ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

গম নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় শত শত ট্রাক

  • আপডেট সময় : ০২:৫১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুন ২০২২
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিষেধাজ্ঞা নেই, কাগজপত্রও সব ঠিক- তবু গম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না শত শত ভারতীয় ট্রাক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থলবন্দরে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আনুমানিক চার লাখ টন গম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলো। ভারতের কাস্টম কর্তৃপক্ষ গমবোঝাই ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে গমগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। সেটি হলে কোটি কোটি রুপি লোকসান গুনতে হবে তাদের।
গত ১৩ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে গম রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া ওই নিষেধাজ্ঞায় বৈশ্বিক গম সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট আরও তীব্র হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে ডিজিএফটি জানায়, ১৩ মে’র আগে গমের জন্য যেসব ঋণপপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোর চালান পাঠানো যাবে।
পশ্চিমবঙ্গ রপ্তানিকারক সমন্বয় কমিটির (ডব্লিউবিইসিসি) সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেছেন, (মালদা জেলার) মাহাদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন গম আটকে রয়েছে। এসব চালানের জন্য আমরা ১৩ মে’র আগে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি। এসব চালান বহনকারী ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় রপ্তানিকারক বলেন, ডিজিএফটি সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছে, যেসব গমের চালানে ১৩ মে’র আগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, গমের চালানগুলো যেন রপ্তানি করা যায়, যেগুলোর সব আনুষ্ঠানিকতা নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ হয়েছে, এমন একটি আদেশ দেয় ডিজিএফটি।
এ বিষয়ে জানতে এক কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল দ্য টেলিগ্রাফ। তিনি বলেছেন, ডিজিএফটি থেকে আমাদের একটি নির্দেশনা দরকার। তা না হলে ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
গত ২৮ মে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গোয়ালের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল ডব্লিউবিইসিসি। তাতে গমবোঝাই ট্রাকগুলো যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, সে বিষয়ে একটি আদেশ জারির জন্য ডিজিএফটি’কে অনুরোধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানিকারকরা।
একই অবস্থা কুচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও। চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিমল কুমার ঘোষ জানান, গত ১২ মে থেকে সীমান্তে গমবোঝাই প্রায় দেড় হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পাওনা সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ঋণপত্রগুলো ইস্যু করা হয়েছিল বাংলাদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পরিস্থিতিটি বিবেচনা করা। বিধিনিষেধ আরোপের আগে রপ্তানির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি উদ্বেগপ্রকাশ করে বলেন, এ অঞ্চলে এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই বস্তাগুলো ট্রাকে থাকলে গম পচে যেতে পারে। তিনি বলেন, ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে বস্তায় পানি ঢুকে গমের ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেলে চালানের একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাবে, যা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।
মালদার এক রপ্তানিকারক বলেছেন, গত ১৩ মে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় চার লাখ টন গম আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। কারণ, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য অন্য দেশ থেকে কেনার পরিবর্তে ভারতীয় গম কেনা প্রায় ৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে ভারত।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মিটফোর্ড হাসপাতাল ‘শাটডাউন’ ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

গম নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় শত শত ট্রাক

আপডেট সময় : ০২:৫১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুন ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিষেধাজ্ঞা নেই, কাগজপত্রও সব ঠিক- তবু গম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না শত শত ভারতীয় ট্রাক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থলবন্দরে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আনুমানিক চার লাখ টন গম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলো। ভারতের কাস্টম কর্তৃপক্ষ গমবোঝাই ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে গমগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। সেটি হলে কোটি কোটি রুপি লোকসান গুনতে হবে তাদের।
গত ১৩ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে গম রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া ওই নিষেধাজ্ঞায় বৈশ্বিক গম সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট আরও তীব্র হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে ডিজিএফটি জানায়, ১৩ মে’র আগে গমের জন্য যেসব ঋণপপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোর চালান পাঠানো যাবে।
পশ্চিমবঙ্গ রপ্তানিকারক সমন্বয় কমিটির (ডব্লিউবিইসিসি) সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেছেন, (মালদা জেলার) মাহাদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন গম আটকে রয়েছে। এসব চালানের জন্য আমরা ১৩ মে’র আগে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি। এসব চালান বহনকারী ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় রপ্তানিকারক বলেন, ডিজিএফটি সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছে, যেসব গমের চালানে ১৩ মে’র আগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, গমের চালানগুলো যেন রপ্তানি করা যায়, যেগুলোর সব আনুষ্ঠানিকতা নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ হয়েছে, এমন একটি আদেশ দেয় ডিজিএফটি।
এ বিষয়ে জানতে এক কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল দ্য টেলিগ্রাফ। তিনি বলেছেন, ডিজিএফটি থেকে আমাদের একটি নির্দেশনা দরকার। তা না হলে ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
গত ২৮ মে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গোয়ালের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল ডব্লিউবিইসিসি। তাতে গমবোঝাই ট্রাকগুলো যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, সে বিষয়ে একটি আদেশ জারির জন্য ডিজিএফটি’কে অনুরোধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানিকারকরা।
একই অবস্থা কুচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও। চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিমল কুমার ঘোষ জানান, গত ১২ মে থেকে সীমান্তে গমবোঝাই প্রায় দেড় হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পাওনা সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ঋণপত্রগুলো ইস্যু করা হয়েছিল বাংলাদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পরিস্থিতিটি বিবেচনা করা। বিধিনিষেধ আরোপের আগে রপ্তানির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি উদ্বেগপ্রকাশ করে বলেন, এ অঞ্চলে এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই বস্তাগুলো ট্রাকে থাকলে গম পচে যেতে পারে। তিনি বলেন, ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে বস্তায় পানি ঢুকে গমের ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেলে চালানের একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাবে, যা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।
মালদার এক রপ্তানিকারক বলেছেন, গত ১৩ মে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় চার লাখ টন গম আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। কারণ, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য অন্য দেশ থেকে কেনার পরিবর্তে ভারতীয় গম কেনা প্রায় ৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে ভারত।