ঢাকা ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

গরমে চরম অবস্থা

  • আপডেট সময় : ০২:৩৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে এ তাপমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৬৫ সালের পর এটি দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
চরম গরমে শনিবারও (১৫ এপ্রিল) হাঁসফাঁস করেছেন নগরবাসী। ঢাকায় সহসা ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, আজ (শনিবার) ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালে বড় রেঞ্জে তাপপ্রবাহ হয়েছিল। তখন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেটা অতিক্রম করলো।
তিনি বলেন, এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। ১৯৬৫ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই হিসাবে বলা যায় ১৯৬৫ সালের পর এটাই (৪০ দশমিক ৪) সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। গত কিছুদিন ধরেই তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ৪ এপ্রিল দেশের ছয় জেলায় শুরু হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। এরপর ঝড়-বৃষ্টিহীনতায় ক্রমেই তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ে, বিস্তৃত হতে থাকে আওতা। সর্বশেষ শুক্রবার তীব্র থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। টানা তাপাদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে। হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গরমে অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে। বাইরে বের হওয়া দায়, যেন মরুভূমির গরম। প্রচ- রোদের তাপে কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাওয়ার খবর এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গায় শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা একদিন আগে ছিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়াবিদ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট বিভাগ) ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। আজ ১৬ এপ্রিলের পর থেকে সীমিত পরিসরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে হালকা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। মূলত ২৩ এপ্রিলের পর থেকে ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। এতে তাপপ্রবাহ দূর হতে থাকবে।
তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৭ ডিগ্রি বেশি, গরম বাড়বে আরও: উত্তাপ নিয়েই গ্রীষ্ম আসে। তবে এবার বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসটি আরও বেশি পোড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে। ঘরে থেকে বের হলেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস, ঘরের ভেতরও গুমোট অবস্থা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গেলে তো কথাই নেই, একেবারে সেদ্ধ হওয়ার দশা। এপ্রিল ও মে মাস এমনিতেই বছরের উষ্ণতম মাস। এ সময় বাংলাদেশে সূর্য তাপ দেয় খাড়াভাবে। ফলে গরম থাকে বেশি। তবে এই সময়টায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, তা দেখা যায় না সচরাচর। ঢাকায় এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির বেশি উত্তাপ গত ছয় দশকেরও বেশি সময়ে দেখা গেছে কেবল দুই বার। ১৯৬০ সালের এই মাসে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “ঢাকার কথা চিন্তা করলে এপ্রিলে সাধারণত আমাদের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারাদেশের কথা বিবেচনা করলে সেটা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ আমরা স্বাভাবিক বা গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি পাচ্ছি।”
কেন এবার এত তাপ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সময়ে যে উত্তাপটা থাকে, বৃষ্টি হলে কমে যায় সেটা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে, ৪ তারিখের পর থেকে, আমাদের গোটা দেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম, শূন্য বললেই চলে। হিট ওয়েবের পরিস্থিতিটি এ কারণে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।”
গরম বাড়বে আরও: চৈত্রের শেষ কয়েকটা দিনের অবস্থা আগাম বার্তা সত্য করে নতুন বছরের শুরুটা হয়েছিল তাপপ্রবাহকে সঙ্গী করে। বছরের দ্বিতীয় দিনে উত্তাপ বাড়ল আরও। বৈশাখের প্রথমদিনে যেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে দ্বিতীয় দিনে একই জেলায় পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রিতে।
সবশেষ ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। আর ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ড রয়েছে। তাপের রেকর্ড ভাঙছে রাজধানী ঢাকাও। বাংলা নববর্ষের দিন এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে তা আরও বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই তাপমাত্রা কমার আভাস নেই, উল্টো বাড়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতাটা রোববারও অব্যাহত থাকবে। এরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকবে, তারপর কিছুটা কমতে পারে। তবে খুব সহসাই খুব বেশি কমে আসবে না।” “এখন যদি ওয়াইড স্পেসে বা দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হত, তাহলে হয়ত তাপমাত্রাটা কমে যেত,” বলেন তিনি।
পূর্বাভাস কী? অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালী জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের বাকি অংশের উপর দিয়ে দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন, আছে লোডশেডিং-পানির সংকট: বৈশাখের আগে থেকেই ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েক দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা। অপ্রত্যাশিত এই গরমে রোজার মধ্যে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যে বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও পানির সংকট। বৈরী আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ, পানির সংকটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা। মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে সেহরির আগে পরে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। তীব্র গরমে পরিবারের সবার ঘুমাতে ও সেহরি করতে কষ্ট হয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ যাচ্ছে তবে এক ঘণ্টার আগেই তা ফিরে আসছে।
এদিকে, লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও পানির সংকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এছাড়া রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মেহেদীবাগ, মনসুরাবাদ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিংয়ে পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। উত্তর আদাবরের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম জানান, রাতে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে। তখন বালতি, পানির বোতল কিংবা জারে পানি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সকালে পানির প্রয়োজন হলে অন্য এলাকা থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে।
৪২ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ: চুয়াডাঙ্গায় গত দুদিন তীব্র তাপদহের পর আজ থেকে অতি তীব্র তাপদহ শুরু হয়েছে। প্রচ- রোদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। তবে এতে যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস। অপরদিকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী ২১ এপ্রিলের পর থেকে তাপদাহ কমতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তীব্র তাপদাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। শহরের বেশ কিছু সড়কের পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের অলিগলি, গ্রাম-গঞ্জে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও যারা রোজায় থাকছেন না তাদেরকে ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমিও দেখেছি শহরের কিছু স্থানে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। যান চলাচলে কোনো বিঘœ ঘটবে না। তবে পিচ বেশি গলে গেলে খোয়াগুলো নরম হয়ে চলাচলে বিঘœ ঘটবে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক বলেন, শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ১৪ দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে সেটাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। আগামী ২১ এপ্রিলের পর থেকে তাপদাহ কমতে পারে। চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হয়। সন্ধ্যার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাপপ্রবাহে নাকাল যশোরের জনজীবন: তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে যশোরের মানুষের জনজীবন। অস্বাভাবিক এই গরমে ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শনিবার দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ৩টা নাগাদ এ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তীব্র এ গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। যশোর বিমানবন্দর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটি আবহাওয়া দফতরের তথ্য মতে, গত কয়েকদিন ধরেই যশোরে তাপমাত্রার পারদ ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রিতে বিরাজ করছে। দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৩৪ শতাংশ। দুপুর ৩টা নাগাদ এ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে।
তীব্র এ গরমে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসা শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেককে গাছ তলায় অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখে গেছে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে সব বয়সী মানুষের ডায়রিয়াসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে। বয়স্ক যারা তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সময় যতদূর সম্ভব রোদে না বের হওয়া ভালো। শ্রমজীবী মানুষকে তো আটকে রাখা যাবে না। তাদের জন্যে পরামর্শ, সকাল সাড়ে দশটা ও বিকেলের দিকে যেন তারা কাজ করেন।’ বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার বিশেষ করে ডাব, ইফতারে ভাজা পোড়া খাবার পরিহারের পরামর্শ দেন তিনি।
মরুর দেশ সৌদি-আমিরাতের চেয়েও বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি: বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদাহ। প্রচ- তাপে শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে এখন। এমন প্রখর রোদ ও তাপ দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো বর্তমানে মরুর দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেশি। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসা ওয়েবসাইট ওয়েদারডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে তুলনায় মরুর দেশগুলো অনেকটাই ‘শীতল’ রয়েছে।
একইসময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজধানীতে শনিবারের তাপমাত্রা ছিল-ইয়েমেন, সানা- ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সংযুক্ত আরব আমিরাত, আবুধাবি- ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুরস্ক, আঙ্কারা- ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিরিয়া, দামেস্ক- ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৌদি আরব, রিয়াদ- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাতার, দোহা- ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফিলিস্তিন- ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওমান, মাসকাট- ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লেবানন, বৈরুত- ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়েত, কুয়েত সিটি- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জর্ডান, আম্মান- ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইরাক, বাগদাদ- ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইসরায়েল- ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইরান, তেহরান- ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মিসর, কায়রো- ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাহরাইন, মানামা, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের তাপমাত্রায় অঞ্চল ও শহর ভেদে তারতম্য রয়েছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে শনিবার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীতে এদিন যথাক্রমে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সত্ত্বেও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে। এমন তাপমাত্রার সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন বাংলাদেশিরা।
অভাবনীয় গরমে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ: ভয়ঙ্কর গরমে হাঁসফাঁস করছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজধানী কলকাতায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে অন্তত ১১টিতে তাপমাত্রা বর্তমানে ৪০ ডিগ্রি বা তার কিছু বেশি। ভারতে সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে তাপামাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়ায় দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে। কিন্তু চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, অন্যদিকে দিল্লির তাপামাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের গরমে আদ্রতা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এবার এই গরম ব্যতিক্রম। অত্যন্ত শুকনো এবং প্রায় জলীয়বাস্পশূন্য। পুরো রাজ্য জুড়ে শুকনো গরম বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গরমে চরম অবস্থা

আপডেট সময় : ০২:৩৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে এ তাপমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৬৫ সালের পর এটি দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
চরম গরমে শনিবারও (১৫ এপ্রিল) হাঁসফাঁস করেছেন নগরবাসী। ঢাকায় সহসা ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, আজ (শনিবার) ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালে বড় রেঞ্জে তাপপ্রবাহ হয়েছিল। তখন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেটা অতিক্রম করলো।
তিনি বলেন, এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। ১৯৬৫ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই হিসাবে বলা যায় ১৯৬৫ সালের পর এটাই (৪০ দশমিক ৪) সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। গত কিছুদিন ধরেই তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ৪ এপ্রিল দেশের ছয় জেলায় শুরু হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। এরপর ঝড়-বৃষ্টিহীনতায় ক্রমেই তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ে, বিস্তৃত হতে থাকে আওতা। সর্বশেষ শুক্রবার তীব্র থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। টানা তাপাদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে। হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গরমে অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে। বাইরে বের হওয়া দায়, যেন মরুভূমির গরম। প্রচ- রোদের তাপে কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাওয়ার খবর এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গায় শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা একদিন আগে ছিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়াবিদ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট বিভাগ) ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। আজ ১৬ এপ্রিলের পর থেকে সীমিত পরিসরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে হালকা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। মূলত ২৩ এপ্রিলের পর থেকে ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। এতে তাপপ্রবাহ দূর হতে থাকবে।
তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৭ ডিগ্রি বেশি, গরম বাড়বে আরও: উত্তাপ নিয়েই গ্রীষ্ম আসে। তবে এবার বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসটি আরও বেশি পোড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে। ঘরে থেকে বের হলেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস, ঘরের ভেতরও গুমোট অবস্থা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গেলে তো কথাই নেই, একেবারে সেদ্ধ হওয়ার দশা। এপ্রিল ও মে মাস এমনিতেই বছরের উষ্ণতম মাস। এ সময় বাংলাদেশে সূর্য তাপ দেয় খাড়াভাবে। ফলে গরম থাকে বেশি। তবে এই সময়টায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, তা দেখা যায় না সচরাচর। ঢাকায় এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির বেশি উত্তাপ গত ছয় দশকেরও বেশি সময়ে দেখা গেছে কেবল দুই বার। ১৯৬০ সালের এই মাসে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “ঢাকার কথা চিন্তা করলে এপ্রিলে সাধারণত আমাদের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারাদেশের কথা বিবেচনা করলে সেটা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ আমরা স্বাভাবিক বা গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি পাচ্ছি।”
কেন এবার এত তাপ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সময়ে যে উত্তাপটা থাকে, বৃষ্টি হলে কমে যায় সেটা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে, ৪ তারিখের পর থেকে, আমাদের গোটা দেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম, শূন্য বললেই চলে। হিট ওয়েবের পরিস্থিতিটি এ কারণে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।”
গরম বাড়বে আরও: চৈত্রের শেষ কয়েকটা দিনের অবস্থা আগাম বার্তা সত্য করে নতুন বছরের শুরুটা হয়েছিল তাপপ্রবাহকে সঙ্গী করে। বছরের দ্বিতীয় দিনে উত্তাপ বাড়ল আরও। বৈশাখের প্রথমদিনে যেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে দ্বিতীয় দিনে একই জেলায় পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রিতে।
সবশেষ ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। আর ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ড রয়েছে। তাপের রেকর্ড ভাঙছে রাজধানী ঢাকাও। বাংলা নববর্ষের দিন এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে তা আরও বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই তাপমাত্রা কমার আভাস নেই, উল্টো বাড়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতাটা রোববারও অব্যাহত থাকবে। এরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকবে, তারপর কিছুটা কমতে পারে। তবে খুব সহসাই খুব বেশি কমে আসবে না।” “এখন যদি ওয়াইড স্পেসে বা দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হত, তাহলে হয়ত তাপমাত্রাটা কমে যেত,” বলেন তিনি।
পূর্বাভাস কী? অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালী জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের বাকি অংশের উপর দিয়ে দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন, আছে লোডশেডিং-পানির সংকট: বৈশাখের আগে থেকেই ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েক দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা। অপ্রত্যাশিত এই গরমে রোজার মধ্যে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যে বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও পানির সংকট। বৈরী আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ, পানির সংকটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা। মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে সেহরির আগে পরে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। তীব্র গরমে পরিবারের সবার ঘুমাতে ও সেহরি করতে কষ্ট হয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ যাচ্ছে তবে এক ঘণ্টার আগেই তা ফিরে আসছে।
এদিকে, লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও পানির সংকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এছাড়া রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মেহেদীবাগ, মনসুরাবাদ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিংয়ে পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। উত্তর আদাবরের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম জানান, রাতে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে। তখন বালতি, পানির বোতল কিংবা জারে পানি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সকালে পানির প্রয়োজন হলে অন্য এলাকা থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে।
৪২ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ: চুয়াডাঙ্গায় গত দুদিন তীব্র তাপদহের পর আজ থেকে অতি তীব্র তাপদহ শুরু হয়েছে। প্রচ- রোদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। তবে এতে যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস। অপরদিকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী ২১ এপ্রিলের পর থেকে তাপদাহ কমতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তীব্র তাপদাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। শহরের বেশ কিছু সড়কের পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের অলিগলি, গ্রাম-গঞ্জে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও যারা রোজায় থাকছেন না তাদেরকে ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমিও দেখেছি শহরের কিছু স্থানে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। যান চলাচলে কোনো বিঘœ ঘটবে না। তবে পিচ বেশি গলে গেলে খোয়াগুলো নরম হয়ে চলাচলে বিঘœ ঘটবে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক বলেন, শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ১৪ দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে সেটাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। আগামী ২১ এপ্রিলের পর থেকে তাপদাহ কমতে পারে। চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হয়। সন্ধ্যার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাপপ্রবাহে নাকাল যশোরের জনজীবন: তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে যশোরের মানুষের জনজীবন। অস্বাভাবিক এই গরমে ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শনিবার দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ৩টা নাগাদ এ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তীব্র এ গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। যশোর বিমানবন্দর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটি আবহাওয়া দফতরের তথ্য মতে, গত কয়েকদিন ধরেই যশোরে তাপমাত্রার পারদ ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রিতে বিরাজ করছে। দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৩৪ শতাংশ। দুপুর ৩টা নাগাদ এ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে।
তীব্র এ গরমে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসা শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেককে গাছ তলায় অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখে গেছে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে সব বয়সী মানুষের ডায়রিয়াসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে। বয়স্ক যারা তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সময় যতদূর সম্ভব রোদে না বের হওয়া ভালো। শ্রমজীবী মানুষকে তো আটকে রাখা যাবে না। তাদের জন্যে পরামর্শ, সকাল সাড়ে দশটা ও বিকেলের দিকে যেন তারা কাজ করেন।’ বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার বিশেষ করে ডাব, ইফতারে ভাজা পোড়া খাবার পরিহারের পরামর্শ দেন তিনি।
মরুর দেশ সৌদি-আমিরাতের চেয়েও বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি: বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদাহ। প্রচ- তাপে শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে এখন। এমন প্রখর রোদ ও তাপ দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো বর্তমানে মরুর দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেশি। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসা ওয়েবসাইট ওয়েদারডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে তুলনায় মরুর দেশগুলো অনেকটাই ‘শীতল’ রয়েছে।
একইসময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজধানীতে শনিবারের তাপমাত্রা ছিল-ইয়েমেন, সানা- ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সংযুক্ত আরব আমিরাত, আবুধাবি- ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুরস্ক, আঙ্কারা- ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিরিয়া, দামেস্ক- ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৌদি আরব, রিয়াদ- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাতার, দোহা- ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফিলিস্তিন- ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওমান, মাসকাট- ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লেবানন, বৈরুত- ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়েত, কুয়েত সিটি- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জর্ডান, আম্মান- ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইরাক, বাগদাদ- ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইসরায়েল- ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইরান, তেহরান- ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মিসর, কায়রো- ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাহরাইন, মানামা, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের তাপমাত্রায় অঞ্চল ও শহর ভেদে তারতম্য রয়েছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে শনিবার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীতে এদিন যথাক্রমে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সত্ত্বেও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে। এমন তাপমাত্রার সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন বাংলাদেশিরা।
অভাবনীয় গরমে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ: ভয়ঙ্কর গরমে হাঁসফাঁস করছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজধানী কলকাতায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে অন্তত ১১টিতে তাপমাত্রা বর্তমানে ৪০ ডিগ্রি বা তার কিছু বেশি। ভারতে সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে তাপামাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়ায় দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে। কিন্তু চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, অন্যদিকে দিল্লির তাপামাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের গরমে আদ্রতা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এবার এই গরম ব্যতিক্রম। অত্যন্ত শুকনো এবং প্রায় জলীয়বাস্পশূন্য। পুরো রাজ্য জুড়ে শুকনো গরম বাতাস বয়ে যাচ্ছে।