অজয় কুমার রায় : জন্মদিনের আজকের শুভক্ষণে আমি গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সুন্দর, উজ্জ্বল লেখক জীবনের প্রত্যাশা করি। নানা অভিধায়, সমৃদ্ধ নীলফামারীর ভূমিপুত্র কবি, লেখক, গবেষক, আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম সরকার শৈশবে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিস্তা নদীর তীরে। নদীপাড়ের সেই মানুষটি আজ লেখালেখি আর গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
একজন লেখকের সবচেয়ে বড় গুণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর কেউ কখনও খুঁজতে চেয়েছেন কি না জানি না। তবে আমি তাঁকেই প্রকৃত লেখক বলি, যিনি লেখার এবং আদর্শের প্রতি কমিটেড থাকেন। দায়িত্বের প্রতি কর্মনিষ্ঠা, চিন্তার সচলতা ও স্বচ্ছতা এবং বিচক্ষণ দুরদর্শিতা না থাকলে কখনই একজন পরিপূর্ণ লেখক হওয়া যায় না। একজন যোগ্য ও মানসম্মত গবেষক ও লেখককে হতে হবে সৎ, উদার, ধৈর্যশীল ও সাহসী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে স্মরণশক্তি ও মেধার প্রখরতা। এই গুণগুলোর সমন্বয় ঘটেছে বলেই সাধারণ মানুষ হয়েও জাহাঙ্গীর আলম সরকার ধীরে ধীরে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন।
লেখালেখিতে মেধা ও সৃজনশীলতার স্পর্শ রেখে যিনি বরাবরই আপোসহীন, অবিচল থেকেছেন। উত্তরবঙ্গের শাশ্বত জীবনধারার ইতিহাস সংস্কৃতি বহুকালের পরম্পরায় অসংখ্য যুগন্ধর মানুষের জন্ম দিয়েছে। উদার প্রকৃতি বন্যা, খরা আর তীব্র শীতের সাথে বিরামহীন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছিলেন বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। গবেষক, কবি ও লেখক জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে আগে সেভাবে জানতাম না। বছর কয়েক পূর্বে পরিচয়। লেখালেখির সূত্রে সেই পরিচয় ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর লেখা ‘নীলফামারীর ইতিহাস’ আমার চোখে পড়েছে ঠিকই, কিন্ত সেভাবে গ্রাহ্য করিনি আমি। তবে সম্প্রতি তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ আমার চোখ এড়িয়ে যেতে পারেনি। আমি তাঁর গ্রন্থ পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছি।
মুজিববর্ষে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ইতিবৃত্ত; বঙ্গবন্ধু হত্যা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ; বঙ্গবন্ধুর গল্প; গল্প-কথায় বঙ্গবন্ধু শিরোনামে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধু শিরোনামে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন তিনি, যা বর্তমানে প্রকাশের অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধু হত্যা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ গ্রন্থটি সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মো. এমরান জাহান বলেছেন―লেখক, গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রণীত বঙ্গবন্ধু হত্যা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ শীর্ষক গ্রন্থটিতে নানা তথ্য-উপাত্তের সমাবেশ ঘটিয়ে ইতিহাস ও আইনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে বইটি লিখেছেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। গ্রন্থটিতে প্রিয়ভাজন জাহাঙ্গীর আলম সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সওয়াল-জবাব কী ছিল সে বিষয়ে একটি দীর্ঘ ও বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। ফলে একটি সমৃদ্ধ প্রকাশনা হিসেবে তাঁর এ গ্রন্থটি সুধীমহলে সুনাম অর্জন করেছে।
লেখক, গবেষক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার রচিত সর্বাধিক বিক্রিত গ্রন্থের নাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ভাষ্য। ২০২০ সালে গ্রন্থটির ২৫০০ কপি প্রকাশ হওয়ার পরবর্তী চার মাসেই শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে গ্রন্থটি সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে এসেছে। গ্রন্থটি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেছেন―প্রথম সংস্করণের গ্রন্থগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া লেখক, গবেষক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকারের জন্য একটি বড় অর্জন। গ্রন্থটির পাতায় পাতায় গভীর পর্যালোচনা ও পরিশ্রমের উপস্থিতি অনুভব করা যায়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মান্যবর বিচারপতি গ্রন্থটি সম্পর্কে বলেছেন―গ্রন্থটি লেখকের কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল। কারণ গ্রন্থটিতে আইনজীবী হিসেবে আইনের প্রায়োগিকক্ষেত্রে লেখকের অর্জিত দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, তথ্য, ভাষ্য এবং কেইস ল সহকারে বিষযটি সুবিন্যস্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইন গ্রন্থটি নিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেছেন―নারী ও শিশু বিষয়ে মামলা করতে গিয়ে আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের সময় যে সকল বিষয় প্রয়োজন হয়, সে সকল বিষয় লেখক, গবেষক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকারের গ্রন্থটিতে উত্থাপিত ও লিপিবদ্ধ হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, তরুণদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম সরকার বহুমাত্রিক গুণে গুণান্বিত একজন গবেষক। তিনি সংবাদপত্রে লেখালেখি করেছেন; আইনজীবী হিসেবে অধিকারবঞ্চিত সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এবং একই সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন গবেষক হিসেবে গবেষণার সাথেও যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি আইন ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সমগ্র রচনার দিকে তাকালে তাঁকে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী ও শিকড়মুখী বলা যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, জাহাঙ্গীর আলম সরকারের আত্মবিকাশের ক্ষেত্র প্রধানত তিনটা- প্রবন্ধ, গবেষণা ও কবিতা। তিনটি ক্ষেত্রেই জাহাঙ্গীর আলম সরকার নিজস্বতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন প্রতিনিয়তই। সময় হয়তো একদিন তাঁর সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতি দিবে। তিনি আইনের জগতকেই শুধু নয়, বরং বাংলা সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করবেন-এই প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। হয়তো তাঁর কলম থেকেই একদিন বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ হবে। আজ তাঁর বিয়াল্লিশতম জন্মদিনে জানাই আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা অভিনন্দন।
ভালো থাকুন প্রিয় লেখক-সৃষ্টিশীলতাকে সঙ্গী করে নতুন নতুন গ্রন্থ’ লিখুন আর সমৃদ্ধ করুন বাংলা সাহিত্যের অমিয় ভা-ার; এবারের জন্মদিনে এতটুকুই প্রত্যাশা।
অজয় কুমার রায় : কবি, লেখক ও গবেষক।
ধলড়ুশৎ১৯৮৬@মসধরষ.পড়স
গবেষণা আরো বিকশিত হোক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ