ঢাকা ০২:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও আইসক্রিমে হিতে বিপরীত

  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক : গরমে তাপদাহ বেড়েই চলেছে। ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই, গরমের কারণে সবাই ঘামছে, পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। গরমের সময় পিপাসাতে গলা শুকিয়ে যায়। পানির চাহিদাও বেশি থাকে। স্বাভাবিক মাত্রার পানির থেকে ফ্রিজের পানির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে সবার। কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবাণুমুক্ত স্বাভাবিক মাত্রার পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেন মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকে বেঁচে থাকে এবং পানি পান করে পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করে। শারীরবৃত্তীয় কর্মকা- স্বাভাবিক রাখার জন্য সকলের পানি পান করা জরুরি। তবে গরমের দিনে ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠান্ডা পানি পান করা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডা পানির উপকার তো নেইই বরং শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে হার্টের। তাছাড়া হজমের সমস্যা, ঠা-া লাগা, সাইনাস ব্লকেজ- এসবও ঠান্ডা পানির কারণেই হয়। চলুন তবে জেনে আসি ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরে কী কী ক্ষতি করে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোদ থেকে ঘুরে এসে ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করার ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মার একটা অতিরিক্ত আস্তরণ তৈরি হয়। যার শ্বাসযন্ত্রজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়। ঠান্ডা পানি পানের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় হার্টের। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা উপশিরা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে হার্টের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এই বাড়তি চাপ হার্টের জন্য একেবারেই ভালো না। সঙ্গে সঙ্গে কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জটিল হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভেতরের অংশে হঠাৎ করেই অনাহুত অস্বস্তি দেখা দেয়। এ ধরনের অস্বস্তি জ্বরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়। ঠা-া পানিতে শরীরে পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণ হয় না। ঠা-া পানিতে তৃষ্ণা মেটে চট করে, তৃপ্তি চলে আসে তাড়াতাড়ি। ফলে শরীর মনে করে তার আর পানি পানের প্রয়োজন নেই। ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। এই ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ভিষণ ক্ষতিকর। টনসিলের সমস্যা হতে পারে। ঠান্ডা পানিতে সহজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।
ঠান্ডা পানিতে খনিজের অনুপস্থিতি থাকে। সাধারণ পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানে পূর্ণ থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন শরীরের জন্য এরা আর কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে পানি থেকে শরীরের যে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়, সেটা অপূর্ণই থেকে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পাকস্থলী খাবার হজমের চাইতে ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পাকস্থলীর যে মূল দায়িত্ব সেই খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। শরীরের শক্তি ক্ষয় করে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যেহেতু স্বাভাবিক মাত্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাই ঠান্ডা পানি যখন পাকস্থলীতে জমা হয় তখন পাকস্থলী তা শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরের অহেতুক শক্তি খরচ হয়। ব্যায়ামের পরে ঠান্ডা পানি ক্ষতিকর। ব্যায়ামের পরে কক্ষতাপমাত্রা বা তার চেয়ে গরম পানি খাওয়া ভালো। কারণ ঠান্ডা পানি খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় না।
ঠান্ডা পানি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে মারাত্মক ভাবে। গরম থেকে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা মাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়। ফলে এনামেলে ফাটল ধরে। এছাড়া মাড়ি ক্ষয়ের অন্যতম একটি কারণও ঠান্ডা পানি।
শরীরের চর্বিজাতীয় পদার্থ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে সেগুলো শোষণ করা বা পুড়িয়ে ফেলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই চর্বিজাতীয় পদার্থ হজম করতে শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে শরীর তো ঠান্ডা হবেই না, আরও গরম হবে। আর ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে জরায়ুর সঙ্কোচন হয়। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের সঙ্কোচন গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই আজই ঠিক করুন ঠান্ডা পানি খাবেন, নাকি স্বাভাবিক। চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে ফিরেই পানি খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। শরীরের ঘাম শুকিয়ে এলে তারপর সাধারণ পানি খাওয়া যেতে পারে। এমনি পানির পরিবর্তে কেউ চাইলে ডাবের পানিও খেতে পারেন। ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
গরমের সময় শরীর ঘামতে থাকে। শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে শীতের তুলনায় গরমে বেশি দুর্বল লাগে। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে ও দুর্বলতা কাটাতে খেতে পারেন বিভিন্ন ফলের রস। যাদের ঠান্ডা-কাশি, দাঁতের সমস্যা, কোল্ড এলার্জি, হার্টের সমস্যা, মাথাব্যথা, সাইনাস আছে, সদ্য অপারেশন হয়েছে অথবা ওজন কমাতে চান— তারা একেবারেই খাবেন না। এ ছাড়া খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা পানি খাবেন না। একান্তই যদি খেতে হয়, খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে খান। অবশ্যই ঠান্ডা পানির সঙ্গে সমপরিমাণ বা বেশি স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে খাবেন।
আইসক্রিমে হিতে বিপরীত: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দেশে ধারাবাহিকভাবে জারি হচ্ছে হিট অ্যালার্ট। এই গরমে একটু শীতলতার পরশ পেতে আইসক্রিমের দিকে নজর থাকে অনেকেরই। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, প্রায় সবাই আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন। খাওয়া মাত্রই শরীরের ভেতরে যে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। কিন্তু আইসক্রিম খেলে কি আসলেই শরীরের গরম কমে? নাকি হিতে হয় বিপরীত?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ঠান্ডায় জমানো আইসক্রিম ঠান্ডা হলেও এই খাবার কিন্তু শরীর ঠান্ডা করতে পারে না। উল্টো আইসক্রিমে থাকা ফুল ফ্যাট দুধ, ক্রিম, শর্করা হজম করা বেশ কষ্টকর। আইসক্রিম তৈরির উপাদানগুলো ভাঙতে গিয়ে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়।
কানাডার মাউন্ট সেন্ট ভিনসেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ্যার শিক্ষক এবং গবেষক বোধন লুহোভি বলছেন, ‘মূলত ফ্যাটযুক্ত দুধ ও চিনি, এই দুটি জিনিস দিয়ে আইসক্রিম তৈরি হয়। পরিপাকের সময়ে ফ্যাট ভাঙতে গেলে শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘ডায়েট-ইনডিউস্ড থারমোজেনেসিস’ বলা হয়।’
বোধন লুহোভি বলেন, ‘বিভিন্ন যৌগের মধ্যে ফ্যাটজাতীয় খাবারই ভাঙতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। আইসক্রিম খাওয়ার পর ঠান্ডার অনুভূতি সাময়িক। হজমের প্রক্রিয়াটি শুরু হলেই ঠান্ডা ভাব চলে যায়। এই আইসক্রিমের ফ্যাট এবং শর্করাই দেহে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। যা আসলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।’ আয়ুর্বেদও কিন্তু একই কথা বলছে। শুধু ঠান্ডা আইসক্রিম নয়, বরফ দেওয়া যেকোনো পানীয়ের ক্ষেত্রেই একই রকম সমস্যা হতে পারে। তাই ঠান্ডা তাপমাত্রার খাবার না খেয়ে শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে পারে-এমন প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই ভালো বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও আইসক্রিমে হিতে বিপরীত

আপডেট সময় : ১০:৩৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক : গরমে তাপদাহ বেড়েই চলেছে। ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই, গরমের কারণে সবাই ঘামছে, পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। গরমের সময় পিপাসাতে গলা শুকিয়ে যায়। পানির চাহিদাও বেশি থাকে। স্বাভাবিক মাত্রার পানির থেকে ফ্রিজের পানির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে সবার। কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবাণুমুক্ত স্বাভাবিক মাত্রার পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেন মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকে বেঁচে থাকে এবং পানি পান করে পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করে। শারীরবৃত্তীয় কর্মকা- স্বাভাবিক রাখার জন্য সকলের পানি পান করা জরুরি। তবে গরমের দিনে ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠান্ডা পানি পান করা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডা পানির উপকার তো নেইই বরং শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে হার্টের। তাছাড়া হজমের সমস্যা, ঠা-া লাগা, সাইনাস ব্লকেজ- এসবও ঠান্ডা পানির কারণেই হয়। চলুন তবে জেনে আসি ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরে কী কী ক্ষতি করে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোদ থেকে ঘুরে এসে ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করার ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মার একটা অতিরিক্ত আস্তরণ তৈরি হয়। যার শ্বাসযন্ত্রজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়। ঠান্ডা পানি পানের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় হার্টের। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা উপশিরা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে হার্টের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এই বাড়তি চাপ হার্টের জন্য একেবারেই ভালো না। সঙ্গে সঙ্গে কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জটিল হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভেতরের অংশে হঠাৎ করেই অনাহুত অস্বস্তি দেখা দেয়। এ ধরনের অস্বস্তি জ্বরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়। ঠা-া পানিতে শরীরে পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণ হয় না। ঠা-া পানিতে তৃষ্ণা মেটে চট করে, তৃপ্তি চলে আসে তাড়াতাড়ি। ফলে শরীর মনে করে তার আর পানি পানের প্রয়োজন নেই। ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। এই ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ভিষণ ক্ষতিকর। টনসিলের সমস্যা হতে পারে। ঠান্ডা পানিতে সহজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।
ঠান্ডা পানিতে খনিজের অনুপস্থিতি থাকে। সাধারণ পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানে পূর্ণ থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন শরীরের জন্য এরা আর কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে পানি থেকে শরীরের যে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়, সেটা অপূর্ণই থেকে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পাকস্থলী খাবার হজমের চাইতে ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পাকস্থলীর যে মূল দায়িত্ব সেই খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। শরীরের শক্তি ক্ষয় করে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যেহেতু স্বাভাবিক মাত্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাই ঠান্ডা পানি যখন পাকস্থলীতে জমা হয় তখন পাকস্থলী তা শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরের অহেতুক শক্তি খরচ হয়। ব্যায়ামের পরে ঠান্ডা পানি ক্ষতিকর। ব্যায়ামের পরে কক্ষতাপমাত্রা বা তার চেয়ে গরম পানি খাওয়া ভালো। কারণ ঠান্ডা পানি খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় না।
ঠান্ডা পানি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে মারাত্মক ভাবে। গরম থেকে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা মাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়। ফলে এনামেলে ফাটল ধরে। এছাড়া মাড়ি ক্ষয়ের অন্যতম একটি কারণও ঠান্ডা পানি।
শরীরের চর্বিজাতীয় পদার্থ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে সেগুলো শোষণ করা বা পুড়িয়ে ফেলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই চর্বিজাতীয় পদার্থ হজম করতে শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে শরীর তো ঠান্ডা হবেই না, আরও গরম হবে। আর ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে জরায়ুর সঙ্কোচন হয়। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের সঙ্কোচন গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই আজই ঠিক করুন ঠান্ডা পানি খাবেন, নাকি স্বাভাবিক। চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে ফিরেই পানি খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। শরীরের ঘাম শুকিয়ে এলে তারপর সাধারণ পানি খাওয়া যেতে পারে। এমনি পানির পরিবর্তে কেউ চাইলে ডাবের পানিও খেতে পারেন। ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
গরমের সময় শরীর ঘামতে থাকে। শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে শীতের তুলনায় গরমে বেশি দুর্বল লাগে। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে ও দুর্বলতা কাটাতে খেতে পারেন বিভিন্ন ফলের রস। যাদের ঠান্ডা-কাশি, দাঁতের সমস্যা, কোল্ড এলার্জি, হার্টের সমস্যা, মাথাব্যথা, সাইনাস আছে, সদ্য অপারেশন হয়েছে অথবা ওজন কমাতে চান— তারা একেবারেই খাবেন না। এ ছাড়া খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা পানি খাবেন না। একান্তই যদি খেতে হয়, খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে খান। অবশ্যই ঠান্ডা পানির সঙ্গে সমপরিমাণ বা বেশি স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে খাবেন।
আইসক্রিমে হিতে বিপরীত: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দেশে ধারাবাহিকভাবে জারি হচ্ছে হিট অ্যালার্ট। এই গরমে একটু শীতলতার পরশ পেতে আইসক্রিমের দিকে নজর থাকে অনেকেরই। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, প্রায় সবাই আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন। খাওয়া মাত্রই শরীরের ভেতরে যে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। কিন্তু আইসক্রিম খেলে কি আসলেই শরীরের গরম কমে? নাকি হিতে হয় বিপরীত?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ঠান্ডায় জমানো আইসক্রিম ঠান্ডা হলেও এই খাবার কিন্তু শরীর ঠান্ডা করতে পারে না। উল্টো আইসক্রিমে থাকা ফুল ফ্যাট দুধ, ক্রিম, শর্করা হজম করা বেশ কষ্টকর। আইসক্রিম তৈরির উপাদানগুলো ভাঙতে গিয়ে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়।
কানাডার মাউন্ট সেন্ট ভিনসেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ্যার শিক্ষক এবং গবেষক বোধন লুহোভি বলছেন, ‘মূলত ফ্যাটযুক্ত দুধ ও চিনি, এই দুটি জিনিস দিয়ে আইসক্রিম তৈরি হয়। পরিপাকের সময়ে ফ্যাট ভাঙতে গেলে শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘ডায়েট-ইনডিউস্ড থারমোজেনেসিস’ বলা হয়।’
বোধন লুহোভি বলেন, ‘বিভিন্ন যৌগের মধ্যে ফ্যাটজাতীয় খাবারই ভাঙতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। আইসক্রিম খাওয়ার পর ঠান্ডার অনুভূতি সাময়িক। হজমের প্রক্রিয়াটি শুরু হলেই ঠান্ডা ভাব চলে যায়। এই আইসক্রিমের ফ্যাট এবং শর্করাই দেহে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। যা আসলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।’ আয়ুর্বেদও কিন্তু একই কথা বলছে। শুধু ঠান্ডা আইসক্রিম নয়, বরফ দেওয়া যেকোনো পানীয়ের ক্ষেত্রেই একই রকম সমস্যা হতে পারে। তাই ঠান্ডা তাপমাত্রার খাবার না খেয়ে শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে পারে-এমন প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই ভালো বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা।