নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভিড় করাকে ভালো চোখে দেখছেন না দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাকে গভীর রাতে মোবাইলফোনে কোনো মেসেজ না দিতেও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে বলতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের ব্যাপারগুলো হলো-রাতে মোবাইল সাইলেন্ট করি, সকালে দেখি মোবাইল ভরে গেছে। সারারাত মেসেজ আসে, বেশিরভাগই পড়ি।
‘আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার প্রার্থীরাও এর মধ্যে (মেসেজ দেয়) আছে। এসব জ্বালাতন, প্লিজ! সকালে উঠলে আমার মেডিটেশন আছে, বাইরে যেতে হয়। সকালে উঠলে মেসেজ পড়তে পড়তে শেষ, সময় ফুরিয়ে যায়। দয়া করে আমাকে মেসেজ দেবেন না।’
গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির এ সভার আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছাত্রলীগের জন্য করে দেওয়া ‘সুন্দর অফিস’ ব্যবহার করতেও সংগঠনটিকে পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখানে (ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়) আসে। তদবির করলে (বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের) ওই অফিসে, এখানে তো তাদের আসার কথা না।’
‘কেউ মনে করবেন না আমার থেকে আমার অতিউৎসাহী ভক্ত যারা তারা সুবিধা পাবেন। বাড়ি নোয়াখালী হোক আর কোম্পানিগঞ্জ হোক তাতে কিছু আসে যায় না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সব নেতাকর্মীকে একই চোখে দেখি। এলাকায় গেলেও কারো প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে পারি না।’
আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে কাউকে তার অতিউৎসাহী ভক্ত না সাজার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পার্টির নেতাকর্মীদের মনের খবর শেখ হাসিনার চেয়ে কেউ বেশি জানেন না। নেতাকর্মী, কাউন্সিলদের মনের খবর, জীবনের খবর, কে অসুস্থ কে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সব খবরই তিনি রাখেন। কাজেই এ পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।’
১৪ বছরের আগের আওয়ামী লীগ আর আজকের আওয়ামী লীগ এক নয় মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল পাওয়ারে পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের রূপান্তরের রূপকার হয়েছেন তিনি। তাই আমার অতিউৎসাহী ভক্ত হয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। আমি ভালো আছি, নেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকব।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি আরও বলেন, ‘এক নেতা একাধিক পদে বা উপকমিটিতে থাকতে পারবে না। কেউ যদি থাকে তাহলে বাদ দেয়া হবে। এমনকি যারা জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সম্পৃক্ত তাদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম থাকবে।’ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনা আছে সম্মেলনকে ঘিরে বর্ণাঢ্য আয়োজন, সাজসজ্জা করা হবে না। মানুষ কষ্টে আছে, সংকটে আছে। তাই এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিলাসবহুল সন্মেলন শোভা পায় না। বিশ্বসংকট বাংলাদেশকেও সংকটে ফেলছে। এবার একদিনের সম্মেলনে হবে। সম্মেলন উপলক্ষে পোস্টার ডিজাইন করা হবে নতুন করে।’
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে। তাদের জাতীয় সম্মেলন কবে হয়েছে মনে আছে? তাদের জাতীয় কমিটির সভা কবে হয়েছে মনে আছে?’
‘যারা দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা করে না তারা কিভাবে দেশের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা করবে? তাদের দল ও সংগঠন করার দরকার নাই। তাদের দরকার নালিশ করা এ জন্য কয়েকজন লোক দরকার। সকাল হলেই বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বসে নাস্তা করা নালিশ করা এ হলো তাদের কাজ।’ বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ ঈর্ষানিত হচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নেই। আওয়ামী লীগ যেসকল জেলায় সম্মেলন করছে সেগুলো নিয়মিত কাজ।’
‘সরকারের উন্নয়ন দেখে বিএনপি ঈর্ষান্বিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও উদ্দেশ্য দেশের মানুষের সেবার মোহ। আর বিএনপির কাছে ক্ষমতার মোহ হলো হাওয়া ভবন।বিএনপিকে আমাদের দুর্বল করার প্রয়োজন নেই, তাদের নেতিবাচক কাজের কারণেই তারা দুর্বল হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের যত কাজ তত প্রচার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে প্রচার বাড়াতে হবে। এদেশের জন্য শেখ হাসিনা যা করেছে অন্য কোনো সরকার তা করেননি।ডিসেম্বর শেষে মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে। শেখ হাসিনার কাছে ইতোমধ্যে সামারি পাঠানো হয়েছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় প্রচার করতে হবে। ব্যানার পোস্টারের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা যাবে বেশি। তাই সবাইকে এ মাধ্যমে ব্যবহার করে প্রচার করতে হবে।’
প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ প্রমুখ নেতাকর্মী।
গভীর রাতে মেসেজ দেবেন না, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওবায়দুল কাদের
ট্যাগস :
গভীর রাতে মেসেজ দেবেন না
জনপ্রিয় সংবাদ