চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডা পানির উপকার তো নেইই বরং শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে হার্টের। তাছাড়া হজমের সমস্যা, ঠান্ডা লাগা, সাইনাস ব্লকেজ- এসবও ঠান্ডা পানির কারণেই হয়। চলুন তবে জেনে আসি ঠান্ডা পানি কী কী ক্ষতি করতে পারে।
হার্টের সমস্যা: ঠান্ডা পানি পানের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় হার্টের। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা উপশিরা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে হার্টের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এই বাড়তি চাপ হার্টের জন্য একেবারেই ভালো না। সঙ্গে সঙ্গে কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জটিল হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
জ্বর হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে: আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভেতরের অংশে হঠাৎ করেই অনাহুত অস্বস্তি দেখা দেয়। এ ধরনের অস্বস্তি জ্বরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।
শরীরে পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণ হয় না: ঠান্ডা পানিতে তৃষ্ণা মেটে চট করে, তৃপ্তি চলে আসে তাড়াতাড়ি। ফলে শরীর মনে করে তার আর পানি পানের প্রয়োজন নেই। ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। এই ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ভিষণ ক্ষতিকর।
টনসিলের সমস্যা হতে পারে: ঠান্ডা পানিতে সহজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।
খনিজের অনুপস্থিতি: সাধারণ পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানে পূর্ণ থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন শরীরের জন্য এরা আর কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে পানি থেকে শরীরের যে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়, সেটা অপূর্ণই থেকে যায়।
হজমের সমস্যা হয়: ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পাকস্থলী খাবার হজমের চাইতে ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পাকস্থলীর যে মূল দায়িত্ব সেই খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
শরীরের শক্তি ক্ষয় করে: আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যেহেতু স্বাভাবিক মাত্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাই ঠান্ডা পানি যখন পাকস্থলীতে জমা হয় তখন পাকস্থলী তা শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরের অহেতুক শক্তি খরচ হয়।
ব্যায়ামের পরে ঠান্ডা পানি ক্ষতিকর: ব্যায়ামের পরে কক্ষতাপমাত্রা বা তার চেয়ে গরম পানি খাওয়া ভালো। কারণ ঠান্ডা পানি খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় না।
দাঁতের ক্ষতি হয়: ঠান্ডা পানি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে মারাত্মক ভাবে। গরম থেকে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা মাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়। ফলে এনামেলে ফাটল ধরে। এছাড়া মাড়ি ক্ষয়ের অন্যতম একটি কারণও ঠান্ডা পানি।
গর্ভপাতের সম্ভাবনা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে জরায়ুর সঙ্কোচন হয়। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের সঙ্কোচন গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই আজই ঠিক করুন ঠান্ডা পানি খাবেন, নাকি স্বাভাবিক।