রংপুর প্রতিনিধি : গাঁজা সেবন করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন জোয়ান পরিবহনের চালক। গতি কমাতে যাত্রীদের অনুরোধও কানে তোলেননি। এর ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। রংপুরের সড়কে একে একে ঝরে গেছে ৯টি প্রাণ।
রোববার দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে জেলার তারাগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে পাঁচ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে আরো চার জনের প্রাণহানি হয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হন। এদিকে আহতদের মধ্যে ৩১ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে আরো দুজনের অবস্থা আশঙ্কজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জোয়ান পরিবহনের যাত্রী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বাসটি রংপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় ১ ঘন্টা বিলম্ব করে ছাড়ে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রীও নেওয়া হয়। এরপর হেলপারের সঙ্গে গাঁজা সেবন করতে করতে বাস চালানো শুরু করেন চালক। এ সময় বাসের ভেতর গাঁজার ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবাদ করেন কয়েকজন যাত্রী।’
ওই বাসের আরেক যাত্রী আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাদক সেবনরত অবস্থায় দ্রুত গতিতে বাসটি চালিয়ে সৈয়পুরের দিকে যাওয়ার পথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তখন বাসের চালককে গতি কমানোর জন্য অনুরোধ জানান যাত্রীরা। কিন্তু তিনি কারো কথাই কানে তোলেন নি।’ এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আব্দুস সালামের বন্ধু মোখতার জানান, ‘গাঁজা সেবন করে বাস না চালালে এবং বেপরোয়া গতি না হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না।’
এদিকে এ ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে রংপুর মেডিকেলের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অনেকে স্বজনদের খোঁজে সকাল থেকে হাসপাতালে ভিড় করছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন ছাত্রলীগ নেতা অলিউর রহমান জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা। অলিউর নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। তার চাচি ফাতেমা বেগম জানান, ‘আমার ভাতিজা আহত অবস্থায় ভর্তি আছে শোনে রংপুর মেডিকেলে এসেছিলাম কিন্তু তাকে জীবিত পাইনি।’ তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোর্শেদ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহনের বাস সৈয়দপুরে যাচ্ছিল। অপর দিকে ইসলাম পরিবহনের একটি বাস সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিলো। রংপুর-দিনাজপুর সড়কের শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে আসলে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, রংপুরের তারাগঞ্জ হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের মজিবুর রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৫), একই উপজেলার মৃত কচিমুদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান (৪৮), কোবাস ব্যাপারীর ছেলে সাদেক আলী (৫৬), সেলিম মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩৮), রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার সুধীর চন্দ্রের ছেলে শচীন চন্দ্র (৬০) তারাগঞ্জ উপজেলার বিনোদ কুমার এর ছেলে ধনঞ্জয় (৪৫), নীলফামারীর সৈয়দপুরের রায়হানের ছেলে জুয়েল (২৭), মকবুল হোসেনের ছেলে মহাসীন হোসেন সাগর (৪৮) ও একই এলাকার নূর হোসেনের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (৩০)। এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। এসময় তিনি নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দেন।
ইজিবাইককে এক কিলোমিটার টেনে নিল ট্রেন, রাস্তায় মা-ছেলের লাশ : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় ট্রেনের সঙ্গে ইজিবাইকের সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত হয়েছে। সোমবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের শ্রীরামদিয়ার খালপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নগরকান্দা থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন জানান। নিহতরা হলেন- ভাঙ্গা উপজেলার সদরদী এলাকার মো. ইকবাল হোসেনের স্ত্রী লিমা বেগম (২৬) এবং তার ছেলে মো. ইমরান (৭)। ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম বলেন, লিমা তার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে ইজিবাইকে করে নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে এক আত্মীয়েরে বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসছিলেন। ভাঙ্গা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটির সঙ্গে ইজিবাইকটির সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। নগরকান্দা থানার ওসি হাবিল হোসেন বলেন, “ট্রেনটি ইজিবাইকটিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তালমার দিকে টেনে নিয়ে যায়। আধা কিলোমিটার দূরে মা ও ছেলের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। “তবে ইজিবাইকটি কে চালাচ্ছিলেন এবং তার অবস্থা কী হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।“ ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. তাকদির হোসেন বলেন, “ঘটনার সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময় অসাবধানতাবশত ইজিবাইকটি রেললাইনের ওপর উঠে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।” বিষয়টি রাজবাড়ী রেলওয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান স্টেশন মাস্টার।
যাত্রাবাড়ীতে অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত ১ : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেটের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় অটোরিকশার ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১২টার দিকে দুর্ঘটনার পর আসলাম হাওলাদার নামের ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যাক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যাত্রবাড়ী থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রথমিকভাবে জানা গেছে আসলাম হাওলাদার স্থানীয় ইমপেরিয়াল আইডিয়াল স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। “অটোরিকশাটিকে পাওয়া যায়নি, দুর্ঘটনার পর সে পালিয়ে গেছে। পুলিশ চালকসহ আটোরিকশাটিকে আটক করার চেষ্টা করছে।” নিহতের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
গাঁজা খেয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক রংপুরে সড়কে ৯ প্রাণহানি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ