ঢাকা ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

গবেষণায় জানা গেল চুমুর ইতিহাস কোটি বছর পুরানো

  • আপডেট সময় : ০৯:১০:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: চুমুর ইতিহাস মানুষের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি প্রাচীন বলে উঠে এসেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নতুন এক গবেষণায়। গবেষণার অনুসারে, প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ বছর আগে মানুষ ও এপ বা বানরের সাধারণ পূর্বপুরুষদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছে চুমু। এমনকি মানুষের বিলুপ্ত আত্মীয় নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও চুমুর প্রচলন ছিল।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেইভিয়ার’-এ। গবেষণায় প্রথমবারের মতো ধারণা মিলেছে, চুমুর ইতিহাস খুবই পুরানো এবং চুমু কেবল সামাজিক অভ্যাস নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভূত এক আচরণ।

অনেক প্রজাতির মধ্যে চুমু দেখা গেলেও বিষয়টি অদ্ভুত এক জৈবিক ধাঁধা। কারণ চুমুর মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে এবং সরাসরি বেঁচে থাকতে বা সন্তানধারণে কোনো সুবিধা দেয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবে বিবেচনা করলে চুমু ‘দরকারি আচরণ নয়’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। চুমু সরাসরি বেঁচে থাকার বা প্রজননের সুবিধা না দিলেও অনেক সমাজে এটি আবেগ, ভালোবাসা ও সামাজিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর আগ পর্যন্ত গবেষকরা সত্যিই গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণ করেননি চুমু কীভাবে ও কখন শুরু হয়।
প্রাইমেট বা প্রধান বানরের মধ্যে চুমুর বিবর্তনীয় ইতিহাস গবেষণা করতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে অক্সফোর্ডের গবেষণা দলটি। তাদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, চুমু কোনো আধুনিক আবিষ্কার নয়, বরং এটি প্রাচীন এক আচরণ, যা মানুষ ছাড়াও এপদের মধ্যে দেখা গিয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এ আচরণ প্রায় সাড়ে দুই কোটি ১৫ লাখ থেকে এক কোটি ৬৯ লাখ বছর আগে উদ্ভূত এবং তখন থেকেই প্রাইমেটদের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে চলে এসেছে। আজও শিম্পাঞ্জি, বোনোবো ও ওরাংওটাংদের মধ্যে চুমুর দেখা মেলে।

গার্ডিয়ান লিখেছে, এ গবেষণায় জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে, মানুষের প্রাচীন আত্মীয় নিয়ান্ডারথালরাও চুমু খেতেন। তবে এটিই প্রথমবার নয়। আগের কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। তাদের মুখের একই ধরনের জীবাণু থেকে ইঙ্গিত মেলে, দুই আলাদা প্রজাতি হয়ে যাওয়ার পরেও মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মুখের লালা বিনিময়, অর্থাৎ চুম্বন হয়েছিল। নতুন বিবর্তনীয় বিশ্লেষণের সঙ্গে এসব প্রমাণ মিলিয়ে গবেষকরা বলছেন, চুমু মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের স্বাভাবিক একটি অংশ ছিল।

গবেষণার জন্য প্রথমে চুমুর একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা তৈরি করতে হয়েছিল গবেষকদের। বিষয়টি যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ ছিল না। কারণ প্রাণীরা প্রায়ই মুখের মাধ্যমে এমন আচরণ করে, যা চুমুর মতো দেখায়। তবে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে, যেমন– খাবার ভাগ করা বা আক্রমণের উদ্দেশ্যে।

চুমু হবে কোমল, আক্রমণাত্মক নয় এমন মুখ-মুখে স্পর্শ, যেখানে কোনো খাবার বিনিময় হয় না– এভাবেই চুমুকে সংজ্ঞায়িত করেছে গবেষণা দলটি। আর এভাবেই বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে চুমুর আচরণকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তুলনা করেছে তারা।

এই সংজ্ঞা ব্যবহার করে প্রাইমেটদের আচরণ বর্ণনা করা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে গবেষণা দলটি এবং কোন কোন প্রজাতির মধ্যে চুমুর আচরণ দেখা গিয়েছে সেটিও গবেষকরা নথিভুক্ত করেছেন।

এরপর ‘ফাইলোজেনেটিক’ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে চুমুর আচরণকে প্রাইমেট পরিবারের সদস্য বা বংশগতির ওপর বসিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, প্রাচীন পূর্বপুরুষদের মধ্যেও চুমুর প্রচলন ছিল কিনা। এজন্য ‘বেইসিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেলিং’ ব্যবহারের পাশাপাশি গবেষণার ফলাফলে আস্থা বাড়াতে এক কোটি বার বিশ্লেষণ চালিয়েছে গবেষণা দলটি।

গবেষণাটি চুমুর মতো এমন এক আচরণের বিরল ধারণা দিয়েছে, যা কোনো জীবাশ্মে লেখা থাকে না। গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট ওয়েস্ট বলেছেন, আচরণগত তথ্যকে বিবর্তনীয় মডেলিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন প্রজাতির সামাজিক আচরণ অনুমান করতে পারেন। তবে সেইসব আচরণও সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না।

গবেষণায় চুমুর গোড়া তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমানে মানুষের মধ্যে বিষয়টি সর্বত্র নেই বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। কেবল ৪৬ শতাংশ নথিভুক্ত সংস্কৃতিতে বা সমাজে দেখা মিলেছে চুমুর এবং প্রত্যেক সমাজে এর আলাদা আলাদা মানে। চুমু কতটা বংশগত জীববিজ্ঞানের অংশ ও কতটা সংস্কৃতিগত উদ্ভাবন– তা নিয়েও গবেষণায় প্রশ্ন উঠেছে। আপাতত গবেষণার ফলাফল বলছে, চুমু কেবল ভালোবাসা বা রোমান্টিক অনুভূতির বিষয় নয়, বরং এমন আচরণ, যা কয়েক লাখ বছর ধরে মানুষের বিবর্তনের অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এ আচরণ এপ ও বহু বছর আগে বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

সানা/আপ্র/২১/১১/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

গবেষণায় জানা গেল চুমুর ইতিহাস কোটি বছর পুরানো

আপডেট সময় : ০৯:১০:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: চুমুর ইতিহাস মানুষের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি প্রাচীন বলে উঠে এসেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নতুন এক গবেষণায়। গবেষণার অনুসারে, প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ বছর আগে মানুষ ও এপ বা বানরের সাধারণ পূর্বপুরুষদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছে চুমু। এমনকি মানুষের বিলুপ্ত আত্মীয় নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও চুমুর প্রচলন ছিল।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেইভিয়ার’-এ। গবেষণায় প্রথমবারের মতো ধারণা মিলেছে, চুমুর ইতিহাস খুবই পুরানো এবং চুমু কেবল সামাজিক অভ্যাস নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভূত এক আচরণ।

অনেক প্রজাতির মধ্যে চুমু দেখা গেলেও বিষয়টি অদ্ভুত এক জৈবিক ধাঁধা। কারণ চুমুর মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে এবং সরাসরি বেঁচে থাকতে বা সন্তানধারণে কোনো সুবিধা দেয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবে বিবেচনা করলে চুমু ‘দরকারি আচরণ নয়’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। চুমু সরাসরি বেঁচে থাকার বা প্রজননের সুবিধা না দিলেও অনেক সমাজে এটি আবেগ, ভালোবাসা ও সামাজিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর আগ পর্যন্ত গবেষকরা সত্যিই গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণ করেননি চুমু কীভাবে ও কখন শুরু হয়।
প্রাইমেট বা প্রধান বানরের মধ্যে চুমুর বিবর্তনীয় ইতিহাস গবেষণা করতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে অক্সফোর্ডের গবেষণা দলটি। তাদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, চুমু কোনো আধুনিক আবিষ্কার নয়, বরং এটি প্রাচীন এক আচরণ, যা মানুষ ছাড়াও এপদের মধ্যে দেখা গিয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এ আচরণ প্রায় সাড়ে দুই কোটি ১৫ লাখ থেকে এক কোটি ৬৯ লাখ বছর আগে উদ্ভূত এবং তখন থেকেই প্রাইমেটদের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে চলে এসেছে। আজও শিম্পাঞ্জি, বোনোবো ও ওরাংওটাংদের মধ্যে চুমুর দেখা মেলে।

গার্ডিয়ান লিখেছে, এ গবেষণায় জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে, মানুষের প্রাচীন আত্মীয় নিয়ান্ডারথালরাও চুমু খেতেন। তবে এটিই প্রথমবার নয়। আগের কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। তাদের মুখের একই ধরনের জীবাণু থেকে ইঙ্গিত মেলে, দুই আলাদা প্রজাতি হয়ে যাওয়ার পরেও মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মুখের লালা বিনিময়, অর্থাৎ চুম্বন হয়েছিল। নতুন বিবর্তনীয় বিশ্লেষণের সঙ্গে এসব প্রমাণ মিলিয়ে গবেষকরা বলছেন, চুমু মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের স্বাভাবিক একটি অংশ ছিল।

গবেষণার জন্য প্রথমে চুমুর একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা তৈরি করতে হয়েছিল গবেষকদের। বিষয়টি যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ ছিল না। কারণ প্রাণীরা প্রায়ই মুখের মাধ্যমে এমন আচরণ করে, যা চুমুর মতো দেখায়। তবে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে, যেমন– খাবার ভাগ করা বা আক্রমণের উদ্দেশ্যে।

চুমু হবে কোমল, আক্রমণাত্মক নয় এমন মুখ-মুখে স্পর্শ, যেখানে কোনো খাবার বিনিময় হয় না– এভাবেই চুমুকে সংজ্ঞায়িত করেছে গবেষণা দলটি। আর এভাবেই বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে চুমুর আচরণকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তুলনা করেছে তারা।

এই সংজ্ঞা ব্যবহার করে প্রাইমেটদের আচরণ বর্ণনা করা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে গবেষণা দলটি এবং কোন কোন প্রজাতির মধ্যে চুমুর আচরণ দেখা গিয়েছে সেটিও গবেষকরা নথিভুক্ত করেছেন।

এরপর ‘ফাইলোজেনেটিক’ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে চুমুর আচরণকে প্রাইমেট পরিবারের সদস্য বা বংশগতির ওপর বসিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, প্রাচীন পূর্বপুরুষদের মধ্যেও চুমুর প্রচলন ছিল কিনা। এজন্য ‘বেইসিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেলিং’ ব্যবহারের পাশাপাশি গবেষণার ফলাফলে আস্থা বাড়াতে এক কোটি বার বিশ্লেষণ চালিয়েছে গবেষণা দলটি।

গবেষণাটি চুমুর মতো এমন এক আচরণের বিরল ধারণা দিয়েছে, যা কোনো জীবাশ্মে লেখা থাকে না। গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট ওয়েস্ট বলেছেন, আচরণগত তথ্যকে বিবর্তনীয় মডেলিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন প্রজাতির সামাজিক আচরণ অনুমান করতে পারেন। তবে সেইসব আচরণও সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না।

গবেষণায় চুমুর গোড়া তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমানে মানুষের মধ্যে বিষয়টি সর্বত্র নেই বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। কেবল ৪৬ শতাংশ নথিভুক্ত সংস্কৃতিতে বা সমাজে দেখা মিলেছে চুমুর এবং প্রত্যেক সমাজে এর আলাদা আলাদা মানে। চুমু কতটা বংশগত জীববিজ্ঞানের অংশ ও কতটা সংস্কৃতিগত উদ্ভাবন– তা নিয়েও গবেষণায় প্রশ্ন উঠেছে। আপাতত গবেষণার ফলাফল বলছে, চুমু কেবল ভালোবাসা বা রোমান্টিক অনুভূতির বিষয় নয়, বরং এমন আচরণ, যা কয়েক লাখ বছর ধরে মানুষের বিবর্তনের অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এ আচরণ এপ ও বহু বছর আগে বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

সানা/আপ্র/২১/১১/২০২৫