ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

গর্ত থেকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা শিশু সাজিদ বেঁচে নেই

  • আপডেট সময় : ০১:১২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

শিশু সাজিদ -ছবি পরিবার থেকে সংগৃহীত

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে গর্ত থেকে উদ্ধার করা দুই বছরের শিশুটি বেঁচে নেই। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য তৈরি করা গভীর গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধারের পর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বার্নাবাস হাসদাক জানান, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা ছিল। তবে সেখানে কোনো চিকিৎসক দল ছিল না। শিশুটিকে উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা একটার দিকে তানোর উপজেলার কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামে মায়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে গভীর গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের শিশু সাজিদ। সে কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, তানোরের কোয়েল হাট গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ এলাকায় এখন গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপরও ওই গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে পানির স্তর পাওয়া যায় কি না, সেটা যাচাই করার জন্য গর্তটি খনন করেছিলেন। সেই গর্ত ভরাটও করেছিলেন; কিন্তু বর্ষায় মাটি বসে গিয়ে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হয়। মায়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে শিশুটি সেই গর্তে পড়ে যায়।

শিশুটিকে উদ্ধারে বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। মূল গর্তের পাশ থেকে কেটে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহীর তানোরে গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান -ছবি সংগৃহীত

বুধবার রাতে রাতে শিশু সাজিদের মা রুনা খাতুনকে গর্তের পাশ থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রুনা খাতুনকে নিয়ে বসে আছেন তাঁর মা শেফালী বেগম। শেফালী বেগম সাজিদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। কাঁদতে কাঁদতে রুনা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের কছির উদ্দিন তিন জায়গায় গভীর নলকূপ বসানোর জন্য গর্ত খুঁড়েছিল। দুই বছর ধরে বন্ধ না করে গর্তগুলো এভাবে ফেলে রাখেন। আমি কছিরের শাস্তি চাই, তাঁর বিচার চাই।’ তিনি জানান, ঘটনার পর কছির একবার দেখতে এসেছিলেন। তারপর আর আসেননি। তিনি পালিয়ে গেছেন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কছিরের দেখা হয়নি। আমরা তাঁকে পাইনি।’ তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কি না প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, তদন্ত চলছে। আমরা এটা দেখছি।

সানা/আপ্র/১২/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গর্ত থেকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা শিশু সাজিদ বেঁচে নেই

গর্ত থেকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা শিশু সাজিদ বেঁচে নেই

আপডেট সময় : ০১:১২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে গর্ত থেকে উদ্ধার করা দুই বছরের শিশুটি বেঁচে নেই। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য তৈরি করা গভীর গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধারের পর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বার্নাবাস হাসদাক জানান, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা ছিল। তবে সেখানে কোনো চিকিৎসক দল ছিল না। শিশুটিকে উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা একটার দিকে তানোর উপজেলার কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামে মায়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে গভীর গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের শিশু সাজিদ। সে কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, তানোরের কোয়েল হাট গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ এলাকায় এখন গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপরও ওই গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে পানির স্তর পাওয়া যায় কি না, সেটা যাচাই করার জন্য গর্তটি খনন করেছিলেন। সেই গর্ত ভরাটও করেছিলেন; কিন্তু বর্ষায় মাটি বসে গিয়ে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হয়। মায়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে শিশুটি সেই গর্তে পড়ে যায়।

শিশুটিকে উদ্ধারে বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। মূল গর্তের পাশ থেকে কেটে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহীর তানোরে গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান -ছবি সংগৃহীত

বুধবার রাতে রাতে শিশু সাজিদের মা রুনা খাতুনকে গর্তের পাশ থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রুনা খাতুনকে নিয়ে বসে আছেন তাঁর মা শেফালী বেগম। শেফালী বেগম সাজিদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। কাঁদতে কাঁদতে রুনা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের কছির উদ্দিন তিন জায়গায় গভীর নলকূপ বসানোর জন্য গর্ত খুঁড়েছিল। দুই বছর ধরে বন্ধ না করে গর্তগুলো এভাবে ফেলে রাখেন। আমি কছিরের শাস্তি চাই, তাঁর বিচার চাই।’ তিনি জানান, ঘটনার পর কছির একবার দেখতে এসেছিলেন। তারপর আর আসেননি। তিনি পালিয়ে গেছেন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কছিরের দেখা হয়নি। আমরা তাঁকে পাইনি।’ তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কি না প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, তদন্ত চলছে। আমরা এটা দেখছি।

সানা/আপ্র/১২/১২/২০২৫