ঢাকা ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে

  • আপডেট সময় : ০৮:০১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত মাসে হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নাটকীয়ভাবে তার অবস্থান প্রসারিত করেছে। এখন তারা গাজার ৫০% এরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ফিলিস্তিনিরা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাওয়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় সংলগ্ন এলাকা হল গাজা সীমান্তের আশেপাশে। এখানে সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা জমি তারা দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে।

এই জমির মধ্যে একটি করিডোর রয়েছে যা এই অঞ্চলের উত্তর থেকে দক্ষিণকে বিভক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে হামাস পরাজিত হওয়ার পরেও, ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে বাধ্য করবে। পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংস এবং বাফার জোনের পদ্ধতিগত সম্প্রসারণ চলছে। নেতানিয়াহু আরও বলেছিলেন যে, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজাজুড়ে আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়, যা রাফা শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। অতীতে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি যে জমিতে বাস করতেন তা এখন ইসরায়েলের বাফার জোন। অথচ এই এলাকাটিই একসময় গাজার কৃষি উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি ছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একসময় ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেইসাথে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে সেখানে প্রায় এক ডজন নতুন ইসরায়েলি সেনা ফাঁড়ি তৈরি হয়েছে। জানুয়ারিতে যখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, তখনও অনেকেই উত্তর গাজার বেইত হানুনে তার বাড়িতে ফিরে যান। আবারও ইসরায়েল হামলা শুরুর পর সেই সব সম্পত্তি-ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর সেখানে ইসরায়েলি বাফার জোন তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩২, বেশিরভাগই নারী ও শিশু
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে দুই সাংবাদিকও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে। রবিবার রাতে প্রায় ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র গাজা থেকে নিক্ষেপের পরপরই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই রকেট হামলার পর গাজায় হামলা আরও জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। কারণ ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় রকেট হামলা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি রকেট প্রতিহত করা হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। রবিবার ভোররাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবু ও একটি বাড়িতে আঘাত হানে ইসরায়েল। এতে পাঁচজন পুরুষ, পাঁচজন নারী ও পাঁচজন শিশু নিহত হয় বলে নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে। নাসের হাসপাতালের কাছেই সাংবাদিক ইসলাম মেকদাদের বাড়ি। হামলায় তিনি, তার ছেলে ও পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন নারী সাংবাদিকও ছিলেন। তার মা আমাল কাসকিন বলেন, আমার মেয়ে নিরপরাধ। সে সাংবাদিকতাকে ভালোবাসত এবং এই পেশার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক সাংবাদিক জানান, দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে সাতজনের মরদেহ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে একটি শিশু ও তিনজন নারী রয়েছে। এছাড়া গাজা সিটিতে একটি বেকারির সামনে অপেক্ষমাণ লোকজনের ওপর হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। গত মাসে ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শেষ করে এবং নতুন যুদ্ধবিরতি ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির চুক্তির জন্য চাপ দিতে গিয়ে গাজায় ভূখণ্ড দখল করে। উপকূলীয় এই অঞ্চলটি বহির্বিশ্বের সহায়তার উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ প্রবেশেও বাধা দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজা পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দিয়েছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে

আপডেট সময় : ০৮:০১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত মাসে হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নাটকীয়ভাবে তার অবস্থান প্রসারিত করেছে। এখন তারা গাজার ৫০% এরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ফিলিস্তিনিরা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাওয়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় সংলগ্ন এলাকা হল গাজা সীমান্তের আশেপাশে। এখানে সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা জমি তারা দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে।

এই জমির মধ্যে একটি করিডোর রয়েছে যা এই অঞ্চলের উত্তর থেকে দক্ষিণকে বিভক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে হামাস পরাজিত হওয়ার পরেও, ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে বাধ্য করবে। পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংস এবং বাফার জোনের পদ্ধতিগত সম্প্রসারণ চলছে। নেতানিয়াহু আরও বলেছিলেন যে, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজাজুড়ে আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়, যা রাফা শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। অতীতে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি যে জমিতে বাস করতেন তা এখন ইসরায়েলের বাফার জোন। অথচ এই এলাকাটিই একসময় গাজার কৃষি উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি ছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একসময় ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেইসাথে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে সেখানে প্রায় এক ডজন নতুন ইসরায়েলি সেনা ফাঁড়ি তৈরি হয়েছে। জানুয়ারিতে যখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, তখনও অনেকেই উত্তর গাজার বেইত হানুনে তার বাড়িতে ফিরে যান। আবারও ইসরায়েল হামলা শুরুর পর সেই সব সম্পত্তি-ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর সেখানে ইসরায়েলি বাফার জোন তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩২, বেশিরভাগই নারী ও শিশু
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে দুই সাংবাদিকও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে। রবিবার রাতে প্রায় ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র গাজা থেকে নিক্ষেপের পরপরই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই রকেট হামলার পর গাজায় হামলা আরও জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। কারণ ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় রকেট হামলা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি রকেট প্রতিহত করা হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। রবিবার ভোররাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবু ও একটি বাড়িতে আঘাত হানে ইসরায়েল। এতে পাঁচজন পুরুষ, পাঁচজন নারী ও পাঁচজন শিশু নিহত হয় বলে নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে। নাসের হাসপাতালের কাছেই সাংবাদিক ইসলাম মেকদাদের বাড়ি। হামলায় তিনি, তার ছেলে ও পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন নারী সাংবাদিকও ছিলেন। তার মা আমাল কাসকিন বলেন, আমার মেয়ে নিরপরাধ। সে সাংবাদিকতাকে ভালোবাসত এবং এই পেশার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক সাংবাদিক জানান, দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে সাতজনের মরদেহ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে একটি শিশু ও তিনজন নারী রয়েছে। এছাড়া গাজা সিটিতে একটি বেকারির সামনে অপেক্ষমাণ লোকজনের ওপর হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। গত মাসে ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শেষ করে এবং নতুন যুদ্ধবিরতি ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির চুক্তির জন্য চাপ দিতে গিয়ে গাজায় ভূখণ্ড দখল করে। উপকূলীয় এই অঞ্চলটি বহির্বিশ্বের সহায়তার উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ প্রবেশেও বাধা দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজা পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দিয়েছেন।