প্রত্যাশা ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি শিশুও রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চালানো হামলায় প্রাণ হারান তারা। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় চলা ইসরায়েলের বিরামহীন হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলমান যুদ্ধের ১৩তম দিনে বৃহস্পতিবার সকালেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে এবং এসব হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাত শিশুসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকার একটি বাড়িতেও হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, খান ইউনিসের পশ্চিমে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক শিশুও নিহত হয়েছে। এদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অভিযানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৭৮ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার এই তথ্য জানায়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪৭৮ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন মাত্রার আঘাতে ১২ হাজার ৬৫ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। হামলার শিকার শত শত ফিলিস্তিনি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই এক হামলায় একসঙ্গে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে জানানো হয় হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৭১ জন।আল-আহলি আরব নামের ওই হাসপাতালটিতে অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এছাড়া দখলদার ইসরায়েলিদের হামলা থেকে বাঁচতেও অনেক মানুষ ‘নিরাপদ আশ্রয়’ ভেবে হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছিলেন। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার হাসপাতালের ওপর এ হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। অবশ্য বুধবারের এই পরিসংখ্যানে হাসপাতালে বোমা হামলার হতাহতের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ ভোরে গাজার দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ৩০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। এতে চলমান হামলায় মোট ৩ হাজার ৪৮০ জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন হাজার হাজার। এদিকে হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের অধিক ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। হামাসের হামলার পর থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। এতে করে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে সেখানে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউিএইচও) ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)।
গাজায় একমাত্র ক্যান্সার চিকিৎসা দেওয়া হয় তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৯ হাজারের অধিক ক্যান্সার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যুদ্ধের পর ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজায় ওষুধ ও জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধের সম্মুখীন। এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে দুই কিশোরসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এছাড়া সন্দেহভাজন হামাস সদস্যদের গ্রেফতার করেছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের নিরাপত্তা প্রধান নিহত
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলায় হামাসের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জিহাদ মহেসিন নিহত হয়েছেন। হামাস সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদমাধ্যম থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) তার মৃত্যুর তথ্যটি জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, গাজা সিটির শেখ রেদওয়ানে জিহাদ মহেসিনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জিহাদ মহেসিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। এছাড়া হামাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি পলিটব্যুরোর একমাত্র নারী সদস্যও ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম। ফিলিস্তিনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরও জানিয়েছে, হামাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা আব্দেল আজিজ আল-রানতিসির বিধবা স্ত্রী ৬৮ বছর বয়সী জামিলা আল-শান্তিকে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে ইসরায়েল। হামাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আব্দেল আজিজও ২০০৪ সালে এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে সেদিন থেকেই গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। তাদের এসব নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনীর এসব আগ্রাসনের মধ্যে গত মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। ওই এক হামলাতেই একসঙ্গে প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। হামলার পরপর হামাস দাবি করে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের ছোড়া রকেট লক্ষভ্রষ্ট হয়ে সেখানে পড়েছে।
গাজায় দফায় দফায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৪০
জনপ্রিয় সংবাদ