেছেন বাইডেন। ফোনালাপে গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামাসের রকেট হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, যেখানে নারী ও শিশুসহ দেড় শতাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে হাজার হাজার মানুষ সেই গাজার শাসক দল হামাসের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেননি বাইডেন। ফলে আব্বাস ও তার ফোনালাপ কোনও কাজে আসবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে এই দুই ফোনালাপের মাধ্যমে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতি মার্কিন সমর্থন স্পষ্ট করলেন তিনি। এর আগে গত বুধবারও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন বাইডেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের দিকে যখন হাজার হাজার রকেট ছুঁড়ে যায় তখন তাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। হামাস বলছে, ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। তবে নিজ বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বাইডেন। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি নিয়েও কোনও কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এসব উপেক্ষা করে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র বয়ান হাজির করেছেন তিনি। সূত্র: বিবিসি, সিএনবিসি।
দেশে দেশে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ : ২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত সপ্তাহে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিশুসহ অন্তত ১৮১ জনের নিহত হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দোহা, লন্ডন, প্যারিস ও মাদ্রিদসহ বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৩ শিশুসহ নিহত ৩৩
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ