ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

গরিবের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের যুক্তিসঙ্গত চাপ দেওয়ার পরামর্শ

  • আপডেট সময় : ০২:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দরিদ্র, নি¤œবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে চাপ বাড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ করার পাশাপাশি বিত্তবান-ধনীদের ওপর যুক্তিসঙ্গত চাপ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)। গতকাল বুধবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম এই পরামর্শ দেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ ও (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা।
অর্থনীতি সমিতি বলছে, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে দরিদ্রদের ওপর প্রত্যক্ষ করের বোঝা না বাড়িয়ে ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করতে হবে, সুপার-ডুপার ধনীদের ওপর করের হার বাড়াতে হবে এবং ৮০ শতাংশ শেয়ার-বন্ডের মালিক গুটিকয়েক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ কর আরোপ করতে হবে।
সমিতির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ এবং কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করতে নিতে হবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। দেশপ্রেম ও সদিচ্ছা থাকলে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কঠিন কিছু নয়। পরোক্ষ করের বোঝা মূলত দরিদ্র, প্রান্তিক, নি¤œবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্তদের ওপর তাদের আয়ের তুলনায় অধিক হারে চাপ প্রয়োগ করে; ফলে তা দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস না করে উল্টো আরও বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত বেশি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সমিতি বলছে, আমদানি শুল্ক হার নির্ধারণে দেশজ শিল্পায়ন ও দেশজ কৃষির স্বার্থ বিবেচনায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাত-উপখাতসমূহের ক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়া মুক্তবাজার দর্শনের বিপরীতে সংরক্ষণবাদ নীতি-দর্শন প্রয়োগ করতে হবে। কারণ ধনী দেশের যারা নানা প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে, তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সংরক্ষণবাদ নীতি অবলম্বন করেই ধনী হয়েছে, কিন্তু ধনী হওয়ার পরে ‘উপরে ওঠার মই লাথি মেরে সরিয়ে’ মুক্তবাজারে বাংলাদেশকে খেলতে বলছে—এসব হলো দ্বিচারিতা।
সমিতি মনে করে, করোনার প্রভাবে নিরঙ্কুশ দরিদ্র, হতদরিদ্র, চরম দরিদ্র, দরিদ্র, নি¤œবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্ত মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে। কর্মবাজার ভীষণভাবে সংকুচিত ও বিপর্যস্ত। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন খড়গ হয়ে নেমে এসেছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি। এসব মিলিয়ে বৈষম্য নিরূপণের মাপকাঠি গিনি সহগ ও পালমা অনুপাত অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন উচ্চ ও বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে।
কোভিড-১৯ রোধে দেওয়া লকডাউন ও বিধি-নিষেধে নিঃস্ব, সর্বস্বহারা, হতাশাগ্রস্ত, ও ভাগ্যনির্ভর মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য হ্রাসের যত পথ-পদ্ধতি আছে, তা প্রয়োগ করে সবার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভাইরাসপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি। সংগঠনের মতে, আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে কোনওভাবেই সংকোচনমূলক না করে বরং সম্প্রসারণশীল ও বৃহদাকারভাবে প্রণয়ন করতে হবে। শুধু প্রয়োজন আয়, ধন ও সম্পদের বণ্টনকে ন্যায্য করা। অর্থাৎ ধনীদের কাছ থেকে তা প্রবাহিত করতে হবে দরিদ্র, বিত্তহীন ও নি¤œবিত্ত মানুষের দিকে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

গরিবের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের যুক্তিসঙ্গত চাপ দেওয়ার পরামর্শ

আপডেট সময় : ০২:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দরিদ্র, নি¤œবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে চাপ বাড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ করার পাশাপাশি বিত্তবান-ধনীদের ওপর যুক্তিসঙ্গত চাপ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)। গতকাল বুধবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম এই পরামর্শ দেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ ও (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা।
অর্থনীতি সমিতি বলছে, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে দরিদ্রদের ওপর প্রত্যক্ষ করের বোঝা না বাড়িয়ে ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করতে হবে, সুপার-ডুপার ধনীদের ওপর করের হার বাড়াতে হবে এবং ৮০ শতাংশ শেয়ার-বন্ডের মালিক গুটিকয়েক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ কর আরোপ করতে হবে।
সমিতির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ এবং কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করতে নিতে হবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। দেশপ্রেম ও সদিচ্ছা থাকলে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কঠিন কিছু নয়। পরোক্ষ করের বোঝা মূলত দরিদ্র, প্রান্তিক, নি¤œবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্তদের ওপর তাদের আয়ের তুলনায় অধিক হারে চাপ প্রয়োগ করে; ফলে তা দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস না করে উল্টো আরও বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত বেশি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সমিতি বলছে, আমদানি শুল্ক হার নির্ধারণে দেশজ শিল্পায়ন ও দেশজ কৃষির স্বার্থ বিবেচনায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাত-উপখাতসমূহের ক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়া মুক্তবাজার দর্শনের বিপরীতে সংরক্ষণবাদ নীতি-দর্শন প্রয়োগ করতে হবে। কারণ ধনী দেশের যারা নানা প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে, তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সংরক্ষণবাদ নীতি অবলম্বন করেই ধনী হয়েছে, কিন্তু ধনী হওয়ার পরে ‘উপরে ওঠার মই লাথি মেরে সরিয়ে’ মুক্তবাজারে বাংলাদেশকে খেলতে বলছে—এসব হলো দ্বিচারিতা।
সমিতি মনে করে, করোনার প্রভাবে নিরঙ্কুশ দরিদ্র, হতদরিদ্র, চরম দরিদ্র, দরিদ্র, নি¤œবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্ত মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে। কর্মবাজার ভীষণভাবে সংকুচিত ও বিপর্যস্ত। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন খড়গ হয়ে নেমে এসেছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি। এসব মিলিয়ে বৈষম্য নিরূপণের মাপকাঠি গিনি সহগ ও পালমা অনুপাত অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন উচ্চ ও বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে।
কোভিড-১৯ রোধে দেওয়া লকডাউন ও বিধি-নিষেধে নিঃস্ব, সর্বস্বহারা, হতাশাগ্রস্ত, ও ভাগ্যনির্ভর মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য হ্রাসের যত পথ-পদ্ধতি আছে, তা প্রয়োগ করে সবার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভাইরাসপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি। সংগঠনের মতে, আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে কোনওভাবেই সংকোচনমূলক না করে বরং সম্প্রসারণশীল ও বৃহদাকারভাবে প্রণয়ন করতে হবে। শুধু প্রয়োজন আয়, ধন ও সম্পদের বণ্টনকে ন্যায্য করা। অর্থাৎ ধনীদের কাছ থেকে তা প্রবাহিত করতে হবে দরিদ্র, বিত্তহীন ও নি¤œবিত্ত মানুষের দিকে।