ডা. সাইফ হোসেন খান
গরমে একটু পানির পরশেই প্রশান্তি। প্রচণ্ড গরমে একাধিকবার গোসল করেন অনেকে। তবে রোজই একাধিকবার গোসল করা ঠিক কি না, সে-ও এক প্রশ্ন। আর সবার জন্য তা সম্ভবও নয়। গরমে কোন সময় গোসল করলে তা আপনার সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে, জানেন কি?
কারো কারো সকালে গোসল করার অভ্যাস। সারা দিনের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গোসল করে আয়েশ করতে চান কেউ কেউ। রাতে ঘুমের আগেও গোসল করতে পছন্দ করেন অনেকে। সারা দিন বাসায় থাকলে দুপুরেও গোসল সারি আমরা। প্রশ্ন হলো, সারা দিনে কতবার গোসল করা ভালো? আর কোন সময়টা গোসলের জন্য বেছে নেওয়া উত্তম? তা হেলো-
দিনে কতবার গোসল করবেন: গরমে বারবার গোসল করা আপাতদৃষ্টে স্বস্তিদায়ক। তবে তা বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। একাধিকবার গোসল করা হলে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেকের ত্বকে স্বাভাবিকভাবে যে উপকারী জীবাণু থাকে, একাধিকবার গোসল করা হলে সেসবের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় একবার গোসল করাই সবচেয়ে ভালো।
এ কথাও ভুলে যাওয়া যাবে না যে, পৃথিবীতে সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে দিন দিন। গোসলের জন্য বারবার পানি অপচয় না করেও বিকল্প উপায়ে আপনি স্বস্তিতে থাকতে পারেন। তাতে পৃথিবীর জন্যও পরোক্ষভাবে কিছু করা হবে।
কোন সময় গোসল করবেন: বাইরের রোদ বা ধুলাময়লা থেকে আসার পর গোসল করার প্রয়োজন হয়। তাই রোজ একবার গোসল করলে এ সময়টা বরাদ্দ রাখতে পারেন। যারা প্রশান্তিদায়ক ঘুমের জন্য রাতে গোসল করেন, তারাও রাতের পরিবর্তে দুপুর, বিকেল বা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গোসল করতে পারেন। এ সময় গোসল করার পর খুব একটা ভারী কাজ করা না হলে শোয়ার সময়ও শরীর খুব একটা ঘামবে না বা উষ্ণ হয়ে উঠবে না।
সারা দিন বাইরে না গেলে দুপুরের দিকটাই বেছে নিতে পারেন গোসলের জন্য। রান্নাবান্নার কাজ করলে তা সেরে এ সময়টায় গোসল করলে আরাম পাবেন।
খেয়াল রাখুন: দুপুর বা বিকেলের দিকে রোদের তাপে পানি গরম হয়ে যেতে পারে। তাই সকালের দিকেই বালতিতে পানি ধরে ঢেকে রাখুন। তাতে আপনি গোসলের সময় অনায়াসেই ঠান্ডা পানি পেয়ে যাবেন। বাথটাব কিংবা শাওয়ারে গোসল করলে অকারণে যত পানি অপচয় হয়, বালতির পানিতে গোসল করলে তা হয় না। এ ছাড়া পানিতে ময়লা থাকলে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যেই তা বালতির নিচে তলানি হিসেবে জমা হবে। নিচের এই পানিটুকু আপনি গোসলের কাজে ব্যবহার না করে গাছের গোড়ায় দিতে পারেন।
অন্য সময় যদি গোসল করতে চান: এমনও অনেকে থাকতে পারেন, যাদের পক্ষে সকালে বা রাতে গোসল করার অভ্যাস ছাড়া কঠিন। তারা কিন্তু অভ্যাস অনুযায়ী সেই সময় গোসল করলেও খুব একটা সমস্যা নেই। বাইরে থেকে ফিরে গোসল না করে কেবল পোশাক বদলে হাত-পা এবং মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিলেও চলে।
রোদ বা ধুলাময়লার কারণে ত্বকের যতা ক্ষতি হয়, বাইরে যাওয়ার সময় পাতলা সুতি কাপড়ের ফুলহাতা পোশাক এবং পায়জামা বা প্যান্ট পরা হলে কিন্তু ততা ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া শরীরের যেসব অংশে বেশি ঘাম হয়, ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে সেসব অংশ মুছে ফেলুন।
সারা দিন বা রাতের যেকোনো সময়ই এভাবে হাত, মুখ, মাথা, বগল, কুঁচকি ভিজিয়ে নিতে পারেন। আরাম পাবেন। খুব বেশি গরম আবহাওয়ায় আপনি চাইলে কাপড়ে কিছু বরফের কুচি (কুচি করা সম্ভব না হলে আস্ত বরফ) পেঁচিয়ে বগলের নিচে ধরে রাখতে পারেন মিনিট দশেকের জন্য।
লেখক: মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ